গত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র থেকে মেয়র পদে নির্বাচন করে পদ পদবী হারিয়ে দল থেকে আজীবন বহিস্কার হয়েছিলেন কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সভাপতি , কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার। দলীয় পদ থেকে বহিস্কার হয়েও এক দিনের জন্যও তিনি রাজনীতির মাঠ ছাড়েননি। দলের একজন নিবেদিত সাধারণ কর্মী হিসেবে কুসিক নির্বাচনের পর থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সরকার বিরোধী প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে। যার ফলে দলীয় পদ পদবী না থাকলেও রাজনীতির মাঠের অন্যতম সক্রিয় কর্মী হিসেবে মামলা থেকে রেহাই মিলেনি তার।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশে হামলাকে কেন্দ্র করে ২৯ অক্টোবর সারা দেশে সকাল সন্ধ্যা হরতাল ডাকে বিএনপি। হরতাল চলাকালে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক এমপি হাজী আমিন উর রশীদ ইয়াছিনের নেতৃত্বে হরতালের সমর্থনে দলীয় অফিস থেকে একটি মিছিল নিয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে চকবাজার যায়। চকবাজার থেকে ফেরার পথে পুলিশের সাথে বিএনপির এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় আসামী করা হয় সাবেক স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সারকে ।
কুমিল্লা মহানগর ও জেলা দক্ষিণ বিএনপি ও এর বেশ কয়েকটি অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ করলে তারা জানায়, নিজাম উদ্দিন কায়সার কুমিল্লায় শুধু বিএনপির রাজনীতিতে নয়, আওয়ামীলীগসহ অন্যান্য দলের রাজনীতির তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি অহংকারের নাম। কুমিল্লার তরুণা নিজাম উদ্দিন কায়সারকে অনুসরন করেন এবং অনুকরণ করেন। দল থেকে বহিষ্কার হয়েও তিনি দলের কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন নিভিরভাবে। কখনো সামনে আবার কখনো পেছনে থেকে দলের কর্মকান্ডে নিজেকে জড়িত রেখে সবাইকে উজ্জিবিত করেন।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, কুমিল্লায় বিভাগীয় মহাসমাবেশে ব্যাপক শোডাউন করে সারা দেশের নেতাকর্মীদের কাছে ব্যাপক আলোচিত হন এই তরুণ নেতা। জেলা ও মহানগর বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের একাধিক সভায়ও তার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের দাবী জানান নেতাকর্মীরা। বহিষ্কারের পূর্বে তার নামে এক ডজনেরও বেশি মামলা ছিলো।
২৯ অক্টোবর রবিবার হরতাল চলাকালে নিজাম উদ্দীন কায়সারের সরব উপস্থিতি ছিল লক্ষনীয়। ওইদিন নগরীর চকবাজারে বিএনপির মিছিলটি পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেন। এ সময় পুলিশের সংগে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংক্রান্তে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায় নিজাম উদ্দিন কায়সারসহ বিএনপি যুবদল ও অঙ্গসমূহের নেতাকর্মীদের নামে মামলা হয়। নিজাম উদ্দিন কায়সারকে পুলিশের মামলায় ৭ নম্বর আসামী করা হয়। অথচ তিনি বর্তমানে পদেও নেই,দলেও নেই।
বহিস্কার এবং মামলার বিষয়ে নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, দল বহিষ্কার করলেও আমি দলে আছি, দলের একজন কর্মী হয়ে । দেশনায়ক তারেক রহমানের আহবানে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মাঠে আছি ভবিষ্যতেও মাঠে থাকবো। হামলা মামলা দিয়ে লাভ হবে না জনগনের ভোটাধিকার ও গনতান্ত্রিক আন্দোলনে আমাকে মাঠ থেকে কেউ সরাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
নিজাম উদ্দিন কায়সার আপ্লুত কন্ঠে বলেন, যেখানে গণতন্ত্রের জননী, দেশনেত্রী, সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বেরাচারীনি হাসিনা সরকারের রোষানলে পড়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা করে লড়ছেন,দেশনায়ক তারেক রহমান দেশের জনগণের হারানো ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করে চলছেন, সেখানে আমার পদ আছে, কি নেই , সেটা কোন মূখ্য বিষয় হতে পারে না। আমি শহীদ জিয়ার একজন ক্ষুদ্র সৈনিক এটাই আমার কাছে বড় পরিচয়।
এদিকে, কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহমেদ সঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে ৩০০ অজ্ঞাতসহ মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আসামীদের কি ভূমিকা ছিলো সেগুলো তদন্তে বের হয়ে আসবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে স্বেচ্ছাসেবকদলের পদ থেকে পদত্যাগ করেন নিজাম উদ্দিন কায়সার। বিএনপিপন্থী স্বতন্ত্র এই মেয়র প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) ও মহানগর কুমিল্লা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। পদত্যাগের পর তিনি বলেছিলেন, দল যেহেতু নির্বাচনে যাচ্ছে না, তাই দলের আদর্শের প্রতি সম্মান জানিয়ে পদত্যাগ করলাম।