সরকারসহ সকল রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বলছি, রাত ৩টায় ডাকলেও সাংবাদিকদের কাছে পান। যেন, তাদের ব্যক্তিগত জীবন বলতে কিছুই নেই। পেশাদারিত্বের মর্যাদা সমুন্নত রাখার স্বার্থে, জনগণকে সর্বশেষ তথ্য দেওয়ার জন্য খেয়ে না খেয়ে, ঘুম ঘুম চোখকে সাথী করে ছুটে যাই রাজপথ কিংবা মেঠো পথে। অথচ, পান থেকে চুন খসলেই সাংবাদিকদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করেন। পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় পেশা হচ্ছে রাষ্ট্রের এই চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত সাংবাদিকতা। আমার এই রুটি রুজির পেশাটি এমন একটি পেশা, পক্ষে গেলে ভালো সাংবাদিক আর বিপক্ষে গেলে মুহুর্তেই খারাপ সাংবাদিকের তকমার ঢোল বাজিয়ে দেওয়া হয়।
সেদিন ঢাকা ৩২ এ লাইভ করতে গিয়ে আমার স্নেহভাজন ওমর ফারুকের উপর হামলে পড়ল কেউ কেউ। তার দোষ ছিল শুধু মাত্র একটি শব্দ। অথচ, এই শদ্ধটি বর্তমানে যারা সরকার পরিচালনা করছেন তারাও অহরহ বলছে। কিন্তু ঐ যে কথায় বলে, যত দোষ, নন্দ ঘোষ। সাংবাদিক ওমর ফারুক যে রাত জেগে টিভির পর্দার মাধ্যমে জনগণকে সর্বশেষ তথ্য গুলো বার বার জানাল, তার কোন স্বীকৃতি পেল না কোন মহল থেকেই।
গত ১৬ বছরে নিদারুণ নির্যাতিত হয়েছে গণমাধ্যম কর্মীরা। এখনো হবে, ভবিষ্যতেও হবে। আবার অতীতে নির্যাতনকারীরা কখনো ফিরে আসলে নির্যাতন করবে, এই হলো বাংলাদেশের সাংবাদিকতার পেশা।
আসলে গত তিন দশকের সাংবাদিকতা পেশার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, প্রকৃত অর্থে কোন সরকারই চায় না গণমাধ্যম নিজ পায়ে দাঁড়াক, গোলাপের ন্যায় আপন গুণে বিকশিত হোক। কোন রকম হস্তক্ষেপ ছাড়া স্বাধীন ভাবে তুলে আনুক সত্য ও ন্যায়ের কথা গুলো। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, ক্ষমতা না থাকলে এই নির্মম সত্যটি সবাই বুঝে এবং সমর্থন করে। কিন্তু যখন ক্ষমতায় আসে তখন তারা বেমালুম ভুলে যায় এই গণমাধ্যমই তাদের জনমত গঠনে সহায়তা করেছিল।
চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির ভোটার বিহীন নির্বাচন সম্পর্কে আমার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস নিয়ে আমার কিছু সুৃহৃদ বিরুপ মন্তব্য করেছেন আমাকে। যারা গত ষোল বছর আমাকে কুমিল্লার একমাত্র সাহসী, বীর, সৎ ও আদর্শবান সাংবাদিক হিসেবে অভিহিত করেছিল। তাদের দৃষ্টিতে পত্রিকার পাতায় আমার সময়ের কড়চা, মন্তব্য প্রতিবেদন, সংবাদ,টকশো ইত্যাদি তাদের জন্য সহায়ক শক্তি ছিল বলে কতবার ধন্যবাদ দিয়েছে, সুযোগ পেলেই চা না খাইয়ে আসতে দিতেন না। ভোটাধিকার হরণকারীদের বিপক্ষে ও গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার জন্য আমার উপস্থাপনায়ও টকশোতে আমার অফিসে এসে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন আমার। অথচ, ক্ষমতার পালাবদলের পর নিজেরা ক্ষমতায় না এসেও শুধু মাত্র ক্ষমতার হাওয়া গায়ে লেগেছে- এই শক্তিতে বলিয়ান হয়েই কুমিল্লা আইনজীবী সমিতিতে ভোটের অধিকার হরণ করে বসলেন আগামীতে ক্ষমতার দাবিদাররা।
