কুমিল্লার মুরাদনগরের তরুণ ব্যবসায়ী কাজী নাজমুল হাসানকে ঢাকায় পিটিয়ে হত্যার পর লাশ গুমের চষ্টো করেছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার মাঝে খাবার ও পানি সরবরাহ করতেন তিনি। এটাই ছিল তার ‘অপরাধ’। এদিকে যথাযথ সহায়তা না পাওয়ায় এখনো মামলা করতে পারেননি তার স্বজনরা। সব ধরনের সহযোগিতা থেকেও বঞ্চিত অসহায় পরিবারটি।
জানা যায়, নাজমুলের বাড়ি মুরাদনগর উপজেলার দেৌলতপুর গ্রামে। অসচ্ছল পরিবারের হাল ধরতে এইচএসসি পাশ করেই গ্রাম থেকে ঢাকায় চলে যান। বিভিন্ন ধরনের চাকরির পর একপর্যায়ে যাত্রাবাড়ীতে কেমিক্যালের ব্যবসা শুরু করেন। এতে পারিবারে সচ্ছলতা আসে। স্ত্রী ও এক কন্যাসন্তান নিয়ে রায়েরবাগে থাকতেন তিনি।
নাজমুলের পরিবার জানায়, জুলাইয়ে দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। বিবেকের তাড়নায় শুরু থেকেই ছাত্র-জনতার ডাকে যাত্রাবাড়ী এলাকার বিভিন্ন বিক্ষোভ-সমাবেশে যোগ দেন নাজমুল। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের মাঝে শুকনা খাবার ও পানি সরবরাহ শুরু করেন। তার এই মানবিক কর্মকাণ্ডের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিষয়টি স্থানীয় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের কানেও চলে যায়। এতে তার ওপর চরম ক্ষুব্ধ হয় তারা। ১৮ জুলাই নিষদ্ধি এ সংগঠনের সন্ত্রাসীরা যাত্রাবাড়ীতে তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানে তার মৃতু্য হয়। সেসময় ঘাতকরা তার লাশ গুমের চষ্টো করে। কিন্তু স্বজনরা সক্রিয় থাকায় তারা ব্যর্থ হয়। ১৯ জুলাই নিজ গ্রামে তার লাশ দাফন করা হয়। ঘটনার চার মাস অতিবাহিত হলেও এখনো মামলা করতে পারেনি নাজমুলের পরিবার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা না পাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা থমকে গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, আদরের কর্মক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় নাজমুলের মা নাজমা বেগম। ছেলের কথা মনে করে এখনো অঝোরে কাঁদেন তিনি। এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে আইনের আওতায় আনার দাবি স্বজন ও এলাকাবাসীর।
নাজমুল হাসানের বাবা কাজী মো. সেলিম বলেন, যাত্রাবাড়ীতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তারা লাশ গুমেরও চষ্টো করেছিল। আমার ছেলের বউ ও স্বজনরা তত্পর থাকায় তারা লাশ নিতে পারেনি। আমি সন্তানের ঘাতকদের সর্বোচ্চ বিচার দাবি করছি। তিনি বলেন, আমরা মামলা করতে পারিনি। কারণ, আমরা সন্ত্রাসীদের চিনি না। ঘটনাস্থলের কোনো সিসিটিভি ফুটেজও আমাদের হাতে নেই। এগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারাই সংগ্রহ করা সম্ভব।
এ বিষয়ে বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘটনাস্থল ঢাকার যাত্রাবাড়ী। নাজমুলের পরিবার চাইলে সেখানে মামলা করতে পারে। আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে আমরা তা করতে প্রস্তুত আছি।