ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মিডিয়ায় জিরো টলারেন্স ভূমিকা ও ফ্যাসিবাদ বিরোধীদের ঐক্যের ডাক দিলেও কুমিল্লার মুরাদনগরে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক এনসিপির। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের মত প্রশাসনকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ নেতাদের দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে তারা বলে অভিযোগ করেছেন মুরাদনগর উপজেলা বিএনপি।
অভিযোগ করে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলেন, ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও কুমিল্লার মুরাদনগরে এখনো সক্রিয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করা চেয়ারম্যানরা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার আশ্রয়ে এখনো বলবৎ রয়েছেন। তারা আরো বলেন, বরং ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে আসিফ মাহমুদ সজিব ভূইয়া অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হওয়ায় বিএনপি নেতা কর্মীদের কোনঠাসা করার চেষ্টা করছে আসিফ মাহমুদ।
তারা বলেন, বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে মুরাদনগরে বিএনপিকে ঠেকাতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের নিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে শোডাউন করছে আসিফ মাহমুদের বাবা ও তার চাচাত ভাই ওবায়দুল্লাহ। উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ ও বলেন, ৮ মে আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধের রাতেও আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের মিডিয়া উইং যুবলীগ নেতা আরিফের সাথে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার গোপন বৈঠকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল।
অভিযোগ রয়েছে, এরই মাঝে মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমানের আশ্রয় প্রশ্রয়ে মুরাদনগর সদরে অবৈধ ড্রেজার ও মাদক ব্যবসাসহ সকল বেআইনি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফ মেম্বার।
উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে আরো বলেন, শুধু তাই নয়, ২৩ মে শুক্রবার সন্ধায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের চাচাত ভাই ওবায়দুল্লাহ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে নিয়ে থানার ভিতরেই বৈঠক করে মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান। পরিকল্পনা হয় আওয়ামী লীগের পদবিধারী নেতারা পিছনে থাকবে সাধারণ আওয়ামী লীগ নেতারা এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ইউএনও কে দিয়ে শিক্ষার্থী এনে সোমবার মুরাদনগরে মিছিল করবে এনসিপি। বাজেট হয় ১০ লক্ষ টাকা। তবে ওসি জাহিদুর রহমানের আপত্তি এ বাজেটে হবে না। বাজেট বাড়াতে হবে। কুমিল্লা থেকে স্পেশাল ফোর্স আসবে। আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে এনসিপির মিছিলের আয়োজনকে কেন্দ্র করে মুরাদনগর জুড়ে ব্যাস আলোচনা সমালোচনা চলছে।
এদিকে, চায়ের টেবিল থেকে শুরু করে সর্বত্র সাধারণ জনগনের প্রশ্ন ওসি জাহিদুর রহমান আর উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের চাচাত ভাই যদি আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে এভাবে মিছিল মিটিং করে তাহলে তো সাধারণ মানুষদের আর রক্ষা নাই।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, গত কয়েকদিনে মুরাদনগরের ডায়না হোটেল, জেলা পরিষদ মার্কেট, মোহন মার্কেটে আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূইয়ার চাচাত ভাই ওবায়দুল্লাহ। তাদের মিটিং চলাকালে বাহিরে পাহারা দেন মুরাদনগর থানার এএসআই হাবিবসহ ৩ পুলিশ সদস্য।
তারা জানান, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূইয়ার চাচাত ভাই ও ওসি জাহিদুর রহমানের সাথে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুরাদনগর সদরের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ মাসুদ, জেলা কৃষকলীগ নেতা আশরাফ মেম্বার, বাদশাহ মেম্বার,তৌহিদ মেম্বারসহ আওয়ামী লীগের ডজনখানেক অস্ত্রধারী নেতা।
আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে এনসিপির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। বিএনপিকে উস্কে দিয়ে মুরাদনগরের হাঙ্গামা সৃষ্টি করবে। অপরদিকে মুরাদনগর থানার ওসি পূর্বের ন্যায় আবারো বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করে এলাকা ছাড়া করবে। আওয়ামী লীগ নেতাদের এবং মুরাদনগর থানার ওসির সাথে বৈঠক করে নানামুখী ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করছে এনসিপি।
এমতাবস্থায় মুরাদনগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ। এনসিপি নিজেরাই নিজেদের মেরে মামলা সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে গোপনসূত্র জানা গিয়েছে। এ বিষয়ে মুরাদনগর উপিজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোল্লা মজিবুল হক বলেন, সারা বাংলাদেশের ন্যায় মুরাদনগরের জনগন ও গত ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। যার ধারাবাহিকতায় গত ৫ ই আগস্ট দেশ থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিতাড়িত করা হয়েছে। জনগনের মনে আশার উদবেগ হয় যে,আমরা শান্তি ফিরে পেয়েছি। কিন্ত খুবই দু:খের বিষয়, কিছুদিন যেতে না যেতেই আওয়ামিলীগের দোসররা বিভিন্ন রূপে আবার ফিরে আসার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন লোকের কাধে ভর করে তারা আবির্ভূত হচ্ছে। মুরাদনগরে এনসিপির কর্ণধার আসিফ ভুইয়া, তার বাবা এবং চাচাতো ভাই ওবায়দুল্লাহর সাথে আওয়ামিলীগ মিলে মুরাদনগরকে অশান্ত করার নানা রকম পাঁয়তারা করা হচ্ছে। মুরাদনগরের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদের বাড়িতে গোপন বৈঠক হয়। মোহন মার্কেটে গোপন বৈঠক হয়। আমরা গোপন সুত্রে জানতে পারছি, মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অফিস কক্ষেও এ জাতীয় মিটিং চলে। আমরা অত্যন্ত সংন্কিত, তারা যে কোন সময় একটি দূর্ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপির উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করতে পারে।আমরা প্রশাসনের কাছে মুরাদনগরে এসব স্বৈরাচার দূর করে শান্তিপ্রিয় পরিবেশ তৈরি করার অনুরোধ করছি।
মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক কামাল উদ্দিন ভুইয়া বলেন, আলহাজ্ব কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ মুরাদনগর থেকে বার বার জনগনের ভোটে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এটা ওনার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ওনাকে বার বার হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। ইট ভাটায় পুরিয়ে ফেলার ষড়যন্ত্র করে ব্যার্থ হইলে তারা গ্রেনেড হামলা মামলায় শাস্তি দিয়ে দীর্ঘ ১৩ বছর বিদেশে করে রাখে। ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানের পর ফ্যসিস্ট হাসিনা পালিয়ে গেলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। কিন্ত তারপরেও ষড়যন্ত্র থেমে নেই। মুরাদনগরের একজন উপদেষ্টা আছেন যিনি তার গোপন আশা পুরন করার জন্য ফ্যাসিস্ট এর দোষর ইউসুফ আব্দুল্লাহর কাধে ভর করে নির্বাচন করতে চায়। সুষ্ঠু নির্বাচনে কায়কোবাদকে হারানো অসম্ভব। তাই সে ফ্যাসিস্টদের কাধে ভর করে মুরাদনগরে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে। তার আত্মীয় ওবায়দুল্লাহ এনসিপির নাম ব্যবহার করে সকল আওয়ামিলীগ এর সাথে আতাত করে মুরাদনগরে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে। ইউসুফ আব্দুল্লাহর সময়ে শান্তিপ্রিয় মুরাদনগরে বেড়ে যায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। যার ফলে সন্ত্রাসী আশরাফের কারনে রহিমপুরে জোড়া খুনের মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে। আর এই হত্যার মধ্য দিয়ে আশরাফ ও সন্ত্রাসী বাহিনী এলাকায় ব্যাপক চাঁদাবাজি করে থাকে। আর এর পিছনে মাস্টারমাইন্ড ছিল ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন। বর্তমানেও এই আশরাফ ও মাসুদ গং একত্রিত হয়ে ওবায়দুল্লাহর সাথে হাত মিলিয়ে মুরাদনগরে অশান্তি লাগিয়ে রাখছে।
মুরাদনগর উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি কাজী তাহমিনা বলেন, একদিকে এনসিপি বলতেসে আমরা আওয়ামিলীগ বিরোধী এবং আওয়ামিলীগ এর নিষিদ্ধ দাবি করছে। অন্যদিকে তাদের দলের লোকজন মুরাদনগরে আওয়ামিলীগ এর নেতাকর্মীদের নিয়ে গোপন বৈঠক করছে। যাদেরকে বিগত ১৭ বছর ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের সাথে দেখা গিয়েছে তাদের নিয়ে এনসিপি মুরাদনগরে মিটিং করে। তাদের নিয়ে থানায় পুলিশ মিটিং করে। তাদের সাথে মিছিল মিটিংয়ে দেখা যায় আবার তারাই বলেই আওয়ামিলীগ নিষিদ্ধ চাই। যদি নিষিদ্ধই চাও তাহলে আবার একসাথে মিটিং মিছিল করেন কেন।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো বিএনপি নেতারা করেছে সেগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। আমাদের অফিসিয়াল মিটিং ব্যতীত কোন রাজনৈতিক কিংবা অন্যান্য মিটিংয়ে যোগ দেওয়ার আমাদের কোন এখতিয়ার নেই৷