‘ প্রশাসন আমাদেরকে সাথে নিয়ে কাজ করলে আমরা অল্প সময়ের মধ্যে যানজট নিরসন করে ফেলবো ইনশাআল্লাহ্ ’

ইউসুফ মোল্লা টিপু
জাহিদ হাসান নাইম।।
প্রকাশ: ৫ মাস আগে

‘প্রসঙ্গঃ সমসাময়িক রাজনীতি ও বিবেক’ বিষয়ক টক শো অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২১ অক্টোবর) রাতে কুমিল্লা আল নূর হসপিটালের সৌজন্যে দৈনিক আমাদের কুমিল্লা ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল কুমিল্লার জমিনের যৌথ উদ্যোগে টক শো অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক, সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক শাহাজাদা এমরানের সঞ্চালনায় টকশো তে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব ও সামাজিক সংগঠন বিবেকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইউসুফ মোল্লা টিপু।

এসময় টকশো তে সমসাময়িক রাজনীতি বিষয় ও সামাজিক সংগঠন বিবেক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উঠে এসেছে।

আলোচনার এক পর্যায়ে, ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, শুরুতেই ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে দেশ ও জাতি’কে রক্ষার জন্য যারা শহীদ হয়েছে তাদেরকে স্মরণ করি শ্রদ্ধাভরে। গত ১৫ বছরে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর প্রায় ৮ লাখ ৪২ হাজার মামলা হয়েছিলো। মামলার বেড়াজালে ফেলে আমাদের নেতাকর্মীদের হেনস্থা করা হয়েছিলো৷ এছাড়াও, ২৪ এর আন্দোলনে বিএনপির ৪২২ জন সক্রিয় সদস্য নিহত হয়েছিলো। আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় আমরা যখন বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন আওয়ামীলীগের গুণ্ডাবাহিনী আমাদের নেতা ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হাজী আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিন এর বাড়িতে হামলা চালায়। তখন আমি তাদের প্রতিহত করতে গেলে আমি নিজেও আহত হয়েছিলাম। আমরা সেখানে আক্রমণ করিনি, বরং আত্মরক্ষা করেছিলাম তখন। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে এককভাবে ছাত্ররা ক্রেডিট নিবে এমন নয়। গত ১৫ বছর ধরে আমরা আওয়ামীলীগের অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলাম।

৫ আগষ্ট কুমিল্লায় যে লুটতরাজ হয়েছিলো সেটার সঙ্গে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের কোনো হাত নেই। আমার মনে হয়, যেসব সাধারণ মানুষ গত ১৫ বছরে তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়েছিলো সেদিন সেটা তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিলো। ছাত্র আন্দোলনের সময় আমরা ছাত্রদেরকে সামনে থেকে না পারলেও তাদেরকে পেছন থেকে সাপোর্ট দিয়েছিলাম। জুলাই আন্দোলন মাঝখানে স্থবির হয়ে গিয়েছিলো। ২ দিন কোনো কর্মসূচি ছিলো না। আমাদের নেতা তারেক রহমান তখন আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছিলাম। তাই আমি বলবো এই বিজয় গত ১৫ বছর ধরে আমাদের প্রতিবাদের সর্বশেষ অধ্যায় ছিলো। ছাত্রজনতার আন্দোলনের পাশাপাশি আমাদের ১৫ বছরের আন্দোলনের দুই মিলেই নতুন স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি আমরা। কোনো নেতাকর্মী যদি এখন কোনো অপকর্মে লিপ্ত থাকে তাহলে আমরা দেশনায়ক তারেক রহমানকে অবহিত করে সাথে সাথে এর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো। কুমিল্লার ৩ বাসস্ট্যান্ড বিএনপির নেতারা দখল করে ফেলেছে এমন কোনো প্রমাণ আমরা পাই নি। এগুলো আওয়ামীলীগের দোসররা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কেউ সুস্পষ্ট প্রমাণ দিতে পারলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিবো।

গত ১৫ বছর যারা দলের পাশে ছিলো দলও তাদের পাশে থাকবে। এখন উড়ে এসে কেউ জুড়ে বসতে পারবে না।

