বিভীষিকাময় সেই ভয়াল কালোরাত এবং সেদিন যেভাবে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছিলাম – মনির আহমেদ

একজন নির্যাতিত রাজনৈতিক ও গণমাধ্যম কর্মীর আত্মকথা
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ সপ্তাহ আগে

২২ আগষ্ট-২০২২ থেকে সারাদেশের ইউনিয়ন/ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপি’র কেন্দ্রঘোষিত পদযাত্রার কর্মসূচী চলছিল..ব্যাপক আলোচিত এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আগষ্টের শুরু থেকেই লাকসাম পৌর শহর সহ লাকসাম উপজেলার সর্বত্র বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর, তাদের বাড়ীঘর, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, লুটপাট সহ নানান কায়দায় নির্যাতন নীপিড়ন শুরু করে লাকসামের আওয়ামী সন্ত্রাসীরা..হেলমেট পরিহিত অস্ত্রধারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিভৎস নারকীয় এসব তান্ডব নিয়ে “দৈনিক দিনকাল” পত্রিকায় আমার প্রেরিত সুনির্দিষ্ট তথ্য নির্ভর কয়েকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

যেকোন সহিংস ঘটনার রিপোর্ট তৈরীর ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী সাংবাদিক বা সংবাদকর্মীকে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্য নিতে হয়..ওই সময়ে আওয়ামীলীগ কর্তৃক লাকসামে সংঘটিত প্রতিটি সহিংস ঘটনার পর এ বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন অবগত কিনা..এসব সহিংস ঘটনা নিয়ে তারা কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন বা এসব সহিংসতার বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ নিয়ে আসছেন কিনা..? এসব জানতে আমাকে লাকসাম থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে প্রায় প্রতিদিনই কথা বলতে হতো। ফোন করলেই “ওসি লাকসাম” বিরক্তবোধ করে বলতেন, “লাকসামে কি আপনিই সাংবাদিক? আর কেউতো এসব নিয়ে মাথা ঘামায়না..! আপনার এত চুলকানি কেন? এই ওসি যত দিন লাকসামে ছিলেন, ঠিক ততদিনই নিউজ সংক্রান্ত তাকে ফোন করলে তিনি খারাপ আচরণ করতেন এবং গালাগালি করতেন।

লাকসামে চলমান এমন উদ্ভট পরিস্থিতিতে ২৬ আগষ্ট-২০২২ (শুক্রবার) দুপুরের পর ব্যাক্তিগত কাজে আমি ঢাকায় যাই। ঢাকার যাওয়ার পর লাকসাম থেকে আমার মোবাইল ফোনে একজন রাজনৈতিক সহকর্মী ফোন দিয়ে আমাকে জানায়..আজগরা ইউনিয়ন এর কৃষ্ণপুরে ঢাকা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ওই ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদককে কুপিয়ে মারাত্বক জখম করেছে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। আহত শ্রমিকদল নেতার মাথায় ধারালো অস্ত্রে কোপানো জখমের কয়েকটি ছবিও আমাকে পাঠানো হয়। পরে আমি নিউজটি “দিনকাল”এ পাঠালে দিনকালের অনলাইন ভার্সনে এ প্রকাশিত হয়।প

ব্যাক্তিগত কাজ শেষে আমি ২৭ আগষ্ট (শনিবার) ২০২২ রাতে ট্রেনে করে লাকসাম আসি। ট্রেনে আসার কারণ হলো, ঐ দিন দিনকালে নিউজ করার কারণে আ’লীগ ও পুলিশ আমার উপর ক্ষেপে আছে। বাসে আসলে যদি কেউ চিনে আমাকে ধরে ফেলে এই ভয়ে।

ওইদিন “মহানগর এক্সপ্রেস” রাত আনুমানিক ৩টায় লাকসাম জংশনে এসে পৌছায়। জংশন থেকে আমার বাড়ীর দুরত্ব আধা কিলোমিটারের চেয়েও কম। ট্রেন থেকে নেমে আমি ৫/৭ মিনিট লাকসাম জংশন এর প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে এলাকার বা পরিচিত রিকসা ড্রাইভার খুঁজছিলাম। এমন কাউকে না পেয়ে অপরিচিত একটি রিকসাযোগে বাড়িতে রওয়ানা হই। রিকসায় উঠার আগে ড্রাইভারকে জিজ্ঞাস করলাম তার বাড়ি কোথায় ? জবাবে সে বলল নরপাটি।

