বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা। পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে শহরমুখী একটি বাস দ্রুতগতিতে চলছিল। নির্দিষ্ট কোনো বাসস্টপ না দেখে হঠাৎই বাসটি মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায়। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা তাড়াহুড়ো করে লাফিয়ে নামতে শুরু করেন কনক্রিটের ডিভাইডারের ওপর। এক যুবক নিরাপদে পার হলেও, পেছনের দুই মাদ্রাসাছাত্র ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যান। ঠিক তখনই দ্রুত গতিতে একটি মোটরসাইকেল সামনে এসে পড়ে।
ভাগ্যক্রমে তারা বেঁচে যান। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের সেই ভয়াবহতা তাদের মনে গেঁথে গেছে চিরতরে। পথচারীদের চোখে-মুখে আতঙ্ক আর বিস্ময়—মনে হচ্ছিল, যেন মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে ঘুরে এল সবাই।
তবে এটি কোনো ব্যতিক্রম নয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে প্রতিদিন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। বাসগুলো যেখানে খুশি যাত্রী ওঠা-নামা করায়। নেই নির্দিষ্ট বাসস্টপ বা কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। ফলে যাত্রীরা নেমেই পড়ছেন বিভাজকের ওপর, যার দু’পাশ দিয়ে ছুটে চলছে যানবাহন।
কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে প্রতিদিন ঢাকায় যাতায়াত করেন শরীফ নামে এক তরুণ। তিনি বলেন,“বাস থামে মাঝ রাস্তায়, সেখান থেকে আমাদের নামতে হয় ডিভাইডারের ওপর দিয়ে। পিছনে গাড়ি আসছে কি না, দেখার সুযোগই থাকে না। কিন্তু যাতায়াত তো করতেই হবে।”
একই উদ্বেগ জানিয়েছেন স্থানীয় এক ডাব ব্যবসায়ী হারুন মিয়া। তিনি বলেন,
“আমার ছেলে স্কুলে যাওয়ার সময় ঠিক এমনভাবেই রাস্তা পার হয়। সারাদিনই ভয় লাগেকোনোদিন হয়তো একটা গাড়ি এসে তাকে শেষ করে দেবে।”
ময়নামতি হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল বলেন,“বাসগুলো নিয়ম মেনে যাত্রী ওঠানামা করায় না। মাঝে মাঝে অভিযান চালাই, কিন্তু এটা নিয়মিত হওয়া দরকার।”
সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ডা. সানজিদুর রহমান মনে করেন,“সমস্যার স্থায়ী সমাধানে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামোগত পরিকল্পনা। নির্ধারিত বাসস্টপ, ফুটওভার ব্রিজ ও কার্যকর মনিটরিং ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব নয়।”
কুমিল্লা রিজিওনের হাইওয়ে পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম বলেন,
“জনগণকে সচেতন করতে হবে। প্রশাসনের পাশাপাশি পরিবহন মালিক ও সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে।”