অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন আদর্শ সদরের ইউএনও- এসিল্যান্ড

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৭ মাস আগে

খুব অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেন কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদি হাসান। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লা গোমতী নদীর উত্তর পাড়ের বানাশুয়া অংশে বাঁধ রক্ষাকারী এলাকার বিক্ষুদ্ধ জনগণের কবলে পড়েছিলেন তারা। এ সময় সরকারে এই দুই কর্মকর্তার সাথে জনগনের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। পরে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক হাজী আমিন উর রশীদ ইয়াছিন ঘটনার ভয়াভহতা জানতে পেরে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। পরবর্তী পর্যায়ে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির তরুণ নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার জেলা যুবদল নেতা সোহেল ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদসহ অন্যান্যদেরকে ফোন দিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভুমি কর্মকর্তাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এ সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুবি নেতৃবৃন্দও উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখেন।
স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ ও কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার(২২ আগস্ট) দিবাগত রাত ১১টার দিকে সরেজমিনে গোমতীর বাঁধ ও বন্যা পরিস্থিতি দেখার জন্য তিনি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসানকে সাথে নিয়ে প্রথমে বিবির বাজারের দিকে যান। তিনি এদিক পরিদর্শন করতে করতে রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে গোমতী নদীর উত্তর পাড় বানাশুয়া এলাকায় আসেন। ঠিক এমন সময় গোমতী নদী দিয়ে সজোরে চালিয়ে সেনাবাহিনী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি স্পীড বোর্ড বুড়িচং উপজেলার দিকে যাচ্ছে। তখন বাঁধের উপর প্রায় হাজারের মতো জনতা ছিল। একই সময় সেনা বাহিনীর স্পীড বোর্ড নদীতে আর ইউএনও বাঁধের উপর এতে স্থানীয়রা মনে করছে বাঁধ ভেঙ্গে দিতেই এই আয়োজন। তারা স্পীড বোর্ডকে লক্ষ করে ঢিল ছোঁড়া শুরু করল একই সাথে মোবাইলে এবং মাইকে ঘোষনা দিল, আমাদের বাঁধ ভাঙ্গতে এসেছে। যার যা আছে তা নিয়ে বাঁধে আসুন। এ ঘোষণা শুনে মুহুর্তের মধ্যে প্রায় ৫ হাজার জনতা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাঁধে আসে। এবং মুহুর্তের মধ্যে ইউএনও ও ভূমি কর্মকর্তাকে মারার জন্য উদ্যোত্ত হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে গেলে ইউএন’র গান ম্যান আনসার সদস্য প্রবল স্্েরাতের মধ্যে গোমতী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মরক্ষা করেন। এ সময় গাড়ি চালককে বেধরক মারধর করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তখন জীবন বাঁচাতে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক হাজী আমিন উর রশীদ ইয়াছিন সাহেবকে জানালে তিনি দ্রুত নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন স্থানীয় জনতাকে নিবৃত্ত করে ইউএনও এবং এসিল্যান্ডকে মুক্ত করার জন্য। একই সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ খবর পেয়ে কুবি নেতৃবৃন্দকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। পরে কুবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা রাশেদ, রুবেল ও নাইমসহ নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় যুবদল নেতা সোহেল, ছাত্রদল নেতা তোফায়েলসহ বিএনপি ,যুবদল ও ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ ঝুঁকি নিয়ে একটি মোটর সাইকেলে করে ইউএনও কে ছত্রখীল পুলিশ ফাঁড়িতে ও এসিল্যান্ডকে একটি ঘরে নিয়ে রাখেন। ফাঁড়ির ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুবি নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ ফাঁড়িতে ইউএনও কে এবং ঐ ঘরে এসিল্যান্ডকে পাহাড়া দেন। এ সময় সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসক সার্বক্ষনিক ঘটনার খোঁজ রাখেন এবং উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।

পরবর্তীতে সবার যৌথ চেষ্টায় স্থানীয় উত্তেজিত জনতাকে বুঝাতে সক্ষম হন যে, ইউএনও বাঁধ ভাঙ্গতে আসেনি । তিনি এসেছেন বাঁধ রক্ষা করতে। আর ঐটা সেনাবাহিনীর স্পীডবোর্ড কি না এটাও তিনি জানেন না। পরে ভুল বুঝাবুঝির অবসান হলে রাত ৩টায় ইউএনও ও সাড়ে চারটায় এসিল্যান্ডকে মোটরসাইকেলে করে নিরাপদে শহরে পৌঁছিয়ে দেন বিএনপি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। গতকাল শুক্রবার সকালে গাড়ি দুটিও পৌঁছে দেওয়া হয়।
এদিকে , ইউএনও ও এসিল্যান্ডকে বাঁচাতে গিয়ে মারাত্মক আহত হন সোহেল, নাঈম মজুমদার ও লিংকন নামে তিন যুবক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা উপরের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে প্রাণে বেঁচে যাওয়াটা স্রষ্টার বিশেষ উপহার ছাড়া অন্য কিছু নয়। প্রায় ৫ হাজার বিক্ষুদ্ধ জনতা যেভাবে মেরে ফেলার জন্য চর্তুদিকে ঘিরে ধরছিল , সে সময় মনে হচ্ছে আজই আমার জীবনের শেষ দিন। শেষ পর্যন্ত কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক এমপি হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াছিন সাহেবের তাৎক্ষনিক ভুমিকা, সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নজরধারী, বৈষম্য বিরোধী কুবির ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, ছত্রখিল ফাঁড়ির আইস আমিনুল ইসলাম ও স্থানীয় বিএনপির কিছু নেতৃবৃন্দদের কারণে আল্লাহ আমাকে নতুন জীবন দান করেছেন। এই রাত আমার জীবনে আজীবন দুর্বিষহ রাত হিসেবে থাকবে।
এ ব্যাপারে মামলা করবেন কিনা জানতে চাইলে উপজেলার নির্বাহী অফিসার রোমান শর্মা বলেন, এখানে তো প্রায় ৫ হাজার মানুষ ছিল। আমি এত হাজার হাজার জনতার বিরুদ্ধে মামলা করব না। তবে যারা আহত হয়েছে তারা মামলা করবে কিনা আমি জানি না।