আমি যখন রিকসাযোগে আমার গ্রাম লাকসাম রেল জংশনের পার্শবর্তী নশরতপুর দক্ষিন পাড়ার দিকে যাই, ঠিক তখনই দুটি মোটরসাইকেলে হেলমেট পরিহত ৫ জন আমার রিকসার পিছু নেয়। তবে ওরা আমাকেই ফলো করছে এটা আমি ধারনাই করিনি। এক পর্যায়ে তারা জংশন বাজারের কলোনি মসজিদ রোডে ঢুকে পড়ে । আমি তখন আরও নিশ্চিত হই যে ওরা আমাকে ফলো করছে না। আমাকে বহনকারী রিকসা যখন মেইনরোড দিয়ে আমার গ্রাম নশরতপুরের মাঝামাঝি আসে, (খান্দানী মার্কেট লিংক রোড..সাবেক শিক্ষক সমিতির অফিসের কাছে, তখনো কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল) । ঠিক তখন ওই দুই মোটরসাইকেল দ্রুতগতিতে এসে আমার রিকসার গতিরোধ করে। এ সময় ওই রাস্তার পাশে কালো রং এবং কালো গ্লাসের একটি মাইক্রোবাস কুমিল্লামুখি দাঁড়ানো ছিল।

মোটরসাইকেল আরোহীরা আমার রিকসা থামানোর সাথে সাথে ওই মাইক্রোবাস থেকে হেলমেট পরা দু’জন লোক নেমে আসে। মোটরসাইকেল চালক দু’জন ছাড়া বাকী ৩ জন মাইক্রোবাস থেকে নেমে আসা দু’জনের সাথে যোগ হয়ে আমাকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। এমন ঘটনা দেখে এ সময় ওইরাস্তা দিয়ে উত্তর দিকে যাওয়া একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা থামতে চাইলে সিএনজি ড্রাইভারকে ধমক দেয় হেলমেট পরিহিত মোটরসাইকেল আরোহীরা । সিএনজি ড্রাইভার তখন তার গাড়ীর গতি বাড়িয়ে দ্রুত চলে যায়। এ অবস্থা দেখে আমাকে বহনকারী রিকসার ড্রাইভারও তার রিকসা নিয়ে দ্রুত ওইস্থান ত্যাগ করে ভাড়া না নিয়ে।

আমাকে মাইক্রোবাসে তোলার পর দেখি সেখানে আরও ৪ জন হেলমেট পরা লোক বসা। তাদের একজন আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ধরে। দুজনের হাতে চাপাতি ছিল। কিছুটা আলো আঁধারের কালোগ্লাসের মাইক্রোবাসটির সামনের সিটেও হেলমেট পরে একজনকে বসে থাকতে দেখা যায় । আমাকে তুলেই মাইক্রোবাসটির ভিতরে মাঝখানের সিটে বসে থাকা হেলমেট পরা দু’জনের মাঝখানে বসায়। বসানোর সাথে সাথে তারা আমাকে এলোপাতারী মারধর ও গালিগালাজ শুরু করে..!

মাঝখানের সিটের পিছনের সিটে বসে থাকা হেলমেট পরিহিত ব্যাক্তিরা পাইপের মত কিছু একটা বস্তু তখন মাঝখানে আমার দুইপাশে বসা দু’জনকে দেয় ।তারা পাইপটি আমার ঘাড়ের উপর উঠিয়ে পাইপের দুই মাথায় চাপ দিয়ে আমার মাথা নীচের দিকে ধাবিত করে রাখে। প্রচন্ড শক্তি দিয়ে পাইপের দুই মাথায় তারা দু’জন পা দিয়ে বসে থাকে। যার ফলে আমি আর কোন অবস্থাতেই মাথা উপরে তুলতে পারছি না। মাথা উপরে উঠানোর জন্য একটু চেষ্টা করলেই আমার পিছনে এবং সামনে বসা হেলমেট পরা ব্যাক্তিরা আমার ঘাড় এবং পিঠে প্রচন্ড শক্তি দিয়ে আঘাত করে । তাদের বেধরক মাইরে মনে হচ্ছিল এই বুঝি আমি শেষ।

