গ্রীষ্মের দুপুরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রথম পা রাখলেই চোখে পড়ে আগুনরঙা এক মোহময়তা। মনে হয়, প্রকৃতি যেন পুড়ে পুড়ে লাল হয়ে উঠেছে। সারা ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়ার অসংখ্য গাছ গ্রীষ্মের রোদে লাল শিখায় দগ্ধ নয়, বরং প্রগাঢ় ভালোবাসায় রাঙা হয়ে ওঠে বারবার।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রান্তে, প্রতিটি রাস্তার পাশে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া যেন প্রেমের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বসন্তের পরে গ্রীষ্ম মানেই কৃষ্ণচূড়ার ঋতু,এটাই কুবির সবচেয়ে রঙিন সময়। কৃষ্ণচূড়ার নিচে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তোলা কিংবা একাকী বসে কবিতা লেখা, এসব যেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহমান ঐতিহ্যের অংশ হয়ে উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন থেকে শুরু করে একাডেমিক ভবনগুলো, গোলচত্বর কিংবা মূল ফটকের রাস্তাগুলো এবং কৃষ্ণচূড়া সড়ক সবখানেই কৃষ্ণচূড়ার রাজত্ব। ঝরে পড়া ফুলে লাল হয়ে ওঠা পথ যেন শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের পথচলার প্রেরণা।
শুধু রূপ নয়, এর রয়েছে ভাবনাজাগানিয়া গভীরতাও। কৃষ্ণচূড়া যেমন গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতিতে একখণ্ড রঙিন শান্তি, তেমনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ও উচ্চশিক্ষার রুক্ষ যাত্রায় জ্ঞানের এক অনন্য আশ্রয়।
প্রতিদিন সকালে ক্লাসে যাওয়ার পথে কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় হাঁটতে হাঁটতে চলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলে। এ যেন প্রকৃতির পাঠশালা।
কৃষ্ণচূড়া শুধু একটি গাছ নয়, এ যেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ, আত্মা এবং গ্রীষ্মকালীন কাব্যের প্রতিচ্ছবি। তাই তো বলাই যায়, কৃষ্ণচূড়ার রাজ্য বললেই চোখে ভাসে আমাদের কুবি।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী লায়লা পারভীন বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ফুটে থাকা কৃষ্ণচুড়া গাছের লালচে রঙ যেন এক অপার্থিব সৌন্দর্যের আবহ সৃষ্টি করে। গ্রীষ্মের রৌদ্রদীপ্ত দিনগুলোতে এই ফুলগুলো চারপাশকে রাঙিয়ে তোলে। প্রতিটি গাছ যেন একেকটি রঙিন ছাতা, যা ছায়া দেয় শিক্ষার্থীদের পথ চলায়। কৃষ্ণচূড়ার নিচে বসে বন্ধুদের আড্ডা কিংবা একাকী কিছু সময় কাটানোও হয়ে ওঠে স্মরণীয়। লাল কৃষ্ণচূড়া আর সবুজ প্রকৃতির মেলবন্ধন ক্যাম্পাসকে করে তোলে ছবির মতো সুন্দর। ছাত্রছাত্রীদের মনে জাগে প্রশান্তি ও সৃষ্টিশীলতার অনুভব। কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রীষ্মকালীন চিত্রকে করে তোলে অনন্য। এটি যেন প্রকৃতির এক জীবন্ত ক্যানভাস।’
১৮তম আবর্তনের আরেক শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান ইতি বলেন, ‘কখন যে কৃষ্ণচূড়া ফুলে আমাদের ক্যাম্পাসটা এতটা বদলে গেল, বুঝতেই পারিনি। এই কৃষ্ণচূড়ার ছায়াতলে হাঁটতে প্রতিদিনই মনে হয় যেন কোনো গল্পের পাতা দিয়ে হাঁটছি। গাছের ডালে ডালে আগুনরঙা ফুল, আবার নিচে ঝরে পড়া পাপড়ির বিছানা; সব মিলিয়ে এক চুপচাপ ভালো লাগা কাজ করে ভেতরে। এই সৌন্দর্য যেন শুধু চোখে নয়, মনেও শান্তি ছড়িয়ে দেয়। সত্যি বলতে, কৃষ্ণচূড়া আমাদের একঘেয়েমি পড়াশোনার ভেতরেও একরাশ রঙ ছড়িয়ে যেন খুব আপন করে আমাদের চারপাশটাকে সাজিয়ে দিয়েছে নীরবে, নিঃশব্দে, কিন্তু ভীষণ যত্নে।’