কুমিল্লার তিতাস উপজেলার সাগরফেনার এলাকার দুই সন্তানের জননী জান্নাতুল ফেরদৌস (২৫) নামে এক নারীক অপহরণ করা হয়েছিল বলে দাবি করেছে তার পরিবার। কিন্তু তার ছোট বোন রাবেয়া বলছে বড় বোন জান্নাতুল ফেরদৌসের সাথে মেসেঞ্জারে চ্যাটিং হলে আপু বলে আমি সিম চ্যাঞ্জ করছি এবং একজনের সাথে কক্সবাজার আছি। তাহলে কি পরিবারের অপহরণের অভিযোগটি সাজানো নাটক! তবে ঘটনা যাই হোক সেটা স্পষ্ট করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। জান্নাতুল ফেরদৌস উপজেলার সাগরফেনা গ্রামের জামাল সরকারের মেয়ে।
জানা যায়, গত ৫ সেপ্টেম্বর তিতাসের সাগরফেনা এলাকা থেকে জান্নাতুল ফেরদৌস নামের দুই সন্তানের জননী নিখোঁজ হয়। পরে এ নিখোঁজের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাশের বাড়ির এক প্রবাসী তারেক মাহমুদ মুন্না ও তার পরিবারের আরও ৬ জনের নামে অপহরণ মামলা করেছে জান্নাতুল ফেরদৌসের মা হালিমা বেগম। নিখোঁজ জান্নাতুল ফেরদৌস ও প্রবাসী তারেক মাহমুদ মুন্না উভয়ের পিতা সম্পর্কে ফুফাতো ভাই। পারিবারিক বিরোধের জের ধরে এই ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। নিখোঁজ জান্নাতুল ২০১৪ সালে তিতাস উপজেলার কানাইনগর গ্রামে হান্নান নামের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। সেই সংসারে ২ টি ছেলে সন্তান-ও রয়েছে। এ সংসার চলাকালীন সাগরফেনা গ্রামের আরিফুল, উলুকান্দির সাদ্দাম, গাজীপুরের হানিফ ও আহমেদ শাকিল, গৌরীপুরের ইয়াকুব, কানাইনগর হামিম ও সিয়ামদের সাথে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। এদের পরকিয়ার বিষয়ে তিতাসের স্থানীয় এমকে টিভি নামে একটি পেইজের কর্তৃপক্ষের নিকট আছে বলে আবুল কাশেম নামের এক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেয়। এ মামলার ৭জন বাদেও এদের বিষয়ে প্রশাসনের তৎপরতা নেই বলেও তিনি অভিযোগ করেন। এতগুলো সম্পর্কের জেরেই কি জান্নাতুল নিখোঁজ নাকি সত্যি-সত্যি তাকে অপহরণ করা হয়েছে, এ নিয়ে জনমনে চলছে প্রশ্ন।
মামলার ঘটনা ও অপহরনের বিষয়ে মা হালিমা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, আমার মেয়েকে মেরে ফেলে চরকুমুরিয়া নদিতে ভাসাইয়া দিছে মুন্না। লাশের বিষয়টি কিভাবে শিউর হলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মানুষ বলছে এখানে লাশ ভাসতে তারা দেখছে। এছাড়া আমাদের হাতে কোন প্রমাণ নেই। কোন প্রমাণাদি ছাড়া একটি পরিবারকে মামলা দিলেন! তখন তিনি বলেন, সর্বশেষ তাদের সাথে আমার মেয়ের ঝামেলা ছিলো, তাই সন্দেহ তাদেরকে করি, তাই মামলা দিয়েছি।
মামলার বিষয়ে প্রধান আসামি প্রবাসী তারেক মাহমুদ মুন্না বলেন, আমি প্রবাসে থাকি। ওইদিন ওই মেয়ের সাথে কোন কথা হয়নি। নাম্বার ট্রেকিং করলেতো হয়। আমি এ মেয়ের বিষয়ে কিছুই জানিনা। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকলে যে শাস্তি প্রশাসন দিবে সে শাস্তি মাথা পেতে নিব। আর এ মিথ্যা মামলা আমি প্রত্যাহার চাই। আমার মামা নাঈম জামিনে আসার পর আদালতে হাজিরা দিতে গেলে পুলিশ অহেতুক হয়রানি মূলক গ্রেফতার ও রিমান্ড দাবি করে। আর আদালত এ রিমান্ড নামঞ্জুর করে দেয়।
মামলার তদন্তকারী এসআই কাউছার বলেন, অপহরনের অভিযোগটি একটি ধূম্রজাল সৃষ্টি করে, আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে একটি অপহরণ মামলা হয়েছে। এটি তদন্তের জন্যই একটি মামলা হয়। মামলা হলেও তদন্ত ছাড়া মামলার কার্যক্রম শেষ হচ্ছেনা।
তিতাস থানার অফিসার ইনচার্জ মামুনুর রশিদ বলেন, মেয়ের বয়স কম হওয়াই আইনের বিভিন্ন ধারায় কিছু মামলা নিতে হয়। আমরা এখনো তদন্ত করছি। মেয়ের সাথে যদি পরিবারের যোগাযোগ হয় সেগুলোও তদন্ত করে আমরা কাজ করব।
কুমিল্লা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরাফাতুল ইসলাম বলেন, তদন্তের পর রহস্য উদঘাটন করা হবে। আমাদের একটু সময় দিতে হবে।