কায়সারের ‘স্মার্ট’ ইশতেহারে ফুটে উঠেছে কুমিল্লার মানুষের স্বপ্ন

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ years ago

তৈয়বুর রহমান সোহেল।।

নগর কুমিল্লা গড়তে আধুনিক ইশতেহার ঘোষণা করেন আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। শনিবার নগরীর ধর্মসাগর পাড়স্থ নিজ কার্যালয়ে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। ১৩ দফা ইশতেহারের পরতে পরতে কুমিল্লা নগরীর উন্নয়ন ভাবনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি সহ নানামুখী প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। গত দুই সিটি নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী ইশতেহার তুলে ধরেন। তবে কায়সারের ইশতেহার সকল ইশতাহারের সৌন্দর্যকে ছাড়িয়ে গেছে। কুমিল্লার মানুষ ইতোমধ্যে বলাবলি শুরু করেছেন, এমন গোছানো সুন্দর প্রতিশ্রুতিশীল ইশতেহার কুমিল্লার মানুষ আগে কখনও দেখেননি। তবে যে-ই নির্বাচিত হন, কায়সারের দেওয়া ইশতেহার অনুসাওে তারা কাজ করতে পারেন। আর এমন প্রতিশ্রুতি পূরণে অর্থের দরকার হবে ঠিকই, তবে সদিচ্ছা থাকলে এর বাস্তবায়ন কঠিন হবে না।

ইশতেহারের সবচেয়ে সুন্দর দিকটি ছিল আইসিটি ক্লাব স্থাপন, তথ্য-প্রযুক্তি ও ফ্রিল্যান্সিং বিষয়গুলো। বর্তমান দুনিয়া আধুনিক জ্ঞান নির্ভর দুনিয়া প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশেও। দেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে মোটামুটি অবস্থানে চলে গেছেন ফ্রিল্যান্সররা। তারা বেশ ভালো আয়-উপার্জন করছেন। অনেকে উদ্যোক্তা হচ্ছেন। তাতে বেকারত্বও কমে আসছে। সরকারের কাছে চেয়ে থাকা, উৎপাদন মুখিতা থেকে দূরে সরে আসা কখনও ভালো লক্ষণ হতে পারে না। বরং উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান স্থাপন, কর্ম ও কর্মমুখী শিক্ষাই বদলে দিতে পারে অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থাকে। কায়সারও নগরীর মানুষের জন্য এমন ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। তার এমন চিন্তা ব্যতিক্রম।

কায়সার সু-শিক্ষা, স্মার্ট স্কুলের বিষয়টি তুলে এনেছেন। নগর শিক্ষায় একজন মেয়রের কেমন ভূমিকা হতে পারে, তা উঠে এসেছে কায়সারের ইশতেহারে। তিনি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীদের উন্মুক্ত জ্ঞান চর্চার নলেজ সেন্টার গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। কৃতি শিক্ষার্থীদের প্রতি বছর সিটি স্কলারশিপ দেওয়ার কথা বলেছেন। সেরা স্কুল ও শিক্ষকদের সম্মানিত করার কথা বলেছেন। বলেছেন শিক্ষার মানোন্নয়নে সকলের মতামতগ্রহণ করার কথা। প্রতিশ্রুতি ছিল বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, এতিমখানা, কিন্ডারগার্টেন গুলোকে আর্থিক সহায়তার। সু-শিক্ষায় একজন নগর পিতার এর চেয়ে বড় ভূমিকা থাকতে পারে না।

কায়সারের আবাসন নিয়ে পরিকল্পনাটি দেখার মতো। যদিও এর বাস্তবায়ন করা দুরূহ ব্যাপার। তিনি পরিকল্পিত আবাসন তৈরিতে গুচ্ছ আবাসন, বহুতল আবাসন গড়ে তোলার ছক নির্ধারণের কথা বলেছেন। চিন্তা করেছেন দরিদ্র মানুষের আবাসনের বিষয়টিও। তিনি শ্রমজীবী ও নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য স্বল্প ভাড়ার আবাসন ব্যবস্থার কথা বলেছেন। এটি বাস্তবায়ন হলে নগরবাসীর অর্ধেক দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যাবে।

কায়সার মাদক নিয়ে কিছু কথা বলেছেন। মাদকাসক্তদের চিকিৎসা এবং তাদেরকে সাইকোলজিস্ট, মনোবৈকাল্য বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। এটি ভালো উদ্যোগ। কারণ, দমন-পীড়ন-মামলা কখনও সামাজিক অবক্ষয় রোধ করতে পারে না। এর জন্য দরকার সুন্দর পরিকল্পনা। তিনি সুন্দরভাবেই মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থানের কথা বলেছেন।

