কুমিল্লায় বিএনপির উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে বিরোধ, পাল্টাপাল্টি হামলা

মনোহরগঞ্জ প্রতিনিধি।।
প্রকাশ: ৪ দিন আগে

কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে সদ্যঘোষিত বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন পদবঞ্চিত নেতা–কর্মীরা। এই মিছিলে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে বিএনপির অপর পক্ষের বিরুদ্ধে।

এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা সদরের মনোহরগঞ্জ বাজারে এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহকালে স্থানীয় এক সাংবাদিকদের মুঠোফোন ভেঙে ফেলা হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনে বিএনপির রাজনীতি দুই পক্ষে বিভক্ত। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম। আরেক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কুমিল্লা বিভাগীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম আনোয়ারুল আজিম।

 

ঈদের আগের দিন গত রোববার মনোহরগঞ্জ উপজেলা এবং লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি। প্রতিটি কমিটির সদস্যসংখ্যা ৩১ জন। লাকসাম উপজেলা কমিটিতে আবুল কালাম নিজেই আহ্বায়কের পদ পেয়েছেন। মনোহরগঞ্জ উপজেলা কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইলিয়াস পাটোয়ারীকে। ইলিয়াস পাটোয়ারী আগে আনোয়ারুল আজিমের অনুসারী ছিলেন। সম্প্রতি কালামের বলয়ে যোগ দিয়েছেন তিনি। মনোহরগঞ্জ উপজেলা কমিটিতে আবুল কালামকে ১ নম্বর ও আনোয়ারুল আজিমকে ২ নম্বর সদস্য করা হয়েছে।

সদ্যঘোষিত বিএনপির এই আহ্বায়ক কমিটিতে অবৈধ দাবি করে গতকাল বিকেলে প্রতিবাদ মিছিল বের করেন আনোয়ারুল আজিমের অনুসারীরা। এ সময় তাঁদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন কালামের অনুসারীরা। এতে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

আনোয়ারুল আজিমের অনুসারী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘যাঁরা দলের দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন না, তাঁদের দিয়ে এই অবৈধ কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে আমরা প্রতিবাদ মিছিল বের করলে গতকাল বিকেলে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালান তাঁরা (আবুল কালামের অনুসারীরা)। মাসুদুল আলমের (সদ্যঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক) নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায় কালাম গ্রুপ। পরে আমাদের প্রতিরোধের মুখে তারা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায়। আমাদের কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছেন।’

 

এদিকে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় ভিডিও ধারণ করছিলেন স্থানীয় সাংবাদিক ও মনোহরগঞ্জ প্রেসক্লাবের (একাংশের) সাধারণ সম্পাদক আবদুল বাকী। এ সময় বিএনপির হামলাকারী পক্ষের নেতা-কর্মীরা আবদুল বাকীর মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেন। এ ছাড়া তাঁর ট্রাইপড ছিনিয়ে নেন।

 

আবদুল বাকী বলেন, ‘নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে আনোয়ারুল আজিমের অনুসারীরা মনোহরগঞ্জ দক্ষিণ বাজার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। আমি ভিডিও করছিলাম। মিছিলটি উত্তর বাজার পৌঁছালে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আমি পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় এক পক্ষ আমার মুঠোফোনটি কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে।’

 

এ বিষয়ে জানতে সদ্যঘোষিত উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

 

তবে আবুল কালামের অনুসারী ও উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব সরওয়ার জাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘আহ্বায়ক কমিটির পরিসর ছোট হওয়ায় সবাইকে স্থান দেওয়া সম্ভব হয়নি। অনেক ত্যাগী ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও কমিটিতে আসতে পারেননি। আর আমাদেরকে জেলার নেতারা বলেছেন, এ কমিটি দেওয়া হয়েছে দুই মাসের জন্য। আমাদের মূল দায়িত্ব হলো সম্মেলনের আয়োজন করা।’ কিছু লোক ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ তাঁর। সাংবাদিকের মুঠোফোন ভেঙে ফেলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জেনেছি। খোঁজ নিয়ে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’