মরছে তরমুজ গাছ, দুশ্চিন্তায় চাষিরা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ years ago

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরে তরমুজ ক্ষেতে অজানা রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। সকালে দেখা যাচ্ছে সুস্থ-সবল গাছ, বিকেলে দেখা যায় পাতা ও কাণ্ড শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে এ রোগে ক্ষেতেই মারা যাচ্ছে তরমুজ গাছ।

ক্ষেতে তরমুজসহ গাছ মরে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এখন লোকসানের শঙ্কা ও ঋণের বোঝা নিয়ে দুশ্চিন্তা যেন কাটছেই না তাদের।

সরেজমিনে গিয়ে গেমি স্টেম লাইট বা কাণ্ড ঝলসানো রোগে তরমুজ গাছ আক্রান্ত বলে শনাক্ত করেছে কৃষি বিভাগ। তারা বলছেন, কৃষি বিভাগের তৎপরতায় এখন এ রোগটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দেওয়া হবে প্রণোদনা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছর লক্ষ্মীপুরের পাঁচ উপজেলার প্রায় ২শ’ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৪ হেক্টর, রায়পুরে ৪০ হেক্টর, রামগঞ্জে ১ হেক্টর, রামগতিতে ১১০ হেক্টর ও কমলনগরে ২৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ১শ’ হেক্টর বেশি। লাভবান হওয়ায় দিন দিন তরমুজ চাষের দিকে ঝুঁকছেন এখানকার চাষিরা।

উপকূলীয় এ অঞ্চলের তরমুজ আকারে অনেক বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারেও বেশ চাহিদা রয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা এসে সরাসরি ক্ষেত থেকে এসব তরমুজ কিনে নিয়ে যান। কিন্তু গেমি স্টেম লাইট বা কাণ্ড ঝলসানো ছত্রাক, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগের আক্রমণে হঠাৎ ক্ষেতে তরমুজ গাছ মারা যাচ্ছে। এতে ফলন বিপর্যয়ে লোকসানের আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।

চাষিরা জানান, সদরের নলডগি, চর মটুয়া, পুকুরদিয়াসহ আশপাশে এলাকার প্রায় ৩ হেক্টর তরমুজ ক্ষেতে এ রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। তরমুজ ক্ষেতে এ নতুন রোগ সংক্রমণের পর জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. জাকির হোসেন কর্মকর্তাদের নিয়ে পরিদর্শন করেছেন।

চাষিরা আরো জানান, প্রত্যেকটি চারা রোপণেই ১৫০-২০০ টাকা খরচ হয়। এবারের মতো পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়তে হয়নি। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তরমুজের চাষ করেন তারা। পরে উৎপাদিত তরমুজ বাজারে বিক্রি করে প্রতি বছর ওই ঋণের টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু এবার তরমুজ ক্ষেতের অবস্থা দেখে ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।

কৃষি কর্মকর্তা ও কোম্পানির লোকদের পরামর্শ অনুযায়ী সোলোভোরন, থ্রি-ভিট, সালবার, দস্তাসহ বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। এখানকার বেশির ভাগ চাষি ঋণগ্রস্ত। তাদের এ লোকসান পুষিয়ে নিতে সরকারি সহায়তা চেয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, আক্রান্ত ক্ষেতগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। তরমুজ ক্ষেতে ‘গেমি স্টেম লাইট বা কাণ্ড ঝলসানো, ছত্রাক, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া’ জনিত রোগ দেখা দিলে ‘ম্যানকোজেব’ গ্রুপের যেকোনো ছত্রাকনাশক (যেমন টেলিনর) পানিতে মিশিয়ে তিনদিন সব তরমুজ গাছের গোড়া ভিজিয়ে প্রয়োগ করতে হয়। অতিরিক্ত আক্রান্ত হলে দুই লিটার পানিতে এক কেজি চুন ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে রিডোমিল গোল্ড মিশিয়ে তরমুজ ক্ষেতে ছিটিয়ে প্রয়োগ করলে এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।