‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ইসলামী দলগুলোর প্রত্যাশা কি’ বিষয়ক টক শো অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার (১২ আগষ্ট) রাতে কুমিল্লা আল নূর হসপিটালের সৌজন্যে দৈনিক আমাদের কুমিল্লা ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল কুমিল্লার জমিনের যৌথ উদ্যোগে এ টক শো অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক, সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক শাহাজাদা এমরানের সঞ্চালনায় ১৩৪ তম পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কুমিল্লা উত্তর জেলার সেক্রেটারি মাওলানা নূর হোসাইন ও খেলাফত মজলিস কুমিল্লা মহানগর এর সভাপতি মাওলানা সৈয়দ আব্দুল কাদের জামাল।
এ সময় টকশোতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ইসলামী দলগুলোর বিভিন্ন ধরনের প্রত্যাশাসহ সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উঠে এসেছে।
আলোচনার এক পর্যায়ে মাওলানা নূর হোসাইন বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আওয়ামী সরকার বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরের দূর্নীতির আখড়া বানিয়ে রেখেছিলো সেটার বহিঃপ্রকাশ আমাদের জনগণ দেখিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ তা’য়ালা ই এই স্বৈরাচারের পতন করেছেন। আমরা এই স্বৈরশাসক থেকে আমাদেরকে শিক্ষা নিতে হবে, তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে যারা এই স্বৈরশাসকের ভূমিকায় আসবে তাদেরকেও জনগণ তাদের অবস্থান দেখিয়ে দিবে। এই দেশে ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম, তাই সবাই চায় দেশের শাসনব্যবস্থায় যেন ইসলামী বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়। শেখ হাসিনা সরকার আমাদের এমন কোনো জায়গা নেই যে, আমাদের অধিকার হরণ করে নি। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কাছে অবশ্যই ইসলামী দলগুলোর কিছু প্রত্যাশা থাকবে। আমরা চাই, এদেশের মানুষের সকল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার সেই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তাহলে মানুষ আর দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জিনা-ব্যাবিচার দেখবে না। এছাড়াও, হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার নিশ্চিত, সুষ্ঠ নির্বাচন কমিশন গঠন, শিক্ষা কমিশন গঠন করলেই মানুষ শান্তি পাবে। এই সরকার পতনে শিক্ষার্থীরদের পাশাপাশি ইসলামী দলগুলোও মাঠে ছিলো। তাদের অনেকেই জীবনও দিয়েছে যা মিডিয়ায় প্রকাশ পায় নি। অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর সাথে আমাদের আকীদাগত পার্থক্য থাকলেও, আমরা বাতিলের বিরুদ্ধে সবসময় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো। ইসলামী দলগুলো একত্রিত হওয়া সময়ের দাবি। যেভাবে স্বৈরাচার পতনে ইসলামী দলগুলো এক হয়ে কাজ করেছে, সেভাবেই আগামীতে দেশের ক্রান্তিলগ্নে যদি প্রয়োজন হয় আমাদেরকে আবার এক হতে হবে। ৯০ ভাগ মুসলিমের এই দেশে ইসলামী দলগুলো এক হতে পারলে আগামীতে তারা অবশ্যই ক্ষমতায় আসতে পারবে।
সৈয়দ আব্দুল কাদের জামাল বলেন, এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে মিথ্যা, অহংকার, দাম্ভিকতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের পতন হয়েছে। একটা বিষয়ের মধ্য দিয়েই আমাদের আওয়ামী দুঃশাসনের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারি, সেটা হচ্ছে আয়নাঘর। এমন অধিকার কোনো সংবিধান কাউকে দেয় নি। মানুষকে তারা যে কষ্টগুলো দিয়েছে, তার শাস্তিই তারা পেয়েছে। ২০১৩ সাল থেকেই সরকার পতনের এই আন্দোলন শুরু। সেদিন আমাদের ছাত্রদের রক্ত ঝরেছিলো। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন, শিক্ষার্থীদের মূল কাজ শিক্ষা, তাই দ্রুত তাদেরকে শিক্ষাঙ্গনে প্রেরণ করা হোক, পুলিশ বাহিনী কে অল্প সময়ের মধ্যে পুনর্গঠন করা, পুলিশদের মধ্যে যারা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ও দলের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে তাদের তালিকা করা ও রাষ্ট্রীয় ভাবে শহীদের মর্যাদা দেওয়া ও তাদেরকে রাষ্ট্রীয় সহায়তার ব্যবস্থা করা। এছাড়াও, আলেমদের বৈষম্য দূর করা। এই নিয়ে ৭৫ জন আলেম এই কোটা আন্দোলনকে ঘিরে শহীদ হয়েছে যা অনেকেই জানে না। এই অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে আমার দাবি, আলেম সমাজের প্রতি যে বৈষম্য করা হয়, তা থেকে আমরা উত্তোরণ চাই। আমাদের প্রত্যাশা আগামী নির্বাচনে আমরা ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো। তবে বিএনপির সাথে আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো না আর। আমি মনে করি, ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে আগামীতে ইসলামী দলগুলো ক্ষমতায় আসতে পারবে। জাতি এটাই চায়।
তাই আমি বলবো, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে জোট করে নির্বাচন করতে পারে, তাহলে জাতির আশা পূরণ হবে। এছাড়াও, অন্তর্র্বতীকালীন সরকার যেন ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন দেন, এটা প্রত্যাশা করি।