টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় উজানের ঢলে প্রবল স্রোতে কুমিল্লার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া গোমতী নদীর পানি গত এক সপ্তাহ ধরে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও অবশেষে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়া শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ আগষ্ট) সন্ধ্যার পর থেকে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি)। বর্তমানে নদীটির পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলেও জানান পাউবি। এদিকে, গোমতীর পানি কমার খবর পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে কুমিল্লা র বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া এলাকার বানভাসি মানুষদের। এবার, তাদের বসতভিটার পানি কমে যাবে বলে আশ্বাস প্রকাশ করেছেন তারা। বুধবার (২৮ আগষ্ট) কুমিল্লার গোমতীর নদীর তীরবর্তী পালপাড়া ও বুড়বুড়িয়া বাঁধ এলাকায় গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর পানি অনেকাংশেই কমে গিয়েছে। বাঁঁধের স্রোতও আর আগের মতো তীব্র নেই। এতে স্বস্তি প্রকাশ করছেন ওই এলাকার মানুষেরা। কথা হয় বুড়বুড়িয়া এলাকার বাসিন্দা ইউনুছ মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, প্রথম দিকে পানির স্রোত এতোই তীব্র ছিলো যে গাছ, কিংবা বাড়ি কোনো কিছুই টিকতো না স্রোতের সঙ্গে। এখন স্রোত অনেকটা কমে গিয়েছে। এবার পানি কমে যাবে মনে করছি। এবার আমাদের বসতবাড়িগুলোর অস্তিত্ব মিলবে। পানি দ্রুত কমে গেলেই হয়। এদিকে, আক্ষেপ প্রকাশ করে একই এলাকার বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, রাতে হঠাৎ করেই এই বুড়বুড়িয়ার বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায়, কোনোমতে নিজের জীবন নিয়ে পাড়ে উঠে এসেছি। আমার হাঁস, মুরগী ছিলো অনেকগুলো সব পানিতে ভেসে গিয়েছে। আমার ঘরের কথা আর না ই বললাম, সব পানিতে তলিয়ে গিয়েছে। অল্প অল্প করে এই সংসার গুছিয়েছিলাম, এক বন্যা সব কেড়ে নিলো। স্রোত কমে যাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি লাগছে। পানি কমে গেলেই বাঁচি। এদিকে, গোমতীর পানি কমে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো. ওয়ালিউজ্জামান জানান, গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমা থেকে অনেক কমছে। বুধবার (২৮ আগষ্ট) বেলা ১২ টা পর্যন্ত গোমতীর পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন পাউবির এই কর্মকর্তা। আবহাওয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কুমিল্লা আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুর রহমান জানান, গোমতির পানি বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, এটা সুসংবাদ হলেও, আবহাওয়ার পরিস্থিতি অনুকূলে নেই। বুধবার সকাল থেকেই কোথাও কোথাও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এমন বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে গত ২২ আগস্ট রাতে গোমতীর পানি বিপৎসীমার স্মরণকালের সর্বোচ্চ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। গোমতী নদীর পানির লেভেল ১১ দশমিক ৩ মিটার হলেও, সেদিন রাতে এই নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওইদিন দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার দিকে গোমতী নদীর তীরবর্তী বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া এলাকার বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানির প্রবাহ বাড়ে। ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করে।