কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে কুমিল্লায় ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল

জাহিদ হাসান নাইম।।
প্রকাশ: ৩ সপ্তাহ আগে

ছয় দফা দাবিতে সারাদেশব্যাপী চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকায় কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বাদ জুম্মা, কোটবাড়ি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মসজিদ থেকে শুরু হয় ‘৮৭’ এর কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে শিক্ষার্থীদের গণমিছিল। মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে কোটবাড়ি সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে, পরে পুনরায় ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।
বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে, আমি কে—ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার’, ‘কুমিল্লায় হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘চব্বিশের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’—এই স্লোগানগুলোর মাধ্যমে তাদের প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার তদন্ত ও বিচার দাবিতে ইতোমধ্যেই অধ্যক্ষের মাধ্যমে সেনাবাহিনী প্রধানের বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছে তারা।
মেকানিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান হোসেন বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবি আদায়ের চেষ্টা করছি। অথচ আমাদের উপর হামলা হয়েছে। মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে এসেছি, কারণ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই করব।” ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলাম বলেন, “প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা ন্যায়বিচার চাই। আমাদের দাবিগুলো মেনে নিতে হবে। ” আরেক শিক্ষার্থী মাহফুজ রানা বলেন, “আমরা চাই আমাদের শিক্ষার মান ও মর্যাদা নিশ্চিত হোক। হামলাকারীদের শাস্তি এবং আমাদের ছয় দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কতৃর্ক বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবতর্ন ও মামলার সাথে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে; ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল সহ উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম নিশ্চিত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমিক ভাবে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে; উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) এর পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাশকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও, যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়া কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল পদে কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সকল শুন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে; কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরাবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরীতে” কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে; পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইন্সটিটিউট হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (নড়াইল, নওগাঁ, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) এ পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক হতে পাশকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।