অপর দিকে, মানুষের ভোটের অধিকারের পক্ষে কথা বলার অপরাধে তৎকালীন সরকারের লোকেরা এমনকি তাদের খয়ের খাঁ গণমাধ্যম কর্মীরাও আমাকে বিএনপি – জামায়াতের ট্যাগ লাগিয়ে অপমান করতে ছাড়েন নি। এমনকি আমার সম্পাদিত পত্রিকা দৈনিক আমাদের কুমিল্লা জামায়াত ইসলামীর টাকায় চলে এমন সংবাদও করেছিল সেই সময়ের সরকার ও ক্ষমতাবান নেতার পদলেহনকারি সাংবাদিক ও সংবাদপত্র।
জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুর (ফাঁসিতে মৃত্যু দিয়েছিল আ’লীগ সরকার ) সংবাদে হেডিংটি কালো বর্ডারে দেওয়ার কারণে তৎকালীন কুমিল্লার সরকার দলীয় সাংবাদিকরা আমার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনে অভিযোগ করে জেলা প্রশাসন কর্তৃক আমাকে শোকজ করায়। সেদিনও আমি কায়েমী স্বার্থবাদীদের কাছে মাথানত করিনি। নিজস্ব পেশাদারিত্ব নিয়ে এগিয়ে গিয়েছি মহান রবের নামে।
এখন ঠিক ১৮০ ডিগ্রী উল্টে যারা আমাকে সাহসী বলতো তারা এখন আমাকে উল্টো ট্যাগ দেয় আর অতীতের ট্যাগ দেওয়ারা এখন আমাকে সাহসী বলে, বাহবা দেয়।
আমি উভয়কে বলছি,বিশ্বাস করুন, আমি আপনাদের কেউ না। আমি কারোটা খাই না, পড়ি না। আমি শুধু মাত্র দেশ এবং জাতির স্বার্থে সাংবাদিকতা করি এবং এই সাংবাদিকতা পেশাই আমার জীবন ধারণের একমাত্র অবলম্বন, বেঁচে থাকার একমাত্র প্রেরণা। সুতরাং আপনারা আমাকে যে যা ভাবেন, ভাবতে পারেন, আপনাদের ভাবনায় আমার কোন হাত নেই। যেখানে আমার হাত নেই ,সেটা নিয়ে আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়া ছাড়া আমার আর কিছুই করার নেই।
আমি সুস্পষ্ট ভাষায় এই কলামে বলে দিতে চাই, গত ষোল বছর মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য, হারানো গণতন্ত্র পূনরুদ্ধার করার জন্য, দেশের মানুষের বাক স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য, কুমিল্লায় আমি টকশো করে, পত্রিকায় কলাম লিখে,সংবাদ পরিবেশন করে , বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে যে ভূমিকা রেখেছিলাম, কথা দিচ্ছি, আমি সেই জায়গায় থেকে এক চুল পরিমাণ নড়ব না ইনশাআল্লাহ। আমার এই প্রতিবাদী আন্দোলনে সেদিন যেমন আমি খুব একটা কাউকে কাছে পাইনি, এখনো কাউকে আশা করি না। শুধু চাই, আল্লাহর রহমত আর আমার পাঠক , বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীদের ভালোবাসা ও সমর্থন।
শেষ করার আগে সর্বশেষ বলতে চাই, কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কুমিল্লার বিএনপি – জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা ভোটারবিহীন নির্বাচিত হয়ে যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যাত্রায় তা শুভকর না। দয়া করে গণতন্ত্রের শুভ এই যাত্রা পথে প্রতিবন্ধকতা করবেন না প্লিজ।