কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শরৎকাল নিয়ে লিখেছেন-‘আবার শরৎকাল আসিয়াছে। এই শরৎকালের মধ্যে আমি একটি নিবিড় গভীরতা, একটি নির্মল নিরতিশয় আনন্দ অনুভব করি। এই প্রথম বর্ষা অপগমে প্রভাতের প্রকৃতি কী অনুপম প্রসন্ন মূর্তি ধারণ করে। রৌদ্র দেখিলে মনে হয় যেন প্রকৃতি কী এক নূতন উত্তাপের দ্বারা সোনাকে গলাইয়া বাষ্প করিয়া এত সূক্ষ্ণ করিয়া দিয়াছেন যে, সোনা আর নাই কেবল তাহার লাবণ্যের দ্বারা চারিদিক আচ্ছন্ন হইয়া গিয়াছে।’ বাস্তবেই তেমন।
শরৎ এলেই কাশফুলের শুভ্রতায় সাজে প্রকৃতি। প্রকৃতির সেই চিরচেনা রূপে এবার সেজেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সাদা রঙের কাশফুল আর আকাশের নীল রং তরুণ তরুণীসহ প্রকৃতি প্রেমীদের হৃদয়ে জাগিয়ে তুলেছে অসাধারণ এক অনুভূতি।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকালে সরেজমিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার ছোট ছোট টিলা আর পাহাড়ে শুভ্রতা ছড়াচ্ছে কাশফুল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাস্তার দুই ধার, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের চারপাশ, কেন্দ্রীয় মসজিদ এবং লালন চত্বরের পাদদেশে দেখা মিলল কাশবনের। অপরূপ সেই দৃশ্য দেখতে ভিড় করেছেন শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীরা। কাশফুলের রঙের সঙ্গে মিল করে শাড়িতে নিজেকে সাজিয়েছেন অনেকে। কাশবনের সৌন্দর্যের সঙ্গে নিজেকে ধরে রাখতে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি হচ্ছেন অনেকে। কেউবা মুঠোফোনে তুলছেন ছবি।
এসময় কথা হয় বেশ কয়েকজন দর্শনার্থীর সঙ্গে। নগরীর অশোকতলা এলাকা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছিলেন সানজিদা আকতার। তিনি উৎফুল্ল হয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘কাশফুল হলো শুভ্রতার প্রতীক। এটা সবারই ভালো লাগার একটি বিষয়। ভার্সিটিতে ইনকোর্স পরীক্ষা চলছে, তারপরও কাশফুলের এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি। চতুর্দিকে অনেক মানুষ দেখে খুব ভালো লাগছে।’
কথা হয় আরেক দর্শনার্থী সাইমুন ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বন্ধুরা মিলে বাইক নিয়ে সেই লালমাইয়ের বাগমারা এলাকা থেকে এসেছি। কাশফুলের শুভ্রতার ছোঁয়া পেতে আর প্রশান্তির খোঁজেই কাশবনে ঘুরতে আসা। কাশফুল প্রশান্তির পাশাপাশি ছোঁয়া দিয়েছে মনকে। খুব ভালো লাগছে।’
তবে নগরায়ণের ফলে দিন দিন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এই অপরূপ সৌন্দর্য। আগে পথে-প্রান্তরে কাশফুলের দেখা মিললেও এখন সেটা হারিয়ে যেতে বসেছে। যেসব কাশবন আছে সেগুলোও নষ্ট হচ্ছে সচেতনতার অভাবে।
সচেতন নাগরিকদের মতে, কাশবনে আসা অনেক দর্শনার্থী ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যায়। আবার অনেকে কাশবনে এলোমেলোভাবে হেঁটে কাশবনের সৌন্দর্য নষ্ট করে ফেলে। তারা কাশফুলের সৌন্দর্য রক্ষা করতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।