স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা এবং সবার জন্য ২৪ ঘণ্টা টেলি মেডিসিন সেবা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সাথে সমন্বয় রেখে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কায়সার। স্বাস্থ্য সেবায় প্রবীণ ও নারী-শিশুদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করবেন। নগর স্বাস্থ্য ক্লিনিকের মান বৃদ্ধির কথাও বলেছেন। সিভিল সার্জনের সহায়তায় এসব কাজ করা কোনো কঠিন কাজ নয়।

গোমতী নদী ও লালমাই পাহাড় বেষ্টিত এই কুমিল্লায় পর্যটন নিরে দরদ আছে। আছে অহংকার করার মতো অসংখ্য প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন। কায়সার নগরীর অন্তত পাঁচটি স্থানে বিনোদন পাড়া গড়ে তোলার কথা ইশতোহারে উল্লেখ করেছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং কোটবাড়িকে কেন্দ্র কওে পর্যটনখাতকে আকর্ষণীয় করে তোলার চিন্তাটি ব্যতিক্রম।

দিনদিন মানুষের সবুজের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এই কুমিল্লা নগরীতে এখন ইট-পাথরের জঞ্জাল। তিনি প্লাস্টিকের ফুল বাদ দিয়ে গরীবকে সতেজ ফুলে ভরে তোলার সংকল্প করেছেন। বাগানিদের প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলেছেন। ছাদ বাগানিদের সুযোগ-সুবিধা আরও বৃদ্ধি ও তাদের পুরস্কৃত করার স্বপ্ন দেখেছেন। সিটি করপোরেশনে বছরে কমপক্ষে এক লাখ চারা রোপণ এবং পুরো কুমিল্লাকে সবুজের চাদরে ঢেকে দেওয়ার উদ্যোগ নিবেন বলে ইশতেহারে জানিয়েছেন। এতে তার দূরদর্শী চিন্তার প্রতিফলন ফুটে উঠেছে।

নগরীতে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, নিরাপদ ও সম্প্রীতির কুমিল্লা গড়া, দুর্নীতি দূরীকরণ, কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য কমিয়ে আনা, মাদকসহ নৈতিক শক্তির পুনরুদ্ধার, নগরীর যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসন, খাদ্য ও নগর কৃষিতে পরিবর্তন, পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তনের আশ্বাস দেন কায়সার।
নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, মেয়র হলে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আমার সর্বোচ্চ চার বছর সময় লাগবে। এসময়ের মধ্যে সকল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হবে।

কায়সারের পরিকল্পনায় দারুণ আত্মবিশ্বাস ফুটে উঠেছে। কায়সার বলেছেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি উৎসবকে সামাজিক সম্প্রীতির বন্ধনে রূপান্তরিত করার জন্য প্রয়োজন আমাদের মধ্যে নিবিড় ভ্রাতৃত্ববোধ সম্প্রীতি ও প্রতিবেশীদের সাথে মিলেমিশে থাকা। রাজনৈতিক সম্প্রীতিও প্রয়োজন। এজন্য আমি সকলকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।

কুমিল্লা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জেলা। এ কারণে সারা দুনিয়ায় কুমিল্লার সুনাম আছে। কিন্তু এবারের ম-পকা-ের পরের ঘটনা নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। হিন্দুদের উদ্বেগ এখনও কাটেনি। এসময়ে এসে কাউসারের এমন প্রতিশ্রুতি নগরীর সব সম্প্রদায়ের মনোবলকে চাঙ্গা করবে।

মাদকের কারণে কুমিল্লা বিপর্যস্ত। এমনকি মাদকের কারণে জনপ্রতিনিধি খুনের ঘটনাও ঘটেছে। মাদক দূরীকরণে প্রশাসনের সাথে সমন্বয় রেখে কাজ করার অঙ্গীকার করেন কায়সার। রেমিট্যান্স সেবাকে সহজ করার জন্য ব্যাংকের সাথে সমন্বয়, জন্ম-মৃত্যু সনদ, ট্রেড লাইসেন্স এবং অন্যান্য সব ধরনের সেবা তাৎক্ষণিক প্রদানের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে খাল ও ড্রেনের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ, যানজট নিরসনে আন্ডার পাস নির্মাণ সহ ভিন্ন ভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ, নগরীর চারদিকে বৃত্তাকার সড়ক করার পরিকল্পনার কথা উঠে আসে তার ইশতেহারে। রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বর্জ্য অপসারণের ভাবনাটিও সুন্দর। সড়কে সড়কে ময়লা ফেলার বাক্স স্থাপন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাতে জনপ্রিয় বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি থ্রি-আরকনসেপ্টের ব্যাপকভাবে চালু করা এবং এ লক্ষ্যে উৎস নিয়ন্ত্রণে জোর দেওয়ার বিষয়টি ইশতেহারে তুলে ধরা হয়। কায়সারের ইশতেহার বাস্তবায়িত হলে কুমিল্লার মানুষ পাবে এক স্বপ্নের নগরী।