বিএনপির কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াছিন সাংবাদিক ও বৈষম্যবিরোধী লেখক শাহাজাদা এমরানের চতুর্থ গ্রন্থ ‘আঙ্কেল গেইটটা খোলেন না: গণঅভ্যুত্থান, কুমিল্লা ২০২৪’ বইয়ের প্রশংসা করে বলেন, “আপনি আপনার জীবনে ভালো কাজগুলোর মধ্যে এটি একটি করেছেন। এটি আপনার জীবনে অনেক বড় একটি অর্জন। যেকোনো ঘটনার সাথে সাথে লিখে রাখলে সেটার ইতিহাসগুলো সুন্দরভাবে উঠে আসে এবং সেটা নিয়ে বিতর্ক কম হয়। কিন্তু যত সময় পেরিয়ে যায়, তত বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এই জন্য কুমিল্লা বিএনপির পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
পরে উপস্থাপকের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা হাজী ইয়াছিন বলেন, কুমিল্লাতে বহু বছর ধরে একটা গ্রুপ পলিটিক্স চলছিল। আমি রাজনীতিতে আসার আগেও কুমিল্লার রাজনীতিতে গ্রুপিং ছিল। তখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান আমাকে বলেছিলেন, “আমি কুমিল্লাকে গ্রুপিং মুক্ত দেখতে চাই। আমি আপনার উপর আশা রাখি, আপনি এটা দেখবেন।” তখন আমি কুমিল্লার স্বার্থে, দলের স্বার্থে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করব বলে বলেছিলাম। সর্বশেষ আহবায়ক কমিটিতে যে দুইজন আবু-টিপু রয়েছেন, তাদের দুইজনকে আমি ছোট ভাইয়ের মতো, সন্তানের মতো স্নেহ করি। আপনি জানেন, কুমিল্লা সিটির প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি ওয়ার্ডেও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে নাই এবং সে রকম কোন লক্ষণও ছিল না। মূলত বেশিরভাগ গণ্ডগোল একটি গ্রুপ তাদের স্বার্থের কারণে করে থাকে। আমরা এবং আমাদের দল চাই, আগামী দিনে বিএনপির ভিতর ঐক্য সৃষ্টি করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। নতুন প্রজন্ম শুধু সুন্দর কথা বললেই হবে না, তাদের চলনে-বলনে সেই সুন্দরের প্রভাব থাকতে হবে। সেটা যদি না থাকে, তাহলে মানুষ আপনার কথা শুনবে কিন্তু সেটাকে হাসির খোরাক হিসেবে উড়িয়ে দেবে।
কুমিল্লা মহানগরের বিএনপির সম্মেলনে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করা হবে। কুমিল্লার এই কাজের মাধ্যমে অন্যান্য জেলা উৎসাহিত হবে। আমরা সব সময় গণতন্ত্রের কথা বলি, কিন্তু আমাদের মধ্যেই যদি গণতান্ত্রিক ভাব না থাকে, তাহলে মানুষ কেন আমাদের কথা বিশ্বাস করবে। কুমিল্লা সিটির বাইরে যে ওয়ার্ডগুলো রয়েছে, সেখানে আমরা এবার প্রত্যেকটি ইউনিয়নের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে সম্মেলন করেছি। আমরা ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করেছি। সেখানে প্রথম যে ব্যক্তি জনপ্রিয়, তাকে সভাপতি, দ্বিতীয়জনকে সাধারণ সম্পাদক, তৃতীয়জনকে সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং চতুর্থজনকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে। তারপরে তারা ৩১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। এভাবে আমরা সাংগঠনিক কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
গত বহু বছর ধরে ৩-৪ টি নির্বাচনে একটি বিষয় বারবার উঠে আসে, তা হলো সাধারণ মানুষ মনে করে ভোটার কেন্দ্রে যেতে গেলে মারধর হবে। তারা ভাবে, কিভাবে তারা ভোট দিতে যাবে, ভোট দিতে গেলে যদি হামলার শিকার হয়। কিন্তু সেগুলো তো নির্বাচন ছিল না। আমি মনে করি, আগামী নির্বাচন সঠিক নির্বাচন হবে। আমি বিশ্বাস করি, মানুষ বিশ্বাস করে সঠিক নির্বাচন হবে, যেখানে জনগণ নিরাপদ ও নিশ্চিন্তে ভোট দিতে পারবে। নিয়ম অনুযায়ী জনগণের ভোট জনগণ দেবে। আপনার কাজ হচ্ছে জনগণকে আপনার দলের প্রতি আকৃষ্ট করা। কেউ মনে করছে, এটি কঠিন হবে। কিন্তু আমার মতে, আগামী নির্বাচন সঠিক ও সহজ নির্বাচন হবে। এখানে কঠিন বলতে বোঝানো হচ্ছে, আপনাকে জনগণের কাছে যেতে হবে, তাদের বুঝিয়ে আপনার দলের কথা বলতে হবে এবং তাদের আপনার দিকে আকৃষ্ট করতে হবে। জনগণকে বুঝানোর অর্থেই নির্বাচন কঠিন। এই কারণে আমরা মাঠ পর্যায়ে থেকে সংগঠন নির্বাচন করে আনছি। জনগণকে আমরা বুঝানোর চেষ্টা করছি, কেন তাদের আমার দলকে ভোট দিতে হবে। আগে যেটা ছিল, সেটা ছিল অনিয়মের কারণে কঠিন। এখন হবে জনগণকে ভোটমুখী করার লড়াই।
প্রতিটি নির্বাচনই হচ্ছে একটা চ্যালেঞ্জ। জনগণ আমাকে পছন্দ করতে হবে, দলের আদর্শ এবং দলকে পছন্দ করতে হবে। তাহলেই জনগণ আমাকে ভোট দেবে। গণতন্ত্রের মধ্যে বহু দল থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। আমি আমার দল কী চাই, সেটা জনগণের কাছে উপস্থাপন করব। আবার অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাদের দলের বিষয় উপস্থাপন করবে। এরপর জনগণ এখান থেকে বাছাই করে তাকে ভোট দেবে। এটাই মূলত গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। এটা ছিলো না বলেই তো এত আন্দোলন, এত গুম ও এত খুন।
আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া ৩১ দফার মধ্যে একটি হচ্ছে কৃষক ও কৃষি নিয়ে। এই কৃষকরা দেখা যায় ফসল ফলে কিন্তু ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। আমাদের এই দফা তে বলা হয়েছে কৃষকদের জন্য শস্য বীমা থাকবে৷ তিনি বলেন, উন্নত ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বির্ণিমানে ৩১ দফা বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই।
কুমিল্লার মানুষের প্রাণের দাবি কুমিল্লা বিভাগ করা। আমি আল্লাহর রহমতে আপনার মাধ্যমে কুমিল্লাবাসীকে আশ^স্ত করতে চাই, এবার আপনাদের ভোটে বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে আমরা প্রথমেই কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা করব ইনশাআল্লাহ। পরিশেষে সবাইকে বলতে চাই, আসুন, সমাজকে পরিবর্তন করি৷ আমরা দূর থেকে প্রতিবাদ না করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে হবে।