মাইক্রোবাসে তোলার সাথে সাথেই তারা প্রথমে আমার মোবাইল ফোনটি নিয়ে নেয়। আমার মাথা এভাবে পাইপ চাপা দিয়ে নীচু করে হাঁটুর সাথে মিলিয়ে রাখা অবস্থায় তারা আমার কাছে সর্বপ্রথম আমার মোবাইল ফোন খোলার পাসওয়ার্ড জানতে চায়। তখন আমি বললাম এটা ফিঙ্গার দিয়ে খুলতে হয়।

আমার দু’পাশে পাইপের দুই মাথায় পা দিয়ে বসে থাকা দু’জন হালকা ভাবে তখন পাইপ থেকে তাদের পা সরিয়ে নেয়। এরপর আমার হাত টেনে নিয়ে আমার মোবাইলটি আনলক করে ফেলে। মোবাইলের বিভিন্ন যোগাযোগ এ্যাপস ঘাঁটাঘাঁটি করে তারা সকলেই একের পর এক আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা শুরু করে। তাদের উল্লেখ করার মত প্রশ্নগুলো ছিল..“আমি কেন লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফোন দেই..? লাকসামে কি আমি ছাড়া আর কোন সাংবাদিক নেই..? আমি কেন বিএনপি করি..? আমি কেন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সরকার বিরোধী নিউজ ফেসবুকে শেয়ার করি..? বিএনপিকে নিয়ে লেখালেখি করি কেন..? কে কাকে মারবে এসব নিয়ে আমার এত মাথাব্যথা কেন , ইত্যাদি। এক দিকে গাড়ি চলছে, প্রশ্ন করছে আর অপর দিকে আমাকে এলোপাতারী ভাবে মেরেই চলছে।

একপর্যায়ে তাদের নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। প্রচন্ড গরমের মধ্যেও তারা আমার শরীরে সম্ভবত ব্যাটারী চালিত হিটার মেশিন দিয়ে হিট দিতে শুরু করে..! তখন আমি অনেকটাই আতঙ্কিত, দিশেহারা এবং বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। এমনিতেই আমি শারিরীকভাবে পুরোপুরী সুস্থ নই। তার উপর তারা আমার মাথায় ছোট হাতুরী দিয়ে আস্তে আস্তে আঘাত করে..! কৌশলী এই হাতুরীর আঘাতে আমি মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা পেলেও রক্ত বের হয় না।

এবার তারা আমার মাথার চুলগুলো কুচিকুচি করে কেটে আমার শরীরের বিভিন্ন অংশ..বিশেষ করে পিঠ, ঘাঁড়, মুখ, গলা, বুক ও পেটে মেখে দেয়া শুরু করে। প্রচন্ড গরমের মধ্যে কুচিকুচি করা চুলের ফোঁড়ানির পাশাপাশী অব্যাহত মারধরে আমার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। এসময় হঠাৎ আমার শ্বাসকষ্টও বেড়ে যায়..! চিৎকার বা নড়াচড়ার চেষ্টা করলেই তারা আমার মুখ চেপে ধরে..কিল ঘুষির মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়..! তাদের এমন পৈশাচিক নির্যাতন দেখে আমি তখন অনেকটাই নিশ্চিত হই যে, তারা আমাকে আজ মেরেই ফেলবে..গাড়ী কোন দিকে বা কোথায় যাচ্ছে পাইপ চাপা দিয়ে মাথা নীচু করে রাখায় আমি তখন কিছুই বুঝতে পারছি না। কিছু না দেখলেও আমি তাদের কথায় বার্তায় অনুভব করছি যে, তারা হয়ত আমাকে “গুম” করবে অথবা “গুপ্তহত্যা” করে আমার লাশ রাস্তার পাশে বা কোন ডোবা নালায় ফেলে দিবে।

তাদের নিয়ন্ত্রনে থাকা আমার মোবাইলে চার্জ কম থাকায় মোবাইলটি এ সময় বন্ধ হয়ে যায়। তখন তারা আমার ব্যাগ থেকে চার্জার বের করে নেয়। তারা আমার মানিব্যাগ থেকে আমার “দিনকাল”এর আইডি কার্ড নিয়ে লাইটার দিয়ে আগুনে পুড়ে বাহিরে ফেলে দেয়..!

