শীতার্তদের মাঝে এখনি দাঁড়ান

সময়ের কড়চা
শাহাজাদা এমরান ।।
প্রকাশ: ১ বছর আগে

বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর প্রার্থী কবিতায় বলেছেন, হে সূর্য, তুমি তো জানো, আমাদের গরম কাপড়ের কত অভাব! সারারাত খড় কুটো জ্বালিয়ে, এক-টুকরো কাপড়ে কান ঢেকে, কত কষ্টে আমরা শীত আটকাই! হ্যাঁ, কবি সুকান্ত যথার্থই বলেছেন, অভাবী ও অনাহারী মানুষগুলো সত্যিই শীতের রাতে অপেক্ষায় থাকে রক্তিম সূর্যের। কারণ, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের এই উচ্চ হার যুগে তিন বেলা খাওয়াই যখন তাদের দায় হয়ে পড়েছে। সেখানে শীতের রাত কাটানোর জন্য অতিরিক্ত গরম কাপড় কেনার টাকা পাবে কোথায় ?
ষড় ঋতুর বাংলাদেশে শীত চলে এসেছে। এখনিই হার কাপানু শীত না আসলেও শীতের তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলছে। দরিদ্র ও অতি দরিদ্র মানুষগুলোর এক দিকে যেমন হাতে কোন কাজ নেই, অপর দিকে তাদের ঘরে ভাতও নেই। তারপর শীত তাদের জীবনে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
আমাদের দেশে সাধারণত তীব্র শীত পড়লে কিংবা কঠিন শৈত প্রবাহ দেখা দিলে শুরু হয় শীত বস্ত্র বিতরণ। এর আগে অধিকাংশ সংগঠন, সংস্থা কিংবা ব্যক্তির উদ্যোগেও শীত বস্ত্র বিতরণ করার কার্যক্রমটি শুরু করা হয় না। আবার গতানুগতিকভাবেও শীত বস্ত্র বিতরণ করা হয়। একই জায়গায় বার বার দেওয়া হয়। কিন্তু এমন অনেক স্থান, কাল, পাত্র আছে যেখানে দানশীলদের শীতের কাপড় পৌঁছায় না।
অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এবার মানুষের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। এক দিকে যেমন নানা কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের কর্মসংস্থান কমছে । অপর দিকে, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষের ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। অভাবী এই মানুষগুলোর কাছে শীতের কাপড় ক্রয় করা যেন এক ধরনের বিলাসিতা। কিন্তু শীত তো আর ধনী, গরীব চিনে না। কার পকেটে টাকা আছে আর কার পকেটে টাকা নেই এটাতো আর শীত নির্ণয় করে না। শীত যেমন এয়ারকন্ডিশনারযুক্ত আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত অট্রালিকাতেও আগমন করে ঠিক তেমনি ভাঙ্গা টিনের চালের ঘরেও তার বীরত্ব দেখা যায়। সুতরাং শীতের কোন নির্দিষ্ট সার্বভৌমত্ব নেই। সে সব জায়গায় অবাধ বিচরণ করে।
আমি সামর্থ্যবান ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের সকল পর্যায়ের নাগরিকদের অনুরোধ করব, আসুন, আমরা দীনহীন অসহায়, ভাগ্যবিরম্বিত এই মানুষগুলোকে শীতের কাপড় দেই। তবে তা যেন এখনি দেই। কারণ, তীব্র শীত পড়লে কিংবা শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়ে গেলে কিন্তু তাদের কষ্টের সীমা পরিসীমা থাকে না। আমরা যেহেতু শীতের কাপড় দিবই তাহলে আগে নয় কেন।
লেখাটি শেষ করতে চাই মরমী কন্ঠ শিল্পী ভুবন হাজারিকার একটি অমর গানের কলি দিয়ে। তিনি বলেছিলেন, মানুষ মানুষের জন্য, আর জীবন জীবনের জন্য। তাইতো, যে জীবন অপর জীবনের কোন কাজেই লাগবে না সেই জীবন তো একটি মূল্যহীন জড় পদার্থ ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা যেন শীতার্ত মানুষের পাশে এখনি দাঁড়াই এবং দেওয়ার জন্য দেওয়া নয়, তাদের যেন কাজে লাগে, শীত নিবারন হয় এমন শীতের কাপড় যেন তাদের দেই।
আমাদের সবার মানবিক বিবেক অসহায় মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হোক, এই প্রত্যাশা করছি।

লেখক : ব্যবস্থাপনা সম্পাদক,দৈনিক আমাদের কুমিল্লা ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি,কুমিল্লা জেলা।
মোবাইল : ০১৭১১-৩৮৮৩০৮
sahajadaamran@yahoo.com.