কুমিল্লা নগর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোটবাড়ী এলাকার নন্দনপুর থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে বার্ডের অবস্থান। রোববার সকালে বার্ডের প্রধান ফটক পেরিয়ে সামনে যেতেই বাঁ পাশে মহাপরিচালকের কার্যালয়ের পেছনে চোখে পড়ল ফুলের বাগান। মহাপরিচালকের কার্যালয়ের সামনেও রয়েছে বাগান। প্রতিটি বাগানেই নানা রঙের ফুলের সমারোহ। বার্ডের লালমাই ও ময়নামতী মিলনায়তনের পাশের বাগানগুলোও সেজেছে বাহারি ফুলে। সবচেয়ে বড় বাগানটি দেখা গেছে আখতার হামিদ খান গ্রন্থাগারের পাশে। সেখানে ফুল আর ফুল।
এ ছাড়া বার্ডের ক্যাফেটেরিয়া, বার্ড হোস্টেল, প্রশিক্ষণ ভবন, শ্রেণিকক্ষসহ প্রতিটি এলাকাতেই দেখা গেছে ফুলের সমারোহ। এসব ফুলবাগানের মধ্যে রয়েছে সাদা, লাল, গোলাপি, হলুদ, কমলাসহ অন্তত ১০ রঙের গোলাপ। রয়েছে হাজারি জাতের গোলাপও। এই জাতের গোলাপে এক গাছে অনেক ফুল ধরে। এ ছাড়া রয়েছে কাঠগোলাপও। শিউলি, সূর্যমুখী, গাঁদা, ইনকা গাঁদা, ডালিয়া, জারুল ছাড়াও রয়েছে বিরল প্রজাতির মনোমুগ্ধকর কাঁঠালচাঁপা। বার্ড ক্যাম্পাসে রয়েছে হাসনাহেনা ফুলও। যা সন্ধ্যার সময় বিমোহিত করে ফুলপ্রেমীদের। বাগানগুলোতে অন্তত ৩০ ধরনের ফুল দেখা গেছে।
১৯৫৯ সালের ২৭ মে সমাজবিজ্ঞানী আখতার হামিদ খান বার্ড প্রতিষ্ঠা করেন। লালমাই-ময়নামতী পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে ১৫৬ একর জায়গা নিয়ে বার্ড ক্যাম্পাস। বার্ড স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাম্পাসে বর্তমানে অন্তত ১২টি ফুলের বাগান রয়েছে। প্রতিটি বাগানেই এখন ফুলের সমারোহ, যার সৌরভ ছড়াচ্ছে পুরো ক্যাম্পাসে। ১৮ জন মালি নিয়মিত এসব বাগান পরিচর্যা করছেন।
প্রায় পাঁচ বছর ধরে বার্ডে মালি হিসেবে কাজ করছেন মোশারফ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরা বার্ড ক্যাম্পাসে এহন ফুল আর ফুল। আমরা চেষ্টা করতাছি আরও সুন্দর করনের লাইগ্যা। মোট ১৮ জন কাম করি। পানি আর নিড়ানি দিতাছি। আমরাও দেখতে সুন্দর লাগে ফুলডি।’
বার্ডের বাগান পরিচর্যাকারীদের সঙ্গে কথা বলে আরও বেশ কয়েকটি ফুলের নাম জানা গেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষ্ণকলি, চন্দ্রমল্লিকা, স্টার ফুল, কসমস, বিভিন্ন প্রকার গাঁদা, স্যালভিয়া, ডায়ানথাস, জিনিয়া, গ্ল্যাডিওলাসসহ নানা ধরনের ফুল।
নভেম্বরে লাগানো গাছগুলোতে আগামী মার্চ পর্যন্ত ফুল থাকবে বলে জানালেন বার্ডের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) আবদুল্লা আল মামুন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফুলের সমারোহ বেশি থাকে। ১২টি বাগানে ৫ হাজারের বেশি ফুল গাছ লাগানো হয়েছে। প্রায় ১০ প্রকারের গোলাপ, গাঁদা, সূর্যমুখীসহ ৩০ প্রকারের বেশি ফুল রয়েছে বাগানগুলোতে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব ফুলের চারা সংগ্রহ করা হয়েছে।
আবদুল্লা আল মামুন বলেন, প্রায় প্রতিদিনই বার্ডে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীরা আসেন। তাঁরা সবাই ফুলের বাগানগুলো ঘুরে দেখেন। এ ছাড়া সরকারি, বেসরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিসহ দেশ-বিদেশি নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ নিতে বার্ডে আসেন। তাঁরাও ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।
কুমিল্লা নগর থেকে বার্ডে ঘুরতে যাওয়া শাহনাজ পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে একবার এসেছিলাম। ফুলগুলো যা সুন্দর! গোলাপগুলো অনেক বড় বড়। ইচ্ছা করেছিল ছিঁড়ে নিয়ে আসি। কিন্তু ফুল তো গাছেই সুন্দর, তাই আর হাত দিইনি। শুধু ছবি তুলেছি। আজ আবারও এসেছি ফুলগুলো দেখতে। ফুলের সমারোহ ও সৌন্দর্য দেখে আমি মুগ্ধ।’
প্রতিবছরই এ সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কুমিল্লার ঐতিহাসিক প্রত্নস্থান কোটবাড়ীতে শিক্ষাসফরে আসেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সুযোগ হলে শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে ঘুরে দেখে বার্ড ক্যাম্পাস। জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসা দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলে, ‘বার্ডের অনেক গল্প শুনেছি স্যারদের কাছে। আজ ঘুরে দেখতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। বেশি সুন্দর লেগেছে ফুলগুলো।