কুমিল্লায় টানা বৃষ্টিতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। হাঁটু সমান বৃষ্টির পানি উপেক্ষা করে চলাফেরা করতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। পাশাপাশি নগরবাসীর চলাচলের রাস্তা ফুটপাত দখল করে রেখেছে কিছু অসাধু ব্যক্তি। এতে সাধারণ জনগণ ফুটপাত দিয়ে না চলাচল করে রাস্তার পানির উপর দিয়ে হেটে চলতে হচ্ছে।
বৃষ্টির বিষয়ে আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী দুইদিন পর্যন্ত টানা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এখন আরও ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
নগরবাসীর ক্ষোভ, সঠিক সময়ে সড়ক ও ড্রেনেজ উন্নয়ণ কাজ সম্পন্ন করা গেলে এই ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। বিভিন্ন রাস্তা ও ড্রেনের কাজ করতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করায় সেসব জায়গাগুলোতে ইট বালু সিমেন্ট জমে পানি চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে আছে। যে কারণে ড্রেনের পানি রাস্তা দিয়ে অপসারিত হওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (৫ আগষ্ট) কুমিল্লা নগরীর অধিকাংশ সড়কের এমন চিত্র দেখা গেলেও ফুটপাত দখলের চিত্রটি কান্দিরপাড় নজরুল এভিনিউ সিটি রেস্টুরেন্ট এন্ড পার্টি সেন্টার পেছনে দেখা দেয়।
সরজমিনে দেখা যায়, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা টমছমব্রিজ, শাকতলা, গোবিন্দপুর, বিসিক শিল্পনগরী, রেইসকোর্স, কাঠেরপুল, টাউন হল মাঠ, স্টেডিয়াম, নজরুল এভিনিউ, ছায়াবিতানসহ বিভিন্ন এলাকা বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা সমস্যার মুখে পড়েছেন। সড়ক ও ড্রেনের উপর ময়লা ও আবর্জনা মিশ্রিত দূষিত পানি জমে আছে। জলাবদ্ধতার কারণে কর্মজীবী নারী পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ চরম দূর্ভোগে পড়েছে। যানবাহন সংকটে অনেক মানুষ হাঁটু পানি মাড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন, এবং ছোট যানবাহন রাস্তার গর্তে পড়ে উল্টে যাচ্ছে। আর নজরুল এভিনিউ সড়কে পানি থাকায় মানুষ ফুটপাত দিয়ে যেতে চাইলেও যেতে পারছে না। কারন একদিকে সিটি রেস্টুরেন্ট এন্ড পার্টি সেন্টার একটি দরজা দিয়ে বন্ধ রেখেছে। আরেক দিকে আরেকজন ব্যক্তি একটা লোহার গেইট করে তালা মেরে রেখেছে। এতে সাধারণ জনগণ চলচল করতে পারছেনা।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, অপরিকল্পিত রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা, নকশা বহির্ভূত নির্মাণ, এবং ড্রেনের জায়গা দখল করে দোকানপাট নির্মাণের কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ধীর গতিতে চলছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা স্থায়ী হয়ে যাচ্ছে।
কুমিল্লা নাগরিক ফোরামের সভাপতি কামরুল আহসান বাবুল বলেন, জলাবদ্ধতা নগরবাসীর নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড় কোনও পরিকল্পনা গ্রহণ করা না হলে এই অভিশাপ থেকে মুক্তির কোনও উপায় নেই।
জিয়া নামের নগরীর এক বাসিন্দা বলেন, বৃষ্টি হলে নজরুল এভিনিউ সড়কটি সবসময় পানিতে ভাসমান থাকে। তবে এ রাস্তার সাথের ফুটপাতটি রেস্টুরেন্টের মালিকরা বন্ধ করে রেখেছে। এটি খুলে দেয়া হলে মানুষ পানির উপর দিয়ে না হেটে এ ফুটপাত দিয়ে কান্দিরপাড় যেতে পারবে।
ফুটপাত দখলের বিষয়ে সিটি রেস্টরেন্ট এন্ড পার্টি সেন্টারের পরিচালক জোবায়ের বলেন, এটা বিল্ডিং এর মালিক করেছে। আমরা দেখে সমাধান করে দেব।
কুমিল্লা আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক হাসিব রায়হান তালুকদার বলেন, সমুদ্রে লঘুচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। ভারী বৃষ্টিও সম্ভবনা আছে। আগামীকাল পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছামছুল আলম বলেন, ড্রেন সংস্কার ও পরিষ্কারের কাজ চলছে। তবে টমছমব্রিজ থেকে নোয়াগাঁও চৌমুহনী পর্যন্ত খালের সরু হওয়ার কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি কমলে পরিস্থিতি উন্নতির হবে। আর ফুটপাত দখল থাকলে আমরা উচ্ছেদ করার অভিযান পরিচালনা করব।