দুই দিন ধরে বাবার লাশ আটকে রেখেছে ছেলেরা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

বাবার পেনশনের ৩০ লাখ টাকা নিয়ে গেছে মেয়ে। এরই মাঝে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে শনিবার বিকালে হাসপাতালে মারা যান অবসরপ্রাপ্ত পদ্মা অয়েলের সাবেক কর্মকর্তা মনির আহমদ (৬৫)। তার মৃত্যুর পর যথানিয়মে লাশ দাফনের বদলে ফ্রিজিং গাড়িতে করে লাশ রেখে দেওয়া হয়েছে বাড়ির উঠানে।

মৃতের পুত্র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের দাবি নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় ক্যান্সার আক্রান্ত বাবাকে থেরাপি দেওয়ার কথা বলে আনোয়ারার চৌমুহনিস্থ একটি ব্যাংকে নিয়ে যান তার বোন বিবি আক্তার। সেখান থেকে চিকিৎসার খরচের নামে ৩০ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়। বিষয়টি জানতে পারেন ছেলেরা।

এরই মাঝে গত শনিবার বাবার মৃত্যু হলে লাশ দাফনের বদলে টাকার বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ছেলেরা লাশ দাফন না করে আটকে রেখেছে। ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডস্থ কেরানির বাড়িতে।

রোববার সন্ধ্যায় সর্বশেষ খবরে জানা যায়, মৃতের লাশ ফ্রিজিং গাড়িতে বাড়ির উঠানেই পড়ে রয়েছে। সমস্যার সমাধানে স্থানীয় লোকজন ব্যর্থ হলে কর্ণফুলী থানার পুলিশও সেখানে যায় কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।

সোমবার মৃতের আরেক পুত্র বিদেশ থেকে বাড়িতে ফেরার কথা রয়েছে। তিনি বাড়ি ফেরার পর এবং ব্যাংক থেকে মৃতের কন্যা বাবাকে নিয়ে টাকা তুলেছিল কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার পর লাশ দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও কর্ণফুলী থানার ওসি দুলাল মাহমুদ।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন জানান, মৃত মনির আহমদ পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। গত ২০১৭ সালে অবসরকালে তিনি পেনশনের প্রায় ৫০ লাখ টাকা পান। এরই মাঝে তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত হলে তাকে নগরীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে হাসপাতালে দেখভালের জন্য সঙ্গে ছিলেন মৃতের স্ত্রী দিলুয়ারা বেগম।

তিনি জানান, সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাকে হাসপাতালে রেখে গত ১৩ ডিসেম্বর বাইরে থেরাপি দেওয়ার কথা বলে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে যায় মৃতের কন্যা ও নাতি। পরে শোনা যায় মেয়ে ও নাতি থেরাপি নয়, টাকা তুলে নেওয়ার জন্য তাকে নিয়ে যান ব্যাংকে। এরই মাঝে মনির আহমদের মৃত্যু হলে তার রেখে যাওয়া টাকার ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় ভাই-বোনের মাঝে। এ বিষয়ে সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত লাশ দাফন করতে দিচ্ছেন না মৃতের পুত্র সন্তানরা।

মৃতের সন্তান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানান, ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার বিষয়টি তার বোন স্বীকার করছেন না। ওই টাকার ওপর সবার হক রয়েছে। বোন স্বীকার না করায় আজ সোমবার সকালে ব্যাংকে গিয়ে নিশ্চিত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া দুপুর ১২টার দিকে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর দেশে আসার কথা রয়েছে। সে এলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

মৃতের কন্যা বিবি আক্তার জানান, তার নামে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। তার অ্যাকাউন্টে বাবার কোনো টাকা স্থানান্তর হয়নি।

কর্ণফুলী থানার ওসি দুলাল মাহমুদ জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় প্রবাসে থাকা পুত্র সোমবার দেশে এলে মৃতের লাশ দাফন করা হবে।