ভিডিওর এক অংশে সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যদি মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করেন আপনাদের ছেড়ে দেওয়া হবে না। এখানকার (ফতুল্লার) তেল চোর, মাঠ চোর, এমন ব্যক্তি একটি সংবাদপত্র কিনেছে নারায়ণগঞ্জে। সেটা পরিচালনা করছে। বাপ ডাকিয়ে দেব; কিন্তু তোমরা যারা কলম লিখ, মিথ্যা লিখ। তোমাদের ছাড়া (ছাড় দেওয়া) হবে না। শুধু সাংবাদিক বলে তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে চোখ রাঙাবে, কুৎসা রটনা করবে।’
ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ফতুল্লা প্রেস ক্লাব, সোজা হয়ে যাও। তোমাদের চিনি কারা কারা সেখানে আছ। সেখানে কারা কোন বাড়ির, কোন ফ্যামিলির, কার কতটুকু পড়াশোনা, কার কেমন আচরণ, সততা ও বুদ্ধিমত্তা সবকিছু আমরা জানি। ছেড়ে দেব না কিন্তু। আমি রাজনীতি করি, আন্দোলন সংগ্রাম করি তোমাদের ভয় পাই না।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকেলে ফতুল্লার এনায়েত নগর ইউনিয়নের ধর্মগঞ্জ চট্টলার মাঠে বিএনপির এক সমাবেশে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন এমন বক্তব্য দেন।
এই ঘটনায় গতকাল রোববার সন্ধ্যায় জরুরি সভা ডেকে ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের সাংবাদিক নেতারা এমন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। প্রয়োজনের আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মো. মাসুম বলেন, ‘জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিনের মুখে এ রকম বক্তব্য আশা করা যায় না। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি রীতিমতো একের পর এক মন্তব্য করে সাংবাদিকদের আক্রমণ করে যাচ্ছেন।’
ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আব্দুর রহিম কালবেলাকে বলেন, ‘গিয়াসউদ্দিন একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি সাংবাদিকদের তার প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে তিনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। আরও মামলা দেবেন বলে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে হুমকি দিয়ে আসছেন। বিএনপির কারও বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা নিউজ করলে তাদের মামলা দেবেন ও দেখে নেবেন বলে হুমকি দিচ্ছেন। এসব বক্তব্য দিয়ে তিনি গণমাধ্যমে কণ্ঠরোধ করতে চাইছেন। অতীতের মতো তিনি যদি সাংবাদিকদের ও নারায়ণগঞ্জে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন, তাহলে তিনি ভুলের মধ্যে আছেন। কারণ হুমকি-ধমকি দিয়ে গণমাধ্যমে কণ্ঠরোধ করা যায় না।’
বিষয়টি দুঃখজনক মন্তব্য করে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দিপু কালবেলাকে বলেন, ‘সাংবাদিকরা সবার সঙ্গে কাজ করবে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে এক দল ক্ষমতায় থাকবে, আরেক দল বিরোধী দলে থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। এতে সাংবাদিকের দোষ কোথায়।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনকে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।