পঙ্গুত্ব নিয়েই ১৮ বছর পার করছে দাউদকান্দি ট্রমা সেন্টার

স্টাফ রিপোর্টার।।
প্রকাশ: ১ সপ্তাহ আগে

দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের জরুরি চিকিৎসা দিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে নির্মাণ করা হয়েছিলো একটি ট্রমা সেন্টার। নির্মাণের পর থেকেই নানান সমস্যায় পড়ে আছে সেন্টারটি। ১৮ বছরে দুই স্বাস্থ্যমন্ত্রী দুই বার উদ্বোধন করলেও আজও স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু হয়নি সেন্টারটির।

জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দির শহীদনগরে গণপূর্ত বিভাগের অর্থায়নে ৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিলো ২০ শয্যা বিশিষ্ট এই ট্রমা সেন্টারটি। কাজ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৬ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন বিএনপি জোট সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনামন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। উদ্বোধনের পর প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে মাস কয়েক পর সেন্টারটি বন্ধ হয়ে যায়।

পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী আ. ন. ম রুহুল হক ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে দ্বিতীয়বারের মতো ট্রমা সেন্টারটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে আউটডোরে সীমিত আকারে কিছু স্বাস্থ্য সেবা চললেও পরিপূর্ণ কার্যক্রম শুরু হয়নি দীর্ঘ এই ১৮ বছরেও।

  • এ সময়ে দুই সরকারের দুই মন্ত্রী দুই বার পৃথক উদ্বোধন করেছেন
  • ২৬টি পদের মধ্যে ১৫টিই রয়েছে শূণ্য
  • আজও স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু হয়নি

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিনতলা বিশিষ্ট ট্রমা সেন্টারটির নিচতলায় জরুরি বিভাগ ও চিকিৎসক-নার্সদের কক্ষেই চলছে সেবা কার্যক্রম। বাকি পুরো ভবনটি রয়েছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। দোতলা এবং তিন তলায় তৎকালীন সময়ের আধুনিক কাঠামোতে কক্ষগুলো নির্মাণ হলেও এখন খসে পড়ছে দেয়ালের রং। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় দরজা-জানালা ভেঙ্গে গেছে আবার কোথাও ধরে আছে মরিচা।

এদিকে সেন্টারটিতে ১৬টি পদে অর্থো-সার্জারী, এ্যানেসথেসিয়া, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, সিনিয়র স্টাফ নার্স, ফার্মাসিস্টসহ ২৬ জন স্টাফের জায়গায় রয়েছে মাত্র ১৫ জন। তাদের মধ্যে অনেকেই আবার অফিস করছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী ও জনবল না থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দুর্ঘটনাকবলিতরা।

স্থানীয়রা বলছেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে দীর্ঘ ১৮ বছর আলোর মুখ দেখেনি কোটি টাকায় নির্মিত এই সেন্টারটি। অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ, সিসিইউ-সহ রোগী থাকার সব ব্যবস্থা থাকলেও তিনতলা ভবনটি পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়।

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মহাসড়কে আহতদের সেবায় দেশের বিভিন্নস্থানে বিএনপি সরকার ট্রমা সেন্টার স্থাপন করেছিলো। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অনেকগুলো উদ্বোধন করেছি আমি। দুর্ভাগ্যবশত এতগুলো বছর পরেও শহীদনগরের ট্রমা সেন্টারটি চালু করা হয়নি। আশাকরি, আগামীতে বিএনপি সরকার গঠন করলে ট্রমা সেন্টার পরিপূর্ণভাবে চালু করা হবে।’

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের চিকিৎসা দিতে স্থাপিত এই বিশেষায়িত হাসপাতালটি অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় মহাসড়কে দুর্ঘটনায় আহতরা বঞ্চিত হচ্ছেন জরুরি চিকিৎসা সেবা থেকে। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা দ্রুতই পূর্ণ কার্যক্রমে ফিরবে ট্রমা সেন্টারটি।

দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও জনবল না থাকায় ট্রমা সেন্টারটি চালু করা যাচ্ছে না। তবে আমরা একটি তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সরকার পদক্ষেপ নিলে দুর্ঘটনায় আহতরা ঢাকায় না গিয়ে এখানেই উন্নত সেবা পাবেন।’