মুরাদনগর থানার ওসি ও উপদেষ্টার চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে কুমিল্লার আদালতে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৪ দিন আগে

কুমিল্লার মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে কুমিল্লা আদালতে মামলা হয়েছে। মোঃ জাহিদুর রহমানকে ১ নম্বর আসামী করে আরো ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার মামলাটি করেন মোঃ মাহাদী হাসান নামের এক ইলেকট্রিশিয়ান। মামলার অন্য আসামীরা হলেন- ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের চাচাতো ভাই এড.  উবাইদুল্লাহ হক সিদ্দিকী (৪০), আল-মামুন (৩০), সাজিদ (২৫), আরাফাত (২৫), আফতাব হোসেন মিজান (২৮), ফয়সাল (৩০), এনামুল হক আসিফ (৩২), মাহি (২৫), ইকরাম (২২), জিসান (২৫), সিয়াম (২৩), সাইম (২০), নাঈম (২৫), মহিউদ্দিন (২৮), সাইফুল (২৭), তৌহিদ রাসেল (২৮), রাসেল (২৮), হাবিব (২৮), ইমন (২৪), ইব্রাহিম (৩২), মোস্তাফিজ (২৮), আবুল ফয়সাল (৩০), মোঃ মনির (২৮) ও ইমরান। মামলায় সাক্ষী হিসবে ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ওসি মোঃ জাহিদুর রহমানের ছত্রছায়ায় অন্য আসামীরা মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ বাজায় দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচলা করে আসছে। বাদীর ভাই ও মামলার ১ সাক্ষী মোঃ আবুল কামাল একজন সিএনজি চালক। তিনি কোম্পানীগঞ্জ নবীনগর রোডে দীর্ঘদিন যাবত সিএনজি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। মামলার ২ থেকে ২৫ নং আসামীগন একটি সক্রিয় চাদাঁবাজি চক্র এবং দীর্ঘদিন যাবত ২ থেকে ২৫ নং আসামী কোম্পানীগঞ্জ বাজার সহ আশেপাশের এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ চাদাঁবাজী করিয়া আসিতেছে। ২ থেকে ২৫নং আসামীগন বিগত কিছু দিন যাবত ওসির নাম ব্যবহার করিয়া এবং বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের সহযোগী ওসির ছত্রচ্ছায়ায় থাকিয়া ব্যাপক চাঁদাবাজি করিয়া আসিতেছে। ২ থেকে ২৫ নং আসামীকে প্রকাশ্যে বলে বেড়াতো যে ওসির লোক এবং তাহাদেরকে কেউ কিছুই করিতে পারিবে না।

মামলার অভিযোগে আরো বলা হয়, ওসি বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের একজন সুবিধাভোগী এবং অনুগত কর্মকর্তা হিসাবে জুলাই অভুত্থ্যান বিরোধী অর্থাৎ বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দমনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন করেন। এছাড়া ওসি ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমলে বিএনপি তথা বিরোধী দলীয় স্থানীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। ওসি জুলাই- অভ্যুত্থান আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার উপর নিজে গুলিবর্ষন করেন এবং তার মদদে তার সহযোগীরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার উপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালায়। ৫ই আগষ্ট পরবর্তী সময়ে ওসি দ্রুত খোলস পাল্টাইয়া এবং বিভিন্ন উপায়ে তদবীর করিয়া মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদে পোষ্টিং নিয়া ফ্যাসিষ্ট সরকারের দোসর/অংশীদার হিসাবে বর্তমান সরকার/স্থানীয় জনগন এবং মুরাদনগর উপজেলার প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। প্রথম ঘটনার দিন, ২৪ মার্চ রোজ সোমবার বিকাল অনুমান ৪ ঘটিকার সময়ে ২ থেকে ২৫ নং আসামীগন কোম্পানীগঞ্জ নগরপাড়া সিএনজি স্ট্যান্ডে গিয়ে বাদীর ভাই ও মামলার ১ সাক্ষী মোঃ আবুল কামাল কাছে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করলে তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করে। মোঃ আবুল কামাল ২ থেকে ২৫ নং আসামীগনের কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করিলে ২ নং আসামী উবাইদুল্লাহ হক সিদ্দিকী ওসিকে ফোন দিলে তিনি পুলিশ ফোর্স নিয়া কোম্পানীগঞ্জ নগরপাড় সিএনজি ষ্টেশনে এসে মোঃ আবুল কামালকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এই ঘটনার খবর পেয়ে বাদী মোঃ মাহাদী হাসান লোকজন নিয়া মুরাদনগর থানায় উপস্থিত হইয়া ওসিকে তার ভাইকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করে। তখন ওসি বাদীর কাছে এক লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করে। বাদী ঘুষ দিতে অস্বীকার করিলে ওসি তাকে হুমকী প্রদান করে। স্থানীয় জনগন মোঃ আবুল কামালকে আটক করার বিষয়ে জানার জন্য মুরাদনগর থানায় উপস্থিত হইয়া তাকে মুক্তি দিতে অনুরোধ করিয়া থানায় অবস্থান নিলে ওসি ষড়যন্ত্র শুরু করে। ওসি স্থানীয় সাধারণ জনগনকে হয়রানী করার উদ্দেশ্যে এবং বর্তমানে সরকার বিরোধী কার্যক্রম হিসাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চিত্র দেখানোর লক্ষ্যে ২ থেকে ২৫নং আসামীগনকে উসকানী এবং নিদের্শনা দিয়ে মুরাদনগর থানা চত্ত্বরে পরিকল্পিত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ওসির নিদের্শনায় এবং প্রত্যক্ষ মদদে ২ থেকে ২৫নং আসামীগন মুরাদনগর থানা চত্ত্বরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং থানার হ্যান্ড মাইক নিয়া নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা ৪নং আসামী সাজিদ উসকানীমূলক বক্তব্য দিয়া মব সৃষ্টি করিয়া মুরাদনগর থানা চত্ত্বরে ভাংচুর চালায়। ওসি বর্তমান সরকার বিরোধী কার্যক্রমের অংশ হিসাবে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি ক্রম অবনতিশীল দেখানোর উদ্দেশ্যে ২ থেকে ২৫ নং আসামীগনকে নিয়া থানা চত্ত্বরে মব সৃষ্টি করিয়া বাদী সহ স্থানীয় জনগনকে/সাধারণ জনতাকে এলোপাথরী পিটাইয়া জখম করে। এছাড়া ২ থেকে ২৫ নং আসামীগন থানা হাজতে থাকা মোঃ আবুল কামালকে কিল-ঘুষি, লাথি দিয়া জখম করে।

আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক  বলেন, মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মুরাদনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান  বলেন, মামলার বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনো কোনো কাগজ পায়নি। মামলা হলে আইনি মোকাবিলা করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে  কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁনের মুঠোফোনে একাধিক বার কল করেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।