গো-খাদ্যের দামে নাজেহাল খামারিরা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঝালকাঠি জেলায় এবার প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ১৯ হাজার পশু। জেলায় বাণিজ্যিকভাবে কোনো খামার না থাকলেও পারিবারিকভাবে এসব পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। এসব পশুকে প্রাকৃতিক উপায়ে কাঁচা ঘাস, খড়, বিভিন্ন প্রকারের ভুসি, ডালের গুঁড়া, ভাত, ভাতের মাড়, খৈল ও কিছু ভিটামিন খাইয়ে মোটাতাজা করা হয়েছে। বাড়তি লাভের আশায় শেষ সময়ে পশুর বাড়তি যত্নে ব্যস্ত খামারি পরিবারগুলো।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১৮ হাজার ১২১টি। আর প্রস্তুত রয়েছে ১৮ হাজার ৮৬২টি। এসব গবাদি পশুর মধ্যে ষাড় ৮ হাজার ১১১টি, বলদ ৩ হাজার ২৩১টি, গাভী দুই হাজার ১৮৮টি, মহিষ ৩৭টি, ছাগল পাঁচ হাজার ২৯৬টি ও ১৭টি ভেড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে পারিবারিক খামারি রয়েছেন তিন হাজারেরও বেশি।

এদিকে ঈদের আগে বেড়েই চলেছে গো-খাদ্যের দাম। বর্তমানে খামারিদের প্রতিদিন গো-খাদ্যে খরচ বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ। এরমধ্যে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে গরু আমদানি করলে ন্যায্যমূল্যে গরু বিক্রি করতে না পারলে এসব খামারিদের লোকসান গুনতে হবে অনেক।

কৃষক ও খামারিরা জানান, কেউ বাড়ির গোয়ালে আবার কেউ পারিবারিক খামারে এসব পশু মোটাতাজা করছেন। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা সবুজ ঘাস খাইয়ে পশু মোটাতাজা করছেন তারা। খড়ের পাশাপাশি খৈল, গমের ভুসি, ভুট্টার গুঁড়া, ধানের কুঁড়া, মুগের ভুসি, খড় ও বুটের খোসা খাওয়াচ্ছেন অনেকে। এসব পশুখামারে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে। আসছে কোরবানির ঈদে এসব পশু বিক্রি করে বাড়তি আয়ের আশা করছেন তারা।

সদর উপজেলার দারাখান গ্রামের ওয়ালিউর রহমান বলেন, তার পারিবারিক খামারে দেশি-বিদেশি মিলে ১০টি ষাঁড় মোটাতাজা করা হচ্ছে। তার খামারে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দামের গরু আছে।

সদর উপজেলার ডুমুরিয়া এলাকার কঙ্কন ব্যাপারী জানান, ১২টি গরু নিয়ে তিনি পারিবারিক খামার গড়ে তুলেছেন। এরমধ্যে ৪টি দুগ্ধ উৎপাদনকারী গাভী এবং ৫টি কোরবানির জন্য। বাকিগুলো বিক্রির অনুপযোগী। তবে যে পরিমাণে গো-খাদ্যের দাম বাড়ছে তাতে খরচ পুষিয়ে লাভ করাটা খুবই কষ্টসাধ্য।

পারিবারিক খামার পরিচালনাকারী সুজন সরকার বলেন, গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। ৩৭ কেজি ওজনের এক বস্ত গমের ভুসির বর্তমান বাজার মূল্য ২ হাজার ২০০ টাকা, যা আগে ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা। ৭৪ কেজির এক বস্তা খৈল এখন ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা, যা গত বছর ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা। ৫০ কেজি ধানের কুঁড়ার দাম ৯০০ টাকা, গত বছর ছিল ৭০০ টাকা। প্রতি কেজি খড় এখন ১৫ টাকা, আগে ছিল ১০ টাকা। এছাড়া খেসারি ও ছোলার ভুসির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। গত কয়েক বছরে ৭ থেকে ৮ দফা গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে।

অন্যান্য খামারিরা বলেন, পশু খামারে শ্রমিকদের দুই বছর আগে বেতন ছিল প্রতিদিন ৫০০ টাকা। এখন প্রতিদিন ৭৫০ টাকায় কাজ করাতে হচ্ছে। পশু পালনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে কেউ খামার করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। পাশাপাশি ব্যাংক ও এনজিওর ঋণের অতিরিক্ত সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে খামারিরা খুব একটা লাভের মুখ দেখছেন না।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ ডা. মো. ছাহেব আলী জানান, এরইমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা জেলার বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রতিটি হাটে ব্যাংকের লোক থাকবে। গবাদি পশু ক্রেতা এবং বিক্রেতারা যেকোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট এবং কিউআর কোড ব্যবহার করে ই-ব্যাংকিংয়ে লেনদেন সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। জেলায় প্রায় ১৯ হাজার পশু ক্রয় বিক্রয় হবে বলে আমরা আশা করছি। আমরা জেলার ৪ উপজেলার প্রতিটি খামার পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ ওষুধপত্র দিচ্ছি।