আর নয় নকল, এবার কুমিল্লার মাঠে চাষ হচ্ছে আসল মিনিকেট চাউল !

# জেলার ১৭ উপজেলার ১৮ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে # সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বিদেশে রপ্তানী করার # খড় হিসেবেও লাভজনক # কৃষকরা মুখে মিনিকেটের হাসি!
আবদুল্লাহ আল মারুফ ।।
প্রকাশ: ২ years ago

কুমিল্লার ১৭ উপজেলার ১৮ হেক্টর জমিতে এবার চাষ হচ্ছে বিনা ধান ২৫। যা থেকে পাওয়া যাবে আসল মিনিকেট চাউল। এবারই প্রথম কুমিল্লায় এ ধান চাষ হচ্ছে। ধানের গাছ লম্বা হওয়াতে গরুর খড় হিসেবেও এটি বেশ উপযোগী। ভবিষ্যতে এ চাউল বিদেশেও রপ্তানী করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমান।

সারাদেশে মিনিকেটের নামে যা মানুষকে খাওয়াচ্ছে তার পুরোটাই ধোকা। মূলত সাধারণ মোটা চাউলকে বিভিন্নরকম প্রক্রিয়াজাত করে সেগুলোর আকৃতির পরিবর্তন করা হয়। এবং তারপর মানুষকে সেই চাউল মিনিকেট বলে খাওয়ানো হয়। তবে আর নকল মিনিকেট নয়। এবার কুমিল্লা থেকে আসল মিনিকেটের চাষ হবে। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী এই ধান দেশের জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখতে পারে।

বৃহম্পতিবার (২৭ এপ্রিল) কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার কুন্দারঘোড়া এলাকায় আয়োজিত কৃষক সমাবেশে বিনা ধান ২৫ সম্পর্কে বলতে গিয়ে এসব কথা বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমান।

এসময় কান্দারঘোড়া এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠ জুড়ে দুলছে বিনা ধান ২৫। যাকে স্থানীয় কৃষকরা বলছেন আসল মিনিকেট! এই ধানের চাল মিনিকেটের মতো চিকন। স্বাদ ভালো। এর দাম তুলনামূলক ভালো হওয়ায় কৃষকরা এই ধান চাষে ঝুঁকছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লা ও বিনা কুমিল্লা উপকেন্দ্রের সূত্রে জানা যায়, বাজারে মিনিকেট বলে চিকন চাল দেখা যায়। এটি মূলত মোটা চাল কেটে চিকন করা হয়। এতে পুষ্টি বঞ্চিত হন ভোক্তারা। বিনা ধান ২৫ এর চাল মিনিকেটের মতো চিকন ও লম্বা। এবার কুমিল্লার ১৭উপজেলার ১৮ হেক্টর জমিতে প্রথম এই জাতের ধান চাষ করা হয়। বোরো মৌসুমের অন্য ধান থেকে এর ফলন ভালো। সার ও সেচ কম লাগে। জীবনকালও কম। দাম বেশি হওয়ায় এই ধান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কুমিল্লার কৃষকরা। এছাড়া এই ধানের রোগ-বালাইও কম।

সদর দক্ষিণ উপজেলার কুন্দারঘোড়া গ্রামের কৃষক আবু বকর শিবলী ও আবুল কালাম আজাদ বলেন, অন্যবার ধানে ব্লাস্ট রোগ হয়েছিল। তবে এবার বিনা ধান ২৫ করেছি। রোগ হয়নি। ভালো ফলন পেয়েছি। চিকন ধান নিজেরা খেতে রাখতে চেয়েছি। ফলন ভালো দেখে অন্য কৃষকরা বীজ চাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত নিজেরা মনে হয় রাখতে পারবো না। আগামী বছর আরো বেশি জমিতে এই ধান চাষ করবো।

স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাহিদা খাতুন বলেন, ২৮ ও ২৯ জাতের ধান প্রতি হেক্টরে ৫-৬টন হতো। এবার বিনা ধান ২৫ প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ৭টন। ফলন দেখে খুশি আমার ব্লকের কৃষকরা।

বিনা কুমিল্লা উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. আশিকুর রহমান বলেন, ব্লাস্টসহ বিভিন্ন রোগে বোরো মৌসুমের ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছিলো। এনিয়ে কুমিল্লার কৃষকরা চিন্তিত ছিলেন। বিনা ধান ২৫ নতুন জাতের ধান। এটি এবার কুমিল্লার মাঠে চাষ করা হয়েছে। দেখা গেছে এতে ব্লাস্ট আক্রমণ করতে পারেনি। কম সময়ে,কম সেচ ও সারে এটির ভালো ফলন হয়েছে। এদিকে কুমিল্লার মানুষ সৌখিন। তারা চিকন চাল খেতে পছন্দ করেন। তাই এটি এই এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমান বলেন, এবার কুমিল্লার ১৭উপজেলার ১৮ হেক্টর জমিতে প্রথম এই জাতের ধান চাষ করা হয়। এটির ফলন প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। এটির গাছ শক্ত হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়ও ভূমিকা রাখবে। এটি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ধান। যা বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। গাছ লম্বা হওয়ায় এটি থেকে কৃষক বেশি খড় পাচ্ছেন। গবাদি পশুর জন্য খড় পেয়ে খুশি কৃষকরা।