দেবিদ্বারে হতভাগ্য এক পিতার আত্মহত্যা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

নব বিবাহিতা কণ্যাকে তার শ^শুর বাড়ির লোকদের হাতে আর তুলে দেয়া হলনা হতভাগ্য দিনমজুর পিতা গিয়াস উদ্দিনের। পারিবারিক কলহের জের ধরে নিজ স্ত্রী, কণ্যা, পুত্রের শারিরীক ও মানষিক নির্যাতনে ক্ষোভে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।
ঘটনাটি ঘটে বুধবার দিবাগত রাতে দেবিদ্বার উপজেলার ইউছুফপুর ইউনিয়নের ইউছুফপুর গ্রামের মিলন মুহুরীর বাড়িতে। নিহত গিয়াস উদ্দিন বিলাত হোসেন এর পুত্র।

নিহতের ছোট ভাই কাইয়ুম মিয়ার স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার জানান, গত শুক্রবার তার ভাসুর গিয়াস উদ্দিনের ছোট মেয়ে রিয়া মনির সাথে মুরাদনগর উপজেলার দিঘীরপার গ্রামের সৌদী প্রবাসী ইকবাল হোসেন এর সাথে মোবইল ফোনে বিয়ে হয়। বৃহস্পতিবার(২৫ আগস্ট) রিয়া মনিকে তুলে নিতে তার শ^শুর বাড়ির ৪ জন অতিথি আসার কথা ছিল। বুধবার বিকেলে অতিথিদের আপ্যায়নে বাজার সদাই কিভাবে করবে তা নিয়ে স্ত্রী রীনা বেগম ও বড় মেয়ে লিমা আক্তারের সাথে পরামর্শ করছিলেন
গিয়াস উদ্দিন।
আলাপচারিতার এক পর্যায়ে সংসারের অভাব অনটন আর গিয়াস উদ্দিনের কর্ম অক্ষমতার প্রসঙ্গ চলে আসে। গিয়াস বলেন, আমি অসুস্থ মানুষ। তার পরও কাজে যাই কিন্তু কেউ কাজে নেয়না। কাজ না পেলে আমি কি করব। এসময় তার স্ত্রী ও বড় মেয়ে লিমা আক্তার তাকে টানা হেচড়া করে মারধর করতে থাকে। তারা গায়ের পাঞ্জাবীটা ছিঁড়ে ফেলে। পিতা গিয়াস উদ্দিন তার মেয়ে লিমাকে এ আচরনের জন্য অভিশাপ দিলে, লিমা তার বাবাকে সজোরে লাথি মেরে ঘর থেকে বাহিরে ফেলে দেয়। এক মাত্র পুত্র মোঃ রাব্বী মিয়া (২৫) সন্ধ্যার পর বাড়ি আসলে তার কাছে স্ত্রী- কণ্যার মারধরের বিচার চান। পুত্র রাব্বী উল্টো বাবাকে তিরস্কার করেন। স্ত্রী পুত্র কণ্যার শারিরীক ও মানষিক নির্যাতনে রাগে ক্ষোভে তিনি রাতে পাশের ঘরের আড়ায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয়রা তাকে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় দেখেন। পুলিশকে খবর দিলে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান এক দল পুলিশ নিয়ে লাশের সুরতহাল তৈরী করে ময়নাতদন্তের জন্য থানায় নিয়ে আসেন। নিহতের চাচাতো ভাই মিলন মুহুরী(৬০), প্রতিবেশী শাহ আলম(৬২) ও বাচ্চু মিয়া (৭০) বলেন, মৃত: গিয়াস উদ্দিন একজন সরল সহজ লোক ছিলেন। তিন কণ্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। তার স্ত্রী রীনা বেগম প্রায় ১৫ বছর লিবিয়া প্রবাসী ছিলেন, তার একমাত্র পুত্র রাব্বীও ৫ বছর লিবিয়া প্রবাস জীবন কাটিয়ে গত রমজান মাসে মা’ ছেলে দেশে ফিরেন। অভাব অনটনের সংসার। থাকার ভিটে জমি ছাড়া আর কিছুই নেই। মা ছেলে প্রবাস জীবন কাটালেও তাদের বিদেশ পাঠানো ঋণের টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারেনি। এরই মধ্যে ৩ মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেকে বিয়ে করালেও তার স্ত্রী এখনো ঘরে তোলা হয়নি। গিয়াস উদ্দিন পেশায় দিনমজুর। এখন কাজ নেই তাই উপার্জন করতে পারছেনা। অভাবের সংসার। স্ত্রী, কণ্যা, পুত্র এক জোট হয়ে তাদের পরিবারের কর্তাকে প্রায়ই মারধর ও মানষিক যন্ত্রনায় রাখত।
এ ব্যাপরে দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারনা হচ্ছে। ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যার সময় বাঁচার চেষ্টায় ছটফট করাকালে টিনের সাথে ২ পা লেগে কেটে গিয়ে কিছু ব্লিডিং হয়। আমরা একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেছি। ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসার পরই আসল সত্যটা বলা যাবে।