আজ আমি নিজের, কিংবা পরিবারের বা কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠির পক্ষে কথা বলছি না। কথা বলছি, মা, মাটি ও দেশের স্বার্থে । যেই দেশকে স্বাধীন করতে এদেশের হিন্দু,মুসলমান,বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ দেশের অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোও যুদ্ধ করেছিল, জীবন দিয়েছিল, মা-বোনেরা সম্ভ্রম হারিয়েছিল।
তাই আজ দেশের ঘোর বিপদের দিনে দেশ প্রেমিক সনাতন ধর্মের ভাই-বোনদের কাছে কিছু কথা বলতে এসেছি। এ বাংলাদেশ এ লাল সবুজের পতাকা এ প্রিয় দেশটি পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করতে মুসলিম, হিন্দু , বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, পাহাড়ি, বাঙ্গালী সকলে রক্ত দিয়েছেন, জীবন দিয়েছেন। তারই বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশ পেয়েছেন। এ দেশ স্বাধীনতার জন্য কোন একক ধর্মের কিংবা ব্যাক্তির কৃতিত্ব নেই। এ কৃতিত্¦ কতিপয় পথভ্রষ্ট ছাড়া তৎকালীন সাড়ে ৭ কোটি বাংলাদেশের মানুষের কৃতিত্ব।
কিন্তু আজ আমরা দেখছি গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর আমাদের পার্শবর্তী কথিত বন্ধু রাষ্ট্র ভারত একের পর এক ষড়যন্ত্র, হিংসা, বিদ্বেষ ছড়িয়ে যাচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সেই দেশের সকল মিডিয়া একের পর গুজব ও অপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় তিনি তার বিধান সভায় দাঁড়িয়ে বলেছেন বাংলাদেশের হিন্দুদের উপরে নাকি অত্যাচার নির্যাতন হচ্ছে । এমন মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ কথা বলে তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, যাতে জাতিসংঘের কাছে অনুরোধ করে বাংলাদেশে শান্তি রক্ষা বাহিনী প্রেরণের জন্য।
ছি: ছি: ছি মমতা বন্দোপাধ্যায় । আপনার মতো একজন জাঁদরেল রাজনীতিবিদ কিভাবে এতবড় মিথ্যা কথা বলতে পারলেন। আপনাদের গোয়েন্দা সংস্থা থেকে কি কোন খবর নিয়েছেন আপনি। আপনাদের উগ্রবাদী হিন্দুত্বের দল বিজেপির মতো সুর মিলিয়ে আপনি এত বড় মিথ্যা কথা বলতে পারলেন। তাহলে কি আমরা ধরে নিব , আপনি শুধু ভোটের কারণেই পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের তোয়াজ করেন। আপনি বাংলাদেশের আপনার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের জিজ্ঞাসা করে দেখেন, আপনার মিথ্যা এবং অর্বাচিনের মতো কথায় শুধু মানুষ না,ঘোড়ায়ও হাসে।
আমি কুমিল্লাসহ বাংলাদেশের দেশ প্রেমিক সনাতন ধর্মের ভাই- বোনদের বিবেকের কাছে অনুরোধ করছি , আপনারা মা কালীর দিব্যি নিয়ে বলেন, সত্যিকার অর্থে কি বাংলাদেশের মুসলিম সমাজ কি আপনাদের উপরে অত্যাচার নির্যাতন করছে ? আপনাদের বাসা বাড়িতে কি কেউ আগুন দিয়েছে ? গত ৫ আগষ্টের পর বিচ্ছিন্ন দুই একটি ঘটনা যে ঘটেনি তা আমি বলবো না । এমন দুই একটি ঘটনা সব সরকারের আমলেই হয়ে থাকে । এটাও নিন্দনীয় এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আবার এটাও ঠিক, অনেক স্থানে কিন্তু ধর্মীয় নয় রাজনৈতিক কারণে সমস্যা হয়। যেটা কোন ভাবেই ধর্মীয় দিক দিয়ে বিবেচনা করা ঠিক হবে না। কিন্তু ভারত রাষ্ট্রীয় ভাবে যেভাবে হিংসা উসকে দিচ্ছে সেটা কি আপনারা গ্রহণ করেন। যদি না করেন, তাহলে মুখ খুলুন, প্রতিবাদ করুন।বাঘের মতো গর্জন করে বলুন, হে উগ্রবাদী হিন্দুত্ব রাষ্ট্র ভারত,তোরা ধর্ম নিরপেক্ষতার মিথ্যা ভুলি না আওড়ায়িয়ে নিজের চড়কায় তেল দে, তোমাদের দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষা কর।
আমার প্রিয় হিন্দু ভাই-বোনদের পবিত্র বিবেকের কাছে প্রশ্ন রেখে বলছি, গত দূর্গাপূজায় এ দেশের মুসলিম ভাইয়েরা কি আপনাদের মূর্তি, মন্দির পাহারা দেয়নি ? তারা কি আপনার ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে সহযোগিতা করেনি ? বাংলাদেশের বর্তমান সরকার কি আপনাদেরকে কোন সহযোগিতা করেনি ? সরকারের পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াতসহ সকল রাজনৈতিক দল এবং মত মিলে কি আপনাদেরকে সহায়তা করেনি ? যদি করে থাকে, তাহলে রাজপথে নামুন, প্রতিবাদ করুন, মানববন্ধন করুন, সংবাদ সম্মেলন করুন। ভারতকে জানিয়ে দিন, ওরে উগ্র, তুই এবার শান্ত হ্ । ভগবানের দিকে তাকা। গত ১৬ বছর তুমি যেভাবে এদেশের অনিষ্ট করেছে আর করিওনা । বাংলাদেশের নাগরিকদের তাদের মতো থাকতে দাও। তুমি মোড়লগিরি বাদ দাও হে ভারত।
৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস স্যার দায়িত্ব নিয়েই বলেছেন, বাংলাদেশে কোন
সংখ্যালঘু কিংবা কোন সংখ্যাগরিষ্ট কোন লোক নেই। আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আমাদের জাতীয়তা বাংলাদেশী। পরে সব দল ও মত একই কথা বার বার বলে আসছে। কিন্তু আজ যেভাবে ভারতে হিংসা ছড়ানো হচ্ছে তা আমাদের দেশের বিরুদ্ধে কঠোর ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।
গত ২ ডিসেম্বর ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের হাই কমিশনের অফিসে হামলা করেছে ভারতের উগ্রবাদী হিন্দুরা, পুড়িয়ে দেওযা হয়েছে আমাদের আবেগ ৩০ লক্ষ শহীদ এবং ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া লাল সবুজের পূত পবিত্র জাতীয় পতাকা।
আমি বাংলাদেশের সকল দেশ প্রেমিক হিন্দু ভাই-বোনদের সুস্থ বিবেকের কাছে আবারো প্রশ্ন করতে চাই, আপনারা কি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় , ভারতের সরকার এবং ভারতের মিডিয়ার এ উসকানিমূলক মিথ্যা, হিংসাত্¦ক কথা সমর্থন করেন ? যদি সমর্থন করেন তাহলে প্রমান দিন,কথা দিচ্ছি, আমি কলম ধরব সরকারের বিরুদ্ধে। আর যদি সমর্থন না করেন , তাহলে আজই সংবাদ সম্মেলন করে বলুন, ভারত যা বলছে তা সঠিক না। মিথ্যা ও বানোয়াট।
দেশের প্রতিটি সীমান্ত এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করুন। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে আপনারা রাজপথে নেমে আসুন এবং প্রতিবাদ করুন । ভারতকে বলুন , ভারত তুমি আমার দেশ না। নরেন্দ্র মুদি তুমি আমাদের প্রধানমন্ত্রী না । মমতা কন্দোপাধ্যায় তুমি আমাদের মূখ্যমন্ত্রী না। আমার দেশ বাংলাদেশ। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রুপসা থেকে পাথুরীয়া আমার দেশ। আমি আমার এ দেশ নিয়ে গর্ব করি। আমরা তোমাদের এ ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা কথাবার্তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এ দেশের জন্য প্রতিবাদ করে গর্ব করে বলুন আমরা এ দেশে নিরাপদ আছি।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে বলব,এই দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে আপনারা নেতৃত্ব দিয়েছেন এই অমোঘ সত্যটি অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। একই সত্য অস্বীকার করা যাবে না যে, গত ১৬ বছর দেশকে আপনারা এক অন্ধকার জগতে ঠেলে দিয়ে গেছেন। দিনের ভোট রাতে করে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছেন। দেশের প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন। লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা দেশের বাহিরে পাচার করে দেশের গোটা অর্থনীতিকে বারোটা বাজিয়ে দিয়ে গেছেন। ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখার জন্য দেশকে ভারতের খেলার পুতুল বানিয়েছেন। যার কারণে আপনাদের পতনের পর ভারত পাগলা ঘোড়ার মতো অসহিঞ্চু আচরণ করছে। তারা ভেবে পাচ্ছে না, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার আপনাদের মতো তাদের খেলার পুতুলে পরিণত হবে, না-কি আত্মমর্যাশীল জাতিতে পরিণত হবে। এই ভাবনায় তারা পাগল হয়ে গিয়ে কুটনীতিক শিষ্টাচার ভুলে গিয়ে মিথ্যা প্রপাজ্ঞান্ডায় মেতে উঠেছে। প্লিজ, ভুল যা করার করছেন গত ১৬ বছর। আর ভুল কইরেন না। দেশের বারোটা বাজিয়েন না। দেশে এখনো বিএনপি-আওয়ামীলীগের বাহিরে তৃতীয় দল গড়ে উঠেনি, যে তারা একক ভাবে ক্ষমতায় আসতে পারবে। ভবিষ্যতের সুযোগটি নষ্ট করবেন না, বর্তমানে ভারতকে দেশ বিরোধী কাজে সহায়তা করে।
সর্বশেষ আমি দেশ প্রেমিক সনাতন ধর্মের ভাই-বোনদের কাছে অনুরোধ করে বলবো, প্লিজ আপনারা আর চুপ থাকবেন না। আপনারা কথা বলুন। কারণ এ দেশ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। আমার , আপনার প্রিয় স্বাধীন সার্বভৌম দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। আমার দেশকে ভারতের কাছে পুতুল হতে দিতে পারি না। আসুন, দেশকে ভালবাসুন, দেশের পক্ষে কথা বলুন, বহি:বিশে^ দেশের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করুন।