পাইপ চাপায় মাথা নীচু অবস্থায় থাকায় কিছু না দেখলেও আমি অনুভব করেছি এমন কিছুই ঘটছে..! ওই মুহুর্তে আমি অনেকটা মরন যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছি..! আর ভাবছি আজই হয়ত আমার জীবনের শেষরাত। গাড়ীর অবস্থান তখন কোথায় কিছুই বুঝতে পারছি না। একপর্যায়ে তারা আমাকে প্রশ্ন করে, এখন বাঁচবি নাকি মরবি..? “বাঁচতে চাইলে তোকে নিয়ে এক রাস্তায় যাবো..আর মরতে চাইলে তোর রাস্তা হবে ভিন্ন। আমি তখন ভয় পেয়ে গেলাম। আর কেঁদে কেঁদে বললাম, “আমি বাঁচতে চাই। আমার ছেলে মেয়ের জন্য হলেও আমাকে বাঁচতে দিন। আমাকে মেরে ফেললে ওদের দেখার মত কেউ নেই। বলুন, বাঁচতে হলে আমাকে কি করতে হবে ?

তখন তারা বলে “তোকে প্রথম বারের মত শর্তসাপেক্ষে বাঁচার সুযোগ দিবো..! তোর পরিনতি আমরা চাইলে তোদের বাপ “হিরু-হুমায়ুন” এর মত করতে পারি..তোকে ছেড়ে দিলাম, তবে তুই লাকসাম থাকতে পারবি না। রাজনীতি আর সাংবাদিকতা ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে অটোরিকসা চালিয়ে বউ বাচ্চার জন্য টাকা পাঠাবি। আর আজকের এই ঘটনা কাউকে বলতে পারবি না। বললে তোকে তোর পরিবারের সকলকে নিয়ে মরতে হবে।

এসময় তারা কেউ কেউ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, লাকসাম-মনোহরগঞ্জ’র সাবেক এমপি কর্ণেল (অব.) এম. আনোয়ারুল আজীম এবং বিএনপি’র কেন্দ্রীয় শিল্প-বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম সাহেবের নাম ধরে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করছে।

একপর্যায়ে তারা আমাকে নামিয়ে দেয়। গাড়ী থেকে নামার পর দেখি আমি তখন কুমিল্লা রেইসকোর্স এলাকার নিসা টাওয়ারের সামনে ফ্লাইওভারের উপর। নামানোর আগে তারা আমার চোখে মলম জাতীয় কিছু একটা লাগিয়ে দেয়। যার ফলে ওই মুহুর্তে আমার চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে থাকে। স্পষ্টভাবে আমি তখন কিছুই দেখতে পারছি না। আমাকে নামিয়ে অতি দ্রুতগতিতে মাইক্রোবাসটি এবং পিছনে থাকা ওই দুই মোটরসাইকেলসহ ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে শাসনগাছার দিকে চলে যায়।

ফ্লাইওভারে দাঁড়িয়ে ব্যাগ থেকে গামছা বের করে আমি আমার চোখ মুখ পরিস্কার করি। তারপর ফ্লাইওভার থেকে নেমে পার্শবর্তী কুমিল্লা শাসনগাছা বাস টার্মিনালের দিকে চলে যাই। তখন ভোর আনুমানিক সাড়ে ৪টা থেকে ৫টা হবে। চারদিকের মসজিদগুলোতে ফজরের নামাজের আজান হচ্ছে। শরীরের বিভিন্ন অংশ..বিশেষ করে ঘাঁড়, পা এবং হাঁটুতে প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে ঠিকভাবে তখন আমি হাঁটতেও পারছি না।

শাসনগাছা বাস টার্মিনালে “এশিয়া পরিবহন” বাসযাত্রীদের ওয়েটিং রুমের বাথরুমে ঢুকে গামছা পড়ে শরীরে মেখে দেয়া কুচিকুচি করা চুলগুলো হালকাভাবে পরিস্কার করি। প্রচন্ড গরমের পাশাপাশি চুলের ফোঁড়ানিতে তখন খুবই কষ্ট পাচ্ছিলাম..! বাথরুম থেকে বেরহয়ে একজন বাস ড্রাইভারের ফোন নিয়ে বিষয়টি প্রথমে বাড়ীতে আমার পরিবারকে অবহিত করি। তাদেরকে বলি, “আমার একটি বিপদ হয়েছে। তবে আপাতত নিরাপদে আছি। আমি কুমিল্লা শাসনগাছা থেকে আবারও ঢাকায় যাচ্ছি। কোন টেনশন করবে না । আমার জন্য কিছু টাকার ব্যবস্থা করো। আমি ঢাকায় গিয়ে বিকাশ নাম্বার দেবো। আর আল্লাহর কাছে আমার জন্য সাহায্য কামনা করো।

অস্ত্রধারী ওই সন্ত্রাসী বাহিনী গাড়ীতেই আমার পকেটে থাকা সব টাকা আনুমানিক ১৭/১৮ হাজার টাকা এবং মোবাইলটি নিয়ে যায়। তবে আমার গায়ে থাকা ফতুয়ার বুক পকেটে ৩১০ টাকা ছিল, সেগুলো নেয় নাই। এই টাকা দিয়ে আমি শাসনগাছা থেকে ঢাকা চলে যাই। ঢাকায় পৌঁছে প্রথমেই একটি পাবলিক টয়লেটে ঢুকে ভালভাবে গোসল করি। এরপর তেজগাঁও এলাকার এক দোকানদারের বিকাশ এজেন্ট নাম্বারে বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে একটি বাটন মোবাইল ফোন ক্রয় করি এবং আমার ব্যবহৃত সিমগুলো রিপ্লেসমেন্ট করি।

২৮ আগষ্ট ২০২২ রবিবার দুপুর পর্যন্ত আমি ঢাকায় ছিলাম। পরবর্তীতে পরিবারের সকলের পরামর্শে ওইদিন রবিবার (২৮ আগষ্ট) সন্ধার কিছু সময় পর লাকসামে আমি আমার বাড়ীতে চলে আসি। এরপর থেকে আমি বাড়িতেই ছিলাম। বাড়ির বাহিরে কোথাও যেতাম না। ওইদিন অর্থাৎ ২৮ আগষ্ট রাতেই বিএনপির “কেন্দ্রীয় দপ্তর”এবং “দিনকাল” অফিসকে নারকীয় এই তান্ডবের বিষয়টি অবহিত করি। “দিনকাল” থেকে তখন আমাকে পরামর্শ দেয়া হয়..আমি যেহেতু বারবার নানানভাবে এ্যাটাক হচ্ছি সেহেতু আপাতত সহিংস ঘটনার কোন সংবাদ যেন প্রেরন না করি।

কৌশলে পরবর্তী পরিস্থিতি কি হয় সেটা দেখার জন্য ধৈয্যের সাথে বাড়িতেই অবস্থান করি। এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, “দৈনিক দিনকাল” এ সংবাদ প্রকাশের জেরে এর আগেও আমার উপর নানান কায়দায় নির্যাতন হয়েছে। আমাকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়েছে। এসব নিয়ে আমি একাধিকবার থানায় জিডিও করেছি। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়েছে।
এখানে একটি প্রশ্ন আসতে পারে, সেদিন আমি ট্রেনে ঢাকা থেকে আসছি এটা আমাকে তুলে নেয়া ব্যাক্তিরা কিভাবে জানলো..? এর জবাবে আমি অকপটে এটুকুই বলবো..“আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বা নাম্বারের উপর প্রযুক্তির ব্যবহার করে তারা আমার গতিবিধি পর্যবেক্ষন করে আমার অবস্থান নিশ্চিত করেছে। কারণ, আমাকে যারা তুলে নিয়েছে..আমার উপর তাদের করা পৈশাচিক নির্যাতনের ধরন এবং তাদের কথাবার্তায় আমি এটা নিশ্চিত হতে পেরেছি যে, তারা কেউ সাধারণ লোক নয়, তারা সরকারের কোন বিশেষ এজেন্সির লোক হবে।

বিভীষিকাময় সেই কালোরাতের কথা মনে হলে আজও আমি শিহরে উঠি। তবে আমি নির্মম এমন নির্যাতনের পরও দমে যাইনি। আমার কলম চলমান রয়েছে এবং মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত চলমান থাকবে ইনশাআল্লাহ । বর্তমান তত্বাবধায়ক সরকারে কাছে আমাদের আবেদন, আমার উপর ঘটে যাওয়া সেই দিনের ঘটনাটি তদন্ত করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন।

লেখক : যুগ্ম-আহ্বায়ক
লাকসাম পৌরসভা বিএনপি
ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জাসাস।
: লাকসাম।উপজেলা প্রতিনিধি
দৈনিক দিনকাল
সড়হরৎষধশংধসফরহশধষ@মসধরষ.পড়স