সেশনজটে ভুক্তভোগী, কুবির তিন বিভাগের শিক্ষার্থীরা

নাজমুস সাকিব ।।
প্রকাশ: ১ বছর আগে

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের (১১তম ব্যাচ) বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তরের শেষ পর্যায়ে চলে আসলেও, এখন পর্যন্ত স্নাতক পর্ব’ই শেষ করতে পারেনি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এবং বিজ্ঞান অনুষদের রসায়ন ও ফার্মেসী বিভাগ। দেখা যায় সেশন জটের কারণে চার বছরের স্নাতক (সম্মান) শেষ করতে লেগে যাচ্ছে অনেক সময়, যা একজন শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার ও চাকরি জীবনে অনেক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। পাশাপাশি একই শিক্ষাবর্ষের হয়েও অন্যান্য বিভাগ থেকে পিছিয়ে পড়ায় হতাশায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে জট
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের পরীক্ষা ২০২২ সালের জুলাই মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও দুইমাস পিছিয়ে পরীক্ষাটি শেষ হয় একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর।

শিক্ষার্থীরা বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় আমরা অনেকটা পিছিয়ে পড়েছি। এখন আবার রেজাল্ট প্রকাশ করা নিয়ে শুরু হয়েছে গড়িমসি। বিভাগে যোগাযোগ করা হলে আমাদের আজকে কালকে রেজাল্ট দিবে বলে বলে কাল ক্ষেপণ করছে।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা সেশনজট নিরসনে বিভিন্ন সময় আন্দোলন করলেও এর স্থায়ী সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিভাগটি। উল্টো আন্দোলন করার অভিযোগে শিক্ষার্থীদের নম্বর কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় সেই শিক্ষককে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার জন্য চিঠি পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন বলেন, আমাদের রেজাল্ট এর কাজ প্রায় শেষের দিকে আমরা খুব শীগ্রই প্রকাশ করবো। আমরা আসলে শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার শেষে তাদের নিয়ে অ্যাসাইনমেন্টের কাজে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান নিয়ে গবেষণার কাজে যাই৷ আমরা সবসময় আমাদের শিক্ষার্থীদের কোয়ালিটি শিউর করার চেষ্টা করি। এমনকি আমরা ২০১৬-১৭ সেশনের ব্যাচটির ১৩ মাসে ৪ টি সেমিস্টার নিয়েছি। আমরা খুব দ্রুত তাদের এগিয়ে আনার চেষ্টা করেছি।

রসায়ন বিভাগে জট
রসায়ন বিভাগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক শেষ বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয় ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। কিন্তু এতোদিনেও রেজাল্ট প্রকাশিত হয়নি।

এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের সঠিক সময়ে শেষ হওয়ার কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা আছে বলে মনে হয় না। আমাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে তামাশা করা ছাড়া কিছুই দেখছি না৷

শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, করোনার প্রকোপ, শিক্ষকদের তদারকির অভাব, মাঠকর্ম-ভাইভা গ্রহণে ধীরতা, ইন্টার্ন ছাড়া পরীক্ষার ব্যবস্থা না করা, ফলাফল প্রকাশে ধীরতা, সব শিক্ষকদের একসাথে কোর্স শেষ না করা, শিক্ষকদের সামঞ্জতার অভাব ইত্যাদি কারণে সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চার বছরের স্নাতক সম্পন্ন করতে শিক্ষার্থীদের লাগছে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় বছর। আর ৫ বছরের স্নাতক সম্পন্ন করতে লাগছে ছয় থেকে সাত বছর।

রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. রায়হান উদ্দিন বলেন, আমরা কিছুদিনের মধ্যে রেজাল্ট পাবলিশ করবো। আমরা ল্যাব সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট হওয়ার কারণে আমাদের একটু সময় লাগছে। এরচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমাদের ১৫ জন শিক্ষক এর মধ্যে ৮ জন বর্তমানে ডিপার্টমেন্টে আছি। আমাদের ডিপার্টমেন্টে একজন কর্মচারী-কর্মকর্তা নাই আমাদের ফাইলগুলো রেডি করার জন্য কেউ নেই। রেজাল্ট এর কাজ মোটামুটি রেডি, আমরা খুব শীগ্রই রেজাল্ট প্রকাশ করবো। আমরা ভিসি স্যারকে বিষয়গুলো বলেছি ভিসি স্যার বলছে ইউজিসি’র একটা লিমিটেশন থাকার কারণে যথাযথ নিয়োগ দিতে পারছে না। তারপরও আমরা আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছি।

ফার্মেসী বিভাগ
প্রত্নতত্ত্ব ও রসায়ন দুই বিভাগ থেকেও বেহাল অবস্থায় কুবির ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থীদের। স্নাতকের শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি। অথচ ফার্মেসী বিভাগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক শেষ করার কথা ছিল ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে।

এ বিষয়ে ফার্মেসী বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আপনারা জানেন আমাদের ৫ বছরে স্নাতক। আমাদের একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং আছে যেটি ফোর্থ ইয়ার সেকেন্ড সেমিস্টারে হয়ে থাকে যেটি ৩ ক্রেডিটের। আমরা এর জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের স্বনামধন্য কোম্পানিগুলোতে ট্রেনিং এ প্রেরণ করি। কিন্তু আমরা সবসময় আবেদন করলেও কোম্পানিগুলে আমাদের সময় দেন না। এরপরও আমরা চেষ্টা অব্যাহত রাখি। আমাদের শিক্ষার্থীরা ঐ ট্রেনিং এ বেশি পিছিয়েছে তারপরও আমরা চেষ্টা অব্যাহত রাখছি। আর আমাদের ১৩ জন শিক্ষকের মাঝে ৮ জন শিক্ষক বর্তমানে আছে। কিন্তু আমাদের ৬ টা ব্যাচ রানিং শিক্ষক সীমিত হওয়ার কারণে এই সমস্যায় ভুগছি। আমরা খুব দ্রুত তাদের রেজাল্ট প্রকাশ করবো।

উল্লেখ্য, ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় কারণ জানতে চাইলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় জনবল কম রয়েছে। জনবলের তুলনায় কাজের চাপ বেশি হওয়ায় কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়। এছাড়াও দ্বিতীয় পরীক্ষকের থেকে খাতা আসতে দেরি হওয়ার কারণেও ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হয়ে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের তথ্যমতে, ৮ থেকে ১০ সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল তৈরি করতে বলা হলেও বিভাগগুলোতে মানা হয় না সে নিয়ম। নিজেদের ইচ্ছে মতো চলছে পরীক্ষা কার্যক্রম।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ- উপাচার্য অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির বলেন, আমি প্রত্যেকটা বিভাগের খোঁজ খবর রাখছি। তবে এই বিষয়ে তাদের সাথে আমার কোন মিটিং হয় নাই। যে যে বিভাগ গুলোতে সেশনজট আছে সেই বিভাগের প্রধানদের সাথে আলোচনা করে এই বিষয়ে সমাধান করার চেষ্টা করবো।

একই বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, আমি বিভাগীয় প্রধানদের সাথে কথা বলে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবো।