দুই মাস ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না  কুবি শিক্ষার্থী হত্যা মামলার আসামী মাজেদকে

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৬ মাস আগে

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিগত আমলে নিয়োগ পাওয়া অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীই পলাতক রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের সেকশন অফিসার রেজাউল ইসলাম মাজেদ। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ। এ ছাড়া কুবি শিক্ষার্থী খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলার আসামি ছিলেন তিনি।

রেজিস্ট্রার দপ্তরের তথ্যমতে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে সর্বশেষ গত ১৬ জুলাই অফিস করেছিলেন তিনি। এর পর থেকে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায়নি তাঁকে। এমনকি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগও নেই তাঁর। বন্ধ রয়েছে ফোন।
দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন বলে গত ১৩ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পুলিশের তৎপরতায় তিনি দেশ ছেড়ে পালাতে পারেননি বলে জানা গেছে।
সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী, বিনা অনুমতিতে ৬০ দিন বা তদূর্ধ্ব সময় কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকলে ওই কর্মচারী পলায়ন বলে গণ্য হবেন। এ ছাড়া পলায়নের দায়ে দোষী হলে তাঁকে তিরস্কার থেকে শুরু করে বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা বরখাস্ত করতে পারেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। এ অবস্থায় পালানোর দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে চাকরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে মাজেদের।
মাজেদের চাকরির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘গত দুই মাসে তাঁর (মাজেদ) পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। ছুটিও নেওয়া হয়নি। তাই নিয়ম অনুযায়ী আমরা ফাইল ফরোয়ার্ড করব। আইনে যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা আছে, সে অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মাজেদ এক সময় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৫ মে সেকশন অফিসার পদে রেজাউল ইসলাম মাজেদসহ কয়েকজনের মৌখিক পরীক্ষা নেয় নিয়োগ বোর্ড। সভায় একক কোনো প্রার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় তিনজনকে নিয়ে প্যানেল তৈরি করে বিষয়টি সিন্ডিকেটে যাওয়ার সুপারিশ করা হয়। তবে ৪ অক্টোবর নিয়োগ বোর্ডের সভা বিবরণীতে স্বাক্ষরের জন্য বোর্ড সদস্য উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবিরকে পাঠালে তিনি শুধু একজনের সুপারিশ দেখতে পেয়ে সেখানে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নেন। এর পর বিষয়টি সিন্ডিকেটে নেওয়া হলে সেখানেও তিনি আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) জানান। এত কিছুর পরও তাঁকেই নিয়োগ দেন তৎকালীন আওয়ামীপন্থি উপাচার্য আবদুল মঈন।
এ ছাড়া ছাত্রনেতা থাকা অবস্থায় ভিন্নমত দমনের নামে প্রায়ই বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করতেন রেজাউল ইসলাম মাজেদ। পান থেকে চুন খসলেই পেটাতেন নিজ দলের নেতাকর্মীকেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদককাণ্ডের নেতৃত্বেও ছিলেন তিনি। তাঁর নির্যাতনের কারণে অনেক শিক্ষার্থীকেই হল ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। বাদ দিতে হয়েছে পড়াশোনা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কাজে নিয়মিত হস্তক্ষেপ, শিক্ষকদের নিয়ে কটূক্তি, উপাচার্যের গাড়ি আটকে অনৈতিক দাবি আদায়সহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
সবচেয়ে বড় অভিযোগ, ২০১৬ সালের ১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্বালনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মার্কেটিং বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী খালেদ সাইফুল্লাহ। এই ঘটনায় অন্যতম আসামি করা হয় মাজেদকে। হত্যা মামলায় ৫৬ দিন কারাবরণ করে জামিনে মুক্তি পান।
এ ঘটনার ৮ বছর পার হলেও শেষ হয়নি বিচার। চারবার পরিবর্তন হয় তদন্ত সংস্থার। মামলার আসামি আওয়ামীপন্থি হওয়ায় বিচার হয়নি, বলছেন খালেদ সাইফুল্লাহর মা ফাতেমা আক্তার। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘মাজেদ আমার ছেলের খুনের মামলার চার্জশিটের ৩ নম্বর আসামি হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর চাকরি হওয়া এবং এখনও তাতে বহাল থাকা আমার মতো মায়েদের জন্য অপমান। আমি চাই এই খুনের বিচার দ্রুত হোক এবং মাজেদসহ অন্যান্য আসামিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হোক।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, নিয়ম অনুযায়ী সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রেজিস্ট্রার
দপ্তর থেকে যখন জানানো হবে, একজন কর্মকর্তা আইনের বাইরে আছেন কিংবা আইন
অনুযায়ী কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন, তখন তাঁর বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।