এছাড়া, সাবেক এমপি বাহার ও সাবেক মেয়র সূচনা পালিয়ের যাওয়ার সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছিলো তাদেরকে আমরা জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তারা আমাদেরকে দৃঢ়চিত্তে বলেছিলেন যে এটি একটি অপবাদ৷ এর সঙ্গে তারা জড়িত নয়। আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল অবশ্যই বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল। দেশ নায়ক তারেক রহমান সারা বাংলাদেশে যারা নির্বাচন করবেন সেভাবে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন, নেতৃত্ব দিয়ে রেখেছেন। আগামী ৩ মাসের মধ্যেও যদি নির্বাচন হয়, বিএনপি ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। আর কুমিল্লার ১১ আসনের মধ্যে ১১টি তেই বিএনপি জয়লাভ করবে বলে আমি আশাবাদী৷ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গণতান্ত্রিক দল। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী৷ আওয়ামীলীগের ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমাদেরকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেয় নি। কারণ তারা জানতো, বিএনপি এলে তারা ১০টি আসনও পাবে না। তবে, বিএনপি সেটা করবে না। সবগুলো দলের অংশগ্রহণের মধ্যেই নির্বাচন হবে।

কুমিল্লা নগরীর যানজট নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, কুমিল্লা নগরীর যানজট নিরসন বড় কোনো বিষয় নয়। যারা যানজট নিরসনে দায়িত্ব পালন করছে, তাদের মধ্যে নীতি নৈতিকতা ও স্বচ্ছতা থাকলে যানজট হবে না। অবৈধ স্ট্যান্ড আর জিবি উঠিয়ে দিলে যানজট নিরসন হয়ে যাবে। প্রশাসন আমাদের সাথে কাজ করলে আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে যানজট নিরসন করে ফেলবো।

তিনি আরো বলেন, অনেকে মহানগর বিএনপি দুই গ্রুপের বিভেদ বলে৷ আমি বলবো, উদবাতুল বারী আবু ও আমি একসাথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করে যাচ্ছি৷ আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই।

সামাজিক সংগঠন বিবেক প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ইউসুফ মোল্লা টিপুর চোখের পানি দর্শকদেরকেও কাঁদিয়েছে ব্যাপক ভাবে।তিনি বলেন, আমি রাজনীতি করি, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ করি। তিনি ছিলেন একজন আত্ম মানবতার সেবায় নিয়োজিত মানুষ। করোনাকালীন সময়ে আমাকে কয়েকজন বললো, সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের সেবা করতে। তখন আমরা মানবিক সংগঠন ‘বিবেক’ প্রতিষ্ঠা করি৷ তখন সেনিটাইজার বিতরণ থেকে শুরু করে মাস্কসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাই। এরপর, করোনা আক্রান্ত রোগী মৃত্যুবরণ করলে দাফন করার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম।

এরপর রমজানের সময় উজির দিঘিরপাড় এলাকার এক ব্যাংক কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে আমরা সবার সাথে আলোচনা করে তাকে দাফন করি। সেই থেকেই আমাদের ‘বিবেক’ এর থেকে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তাদের দাফন কার্যক্রম সম্পন্ন করতাম। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের দাফনের কথা বলতে গিয়ে টকশোতে ডুকরে কেঁদে উঠে ইউছুফ মোল্লা টিপু। তিনি বেশ কয়েকটি দাফনের বর্ননা দেন।

তিনি আরো বলেন, করোনার সময় বিশ্বে আমরাই প্রথম ধর্মীয় রীতি মেনে একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে দাফন করি। এর আগে যারা করেছিলো, তারা তায়াম্মুম করে দাফন করতো। আমরা সেটা করিনি। আমরা বিবেকের পক্ষ থেকে সর্বমোট ৪৭৬টি লাশ দাফন করেছিলাম তখন। এর মধ্যে ৯ জন হিন্দু ও একজন খ্রীষ্টান ছিলো৷ করোনা চলে গেলেও বিবেক থেমে যায় নি। আমরা এখনো সমাজের বঞ্চিত মানুষদের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। বিবেক নিয়ে আমি অনেক স্বপ্ন দেখি। আমি মারা গেলেও যাতে বিবেক মানুষের বিবেকে থাকে। এর মাঝে আমি বিবেকের নামে একটি এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেছি। এছাড়াও আল্লাহ যদি সহায় থাকে বিবেকের নাম দিয়ে আমি একটি মানবিক হাসপাতাল করবো। যেখানে গরীব অসহায় মানুষরা বিনামূল্যে সেবা পাবে। সর্বশেষ বলতে চাই, নীতি নৈতিকতা ও আদর্শ নিয়ে সারা জীবন মানুষের কল্যাণে আমি কাজ করে যেতে চাই।