রাজনীতি থেকে একদম অব্যাহতি নিয়েছি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্য পদ থেকেও অব্যাহতি নিয়েছি।আর রাজনীতি করব না -আদালতে কামাল মজুমদার

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ সপ্তাহ আগে

‘মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর রাজনীতি না করবেন না’ মর্মে আদালতে জানিয়েছেন সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও ঢাকা- ১৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার।আজ সোমবার ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট একটি মামলায় তার গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানিকালে বিচারকের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাফরুল থানার সাব-ইন্সপেক্টর জুয়েল ইসলাম এদিন কামাল আহমেদ মজুমদারসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন।

অপর আসামিরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, কামরুল ইসলাম, শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক দুই আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক এবং চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

শুনানিকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র কাফরুল থানায় আতিকুল ইসলাম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।

শুনানিকালে কামাল আহমেদ মজুমদার আদালতকে বলেন, ‘আমি কিছু বলব।’এরই মাঝে মোহাম্মদপুর থানার আরেক হত্যা মামলায় আনিসুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। আদালত আনিসুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।

এরপর বিচারক কামাল মজুমদারকে বলেন, আপনি কিছু বলবেন? উত্তরে হ্যা বললেন তিনি।

আদালত অনুমতি দিলে কামাল মজুমদার বলেন, ‘আমার ৭৬ বছর বয়স। আমার চোখে সমস্যা। ৭০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। কারাকর্তৃপক্ষ ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্র দিচ্ছে না। কোরআর বা ডিজিটাল কোরআনও দিচ্ছে না। একের পর এক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছি। আপনার কাছে আবেদন, ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্র দেওয়ার যেন অনুমতি দেওয়া হয়। পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। কী অবস্থায় আছে তাও জানি না।’

তিনি বলেন, ‘আমার বয়স ৭৬ বছর। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর রাজনীতি করব না। আপনার (আদালত) কাছে সুবিচার চাই, প্রার্থনা করছি। একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে। একের পর এক নির্যাতন করা হচ্ছে। এ বয়সে নাতি-নাতনীদের সঙ্গে খেলার সময়। এই বয়সে আমার ওপরে জুলুম চালানো হচ্ছে। আল্লাহকে ডাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আছি কারাগারে। আপনার কাছে অনুরোধ, কারাগারে ডায়াবেটিস চেক করার জন্য ডিজিটাল কোনো যন্ত্র বা ওষুধ দেওয়া হয়। পবিত্র কোরআন শরীফও যেন দেওয়া হয়।’

আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না বলেও অভিযোগ করেন সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী। এ সময় বিচারক বলেন, আপনার সবগুলো দাবি আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করুন। পরে আদালত এজলাস থেকে নেমে যান।

শুনানি শেষে আদালত থেকে ঢাকা সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশ সদস্যদের কামাল মজুমদার বলেন, ‘কথাও বলতে দিচ্ছেন না।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি থেকে একদম অব্যাহতি নিয়েছি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্য পদ থেকেও অব্যাহতি নিয়েছি। আর কোনো দলীয় পদে নাই। অব্যাহতি নিয়েছি বলতে পারেন। আজকে থেকে অব্যাহতি। আর রাজনীতি করব না। কারাগার থেকে আর রাজনীতি করব না।’

কামাল মজুমদার বলেন, ‘এদেশে রাজনীতি করার কোনো পরিবেশ নেই। ৭৬ বছর বয়স। এ বয়সে রাজনীতি করার করা সম্ভব না। যার কারণে রাজনীতি থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। আমরা চাই, নতুন যুব নেতৃত্ব আসুক।’পরে তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই বিকেলে রাজধানীর কাফরুল থানাধীন বিআরটিএ অফিসের পেছনের রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হন আতিকুল ইসলাম। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় গত ২৩ ডিসেম্বর তার স্বজন ব্যবসায়ী আহসান হাবীব রাজধানীর কাফরুল থানায় হত্যা মামলা করেন।মামলায় আনিসুল হক ৪ নম্বর, সালমান এফ রহমান ৬, কামরুল ইসলাম ৮, কামাল আহমেদ মজুমদার ১০, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ১১, শহীদুল হক ২৭ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি।