নভেম্বর মাস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সুন্দরবনে পর্যটকদের আগমন শুরু হয়। শীত যত বাড়তে থাকে সেই সঙ্গে সুন্দরবনেও বাড়তে থাকে পর্যটকের সংখ্যা। গত ২৭ জানুয়ারি খুলনা প্রেস ক্লাবের শতাধিক সদস্যের একটি টিম সুন্দরবন ভ্রমণে যায়। তিন দিনের এই ভ্রমণে সুন্দরবনের অভয়ারণ্য আন্ধারমানিক, কচিখালী, কটকা, ডিমেরচর, জামতলা সি বিচ এবং করমজল পর্যটন স্পটে প্রচুর পরিমাণে পর্যটক দেখা যায়।
বন বিভাগের সূত্রমতে, হিরণ পয়েন্ট ও দুবলারচরের চেয়ে এ বছর আন্ধারমানিক, কচিখালী, কটকা, ডিমেরচর, জামতলা সি বিচে পর্যটকের আগমন বেশি। তবে এ বছর বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা কম। পর্যটন স্পটগুলোতে প্রতিদিন সাত-আটটি ছোট-বড় ভেসেল জাহাজ নোঙর করতে দেখা গেছে।
পর্যটকদের কাছে সরাসরি সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী দেখা রোমাঞ্চকর। আন্ধারমানিক, কচিখালী, কটকা, ডিমেরচর, জামতলা সি বিচে যাওয়ার পথে দেখা মিলেছে বানর ও হরিণের দলবদ্ধ ছোটাছুটি, বন্য শূকর, সুন্দরবনের বিলুপ্তপ্রায় বিশাল আকৃতির মদনটাক ও ঈগলের। সকালে করমজলের খালের পাড়ে বিশাল আকৃতির দুটি কুমিরকে রোদ পোহাতে ও আরেকটি কুমিরকে পানিতে ভেসে থাকতে দেখা যায়। যা সবাইকে রোমাঞ্চিত করে। এছাড়াও নদীতে ডলফিনের ডুব সাঁতার ছিল হূদয়কাড়া। সুন্দরবনের নদী, খালে সাদা বক, মাছরাঙা, শঙ্খচিল, গাংচিলের মাছধরা ও উড়াউড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। সুন্দরবনের লক্ষ্মীপেঁচা, দোয়েল, মৌটুসিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলরবও ছিল মনোমুগ্ধকর।
সুন্দরবন প্রেস ক্লাব থেকে আসা পর্যটক সাংবাদিক হাসান আহমেদ মোল্লা বলেন, আমাদের টিমের দলনায়ক খুলনা প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক এনামুল হক করমজলের খালে ট্রলার না নিয়ে গেলে আমরা বিশাল আকৃতির দুটি কুমিরসহ তিনটি কুমির দেখতে পারতাম না। সত্যিই আমাদের এবারের সুন্দরবন ভ্রমণ সার্থক হয়েছে। একই ট্রলারে থাকা শামীমা নাসরিন সীমা বলেন, সরাসরি সুন্দরবনের খালের পাড়ে এতবড় কুমির দেখতে পারব আগে কখনো ভাবিনি। মনে হচ্ছে, কুমির দেখার পর ভ্রমণের সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে।
তিন বছরের আরহাম হোসেন কাব্যকেও রোমাঞ্চিত করেছে সুন্দরবনের কুমির। করমজলের খালের পাড়ে কুমির দেখে সে-ও চিত্কার করে ওঠে কুমির কুমির বলে।
বনরক্ষী দিলীপ বলেন, সুন্দরবনে হরহামেশা বানর, হরিণ, শূকর দেখা যায়। তবে খুব একটা বাঘ-কুমির দেখা যায় না। যে সব পর্যটকের চোখে বাঘ-কুমির পড়ে তারা ভাগ্যবান।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, আগে সুন্দরবনের হারবাড়িয়া, কচিখালী, কটকা, হিরণ পয়েন্ট, দুবলারচর, কলাগাছিয়া ও করমজল—এই সাতটি স্থানে পর্যটন স্পট ছিল। নতুন করে শরণখোলার আলীবান্ধা, চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক, খুলনা রেঞ্জের শেখেরটেক ও কৈলাশগঞ্জে আরো চারটি পর্যটন স্পট হয়েছে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের (টোয়াস) সাধারণ সম্পাদক এবং রূপান্তর ইকোট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান ডেভিড বলেন, লাক্সারি লঞ্চগুলোতে ভালো পর্যটক হচ্ছে। তবে ছোট ছোট লঞ্চে তেমন পর্যটক নেই। আন্ধারমানিক, কচিখালী ও কটকা পর্যটনকেন্দ্রে এ বছর পর্যটকদের আগ্রহ বেশি। এছাড়া সন্দরবনের প্রবেশমুখ করমজল পর্যটন স্পটে স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা বেশি যাচ্ছেন।
সুন্দরবনে পর্যটকের আগমনের সংখ্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে সুন্দরবন বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো বলেন, পর্যটনের জন্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে রাজস্ব টার্গেট থাকে না। আমরা চাই সহনশীল মাত্রায় সুন্দরবনে পর্যটক আসুক। যাতে করে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব না পড়ে। কারণ, সুন্দরবন একটি সংরক্ষিত বন। এটি বিশ্ব ঐতিহ্য। এই বনকে সুরক্ষিত রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব।