কুমিল্লায় বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবীতে মহাসড়ক অবরোধ গার্মেন্টস শ্রমিকদের

২০ কিলোমিটার জুড়ে তীব্র যানজট: ঈদ যাত্রায় চরম ভোগান্তি
চান্দিনা প্রতিনিধি।।
প্রকাশ: ২ সপ্তাহ আগে

বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে কুমিল্লার চান্দিনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছে ‘ডেনিম প্রসেসিং প্লান্ট লি.’ নামের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা। এতে মহাসড়কের অন্তত ২০ কিলোমিটার জুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। ঈদ যাত্রায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রী ও চালকরা।

শুক্রবার (১৪ জুন) সকাল ১১টা থেকে শুরু হওয়া অবরোধ চলে টানা দেড় ঘন্টা। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সকল বেতন-বোনাস পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি এবং প্রশাসনের উপস্থিতিতে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস নিশ্চিত করার আশ্বাসে দুপুর সাড়ে ১২টায় মহাসড়ক অবরোধ তুলে নেয় শ্রমিকরা।

অবরোধে অংশগ্রহণকারী ডেনিম প্রসেসিং প্লান্ট এর একাধিক বিক্ষুব্ধ শ্রমিক বলেন,‘ আমরা পেটের দায়ে গার্মেন্টসে চাকুরি করি। এই গার্মেন্টসে সব সময়ই এক মাসের বেতন আটকে রাখা হয়। আর বছরের কয়েকবার ৩-৪ মাসের বেতন আটকে রাখা হয়। মাসে ৯০ ঘন্টা ওভারটাইম করলেও ৩০-৩৫ ঘন্টার টাকা দেয়, বাকি ওভারটাম পুরোটাই কেটে দেয় তারা। শ্রমিকদের ঘাম ঝড়া টাকা খেয়ে ফেলে মালিক কর্তৃপক্ষ। ঈদের আর মাত্র ২ দিন বাকি, এখনও আমাদের ২ মাসের বেতন বকেয়া এমনকি বোনাসও দেয়া হয় নাই। আমরা ঈদ করবো কিভাবে ?’

শ্রমিক মাহাবুব, ফিরোজ সহ একাধিক শ্রমিক জানান, বেতন না পেয়ে বাধ্য হয়ে আমরা মহাসড়কে এসেছি। এখানে আসার পর পুলিশের সাথে মালিক পক্ষের গুন্ডা বাহিনীও আমাদের মারধর করেছে। আমাদের এক নারী শ্রমিকসহ তিনজনকে বেধরক মারধর করেছে তারা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক শ্রমিক জানান, ডেনিম প্রসেসিং প্লান্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এর ছোট ভাই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আলমগীর হোসেন এর নির্দেশেই শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধে করেছে।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত টাকা ছাড় না পেলে শ্রমিকদের বেতন আটকে রেখে পরিকল্পিত ভাবে শ্রমিকদের মহাসড়কে নামিয়ে দেন গার্মেন্টের মালিক পক্ষ।

এদিকে, দেশের লাইফ লাইন হিসেবে খ্যাত ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক টানা দেড় ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকায় উভয় পাশে অন্তত ২০ কিলোমিটার জুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের বুড়িচং উপজেলার কাবিলা থেকে দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়। অবরোধে আটকে থেকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ঈদের ছুটেতে ঘরমুখো যাত্রী ও চালক-শ্রমিকদের। খুব বেশি বেকায়দায় পড়েছে রোগীবাহী এ্যাম্বুলেন্স, বিদেশগামী যাত্রী ও হাটের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া গরুবাহী ট্রাক চালকরা।

ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার বিদেশগামী যাত্রী বিল্লাল হোসেন জানান, দুপুর ২টার মধ্যে আমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছতে হবে। দ্রুত পৌঁছার জন্য প্রাইভেটকার ভাড়া নিয়ে এসেছি। কিন্তু যানজটে আটকে পড়ে চান্দিনাতেই দেড়টা বেজেছে। কখন পৌঁছতে পারবো কিছুই বুঝতেছিনা।

সিরাজগঞ্জ থেকে আসা গরুবাহী ট্রাক চালক আনোয়ার হোসেন জানান, গরু নিয়ে চট্টগ্রাম যাবো। প্রচন্ড রোদের মধ্যে যানজটে আটকে আছি। এমন রোদে গরুগুলোও অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।

চট্টগ্রামগামী শ্যামলী পরিবহনের যাত্রী শাহানা পারভীন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শ্রমিকরা চাকুরী করেন গার্মেন্টেসে, যদি তাদের বেতন বোনাস না দেয়া হয় তাহলে তারা গার্মেন্টেসে বিক্ষোভ করবে। কিন্তু তারা মহাসড়কে উঠে হাজারও মানুষকে কেন দুর্ভোগে ফেলেবে? মহাসড়কে চলাচলরত গাড়ি চালকরা কি তাদের বেতন দিবে? এসব ঘটনায় প্রশাসন আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে ডেনিম প্রসেসিং প্লান্ট লি: এর পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে ডেনিম প্রসেসিং প্লান্ট লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) থেকেই বেতন বোনাস দেওয়া শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে আবারও বেতন বোনাস দেওয়া হচ্ছিল।’ তিনি দাবি করেন সব শ্রমিকরা নয়, কতিপয় উশৃংখল পোলাপান মহাসড়কে উঠেছিলো।

অভারটাইম কাটার বিষয়ে জানতে চইলে তিনি বলেন- ‘এখানে সব শ্রমিকরা ঘন্টায় টার্গেট অনুযায়ী প্রোডাকশন দিতে পারে না। তখন টার্গেট হিসেব করে অভারটাইম এর টাকা দেওয়া হয়।’

চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাবের মো. সোয়াইব জানান, আজকের মধ্যেই (শুক্রবার) তাদের বেতন ও বোনাস নিশ্চিত করা হবে। আমরা অনেক চেষ্টার পর শ্রমিকদের তা বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে তাদেরকে সরিয়ে নিয়েছি। চান্দিনা থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে।

চান্দিনা-দাউদকান্দি সার্কেল এর অতিরিক্ত সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) এনায়েত কবির সোয়েব জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত গার্মেন্টস মালিকরে সাথে কথা বলে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়ার আশ্বাস নিশ্চিত করায় শ্রমিকরা অবরোধ শেষ করেছে। কিন্তু দেড় ঘন্টায় তীব্র যানজট হওয়ায় যান চলাচল স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগে। আমাদের পুলিশ কাজ করছে।