কুমিল্লা নগরীর ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাহ আলমের বাড়িতে ৬ জন, দাউদকান্দিতে ১জন, চৌদ্দগ্রামে ১ জন, নগরীর ১০নং ওয়ার্ডে ১জন এবং তিতাসে গণপিটুনিতে ২ পুলিশ সদস্যসহ ১১জন নিহত হয়।
জানা যায়, কুমিল্লা নগরীর অশোকতলায় সাবেক কাউন্সিলর মো. শাহ আলমের তিনতলা বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতার আগুনে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে। সোমবার রাত ও গতকাল মঙ্গলবার সকালে বাড়িটি থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে পাঁচজনই কিশোর।
নিহতরা হলো নগরীর অশোকতলা এলাকার আশিক (১৪), শাকিল (১৪), শাওন (১২), মাহফুজুর রহমান (২২), রনি (১৬) ও মহিন (১৭)। মঙ্গলবার বিভিন্ন সময় জানাজা শেষে তাদের দাফন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার (৫ আগস্ট) আনুমানিক রাত ৮টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা অশোকতলায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ড্রের সাবেক কাউন্সিলর শাহ আলমের বাড়িতে হামলা চালায়। একপর্যায়ে কয়েকজন বাড়িটির তিনতলায় উঠে পড়েন। এ সময় অন্যরা বাড়িটির নিচতলায় আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে তিনতলায় অবস্থানকারীরা ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ এবং আগুনে পুড়ে নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত একজন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।
এদিকে সোমবার বিকেলে কুমিল্লা নগরীর তালপুকুরপাড় এলাকায় নাফিজুল আলম সামি (১৮) ও চৌদ্দগ্রামে জামশেদ (২০) নামের দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। ঘটনার সময় কুমিল্লা জেলা ক্রিকেট কমিটির সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম রনির বাসায় ছিলেন নাফিজুল আলম। রনি অভিযোগ করেন, সোমবার বিকেলে একদল ব্যক্তি তার বাসায় হামলা চালায়। এ সময় সামিকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে তারা। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা তাঁর বাড়িতেও লুটপাট করে।
কুমিল্লায় হামলা ও সংঘর্ষের পর সোমবার বিকেল থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭৫ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৩৫ জন মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ভর্তি ছিলেন। অন্যরা চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
জেলার সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান ও পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলামকে সেলফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
এদিকে,কুমিল্লার তিতাসে গণপিটুনিতে ২ পুলিশ ও দাউদকান্দিতে গুলিতে এক যুবক নিহত হয়। ৫ আগস্ট সোমবার গভীর রাতে তিতাস থানায় এ ঘটনা ঘটে। এদিকে দাউদকান্দি উপজেলার তুজারভাঙা গ্রামের বাসিন্দা বাবু মিয়া (২১) গুলিতে নিহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, স্থানীয় উৎসুক জনতা তিতাস থানা ঘেরাও করতে গেলে থানা পুলিশ আত্মরক্ষার্থে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এতে কমপক্ষে ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা থানায় পৌঁছে পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করেন। থানা পুলিশ সদস্যদের উদ্ধারের পর উৎসুক জনতা তিতাস থানা এবং থানার পাশের মার্কেটে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় থানা পাহারায় থাকা দুই পুলিশ সদস্য জীবন রক্ষার্থে থানার পেছনের ফটক খুলে পালানোর চেষ্টা করেন। জনতা পুলিশ সদস্যদের দেখে গণপিটুনি দেয়। গণপিটুনিতে দুই পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলেই মারা যান।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকার শত শত নারী-পুরুষ নিহত পুলিশ সদস্যদের লাশ দল দলে দেখতে আসেন এবং মুঠোফোনে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। থানার ভেতরে ঢুকে করে স্থানীয় লোকজন সব মালামাল নিয়ে যান।
এদিকে দাউদকান্দি উপজেলার সদরের তুজারভাঙা গ্রামের বাসিন্দা বাবু মিয়া (২১) সোমবার দাউদকান্দি বাজারে যান। দাউদকান্দি মডেল থানার সামনের সড়কে পৌঁছার পর পুলিশের গুলিতে তিনি মারা যান। উৎসুক জনতা থানা ঘেরাও করার চেষ্টা করলে থানা পুলিশ আত্মরক্ষার্থে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে।