ভিক্টোরিয়া কলেজে সাধারণ ছাত্রদের উপর হামলাকারিদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করুন- শাহাজাদা এমরান

সময়ের কথা
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ সপ্তাহ আগে

দক্ষিণ বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে গত ২৯ আগস্ট ছাত্রদলের নাম ব্যবহার করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর কারা হামলা করেছে এবং কেন হামলা করেছে প্রশাসনের কাছে তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করছি। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে সারা দেশের ন্যায় কুমিল্লাতেও ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শান্তি শৃঙ্খলায় নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত ২১ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নাম ব্যবহার করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে এক দল শিক্ষার্থী। এই আন্দোলনে প্রকৃত পক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতৃবৃন্দদের কতটুকু সমর্থন ছিল আর বিশেষ এক শ্রেণী কিংবা গোষ্ঠীর কতটুকু ভুমিকা ছিল সেই প্রশ্ন আজ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্পস্ট বক্তব্য, অধ্যক্ষ স্যার যদি দূর্নীতি করে, অনিয়ম করে সেই দায় কেন আমরা নিব। সরকার তদন্ত সাপেক্ষে যে কোন ব্যবস্থা নিতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু সরকারের উপদেষ্টা মহোদয়গনের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শণ করে যারা জোরপূর্বক অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য করাতে চায় , তাদের বিষয়ে আমাদের বক্তব্য আছে। আর আমরা সেই বক্তব্য রাখছিলাম বলেই আমাদের উপর হায়েনার মতো হামলা করা হয়েছে ক্যাম্পাসে। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এখানে ভিক্টোরিয়া কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে আমিও আমার এই কলামে বলতে চাই যে, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ যদি দুর্নীতি করে থাকে, তারা যদি অন্যায় করে থাকে, তাহলে সরকার তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নিক। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দৈনিক আমাদের কুমিল্লা পত্রিকায় আমরাও একাধিক নিউজ করেছি। সরকার যদি এ নিউজের আলোকে কোন ব্যবস্থা নিতে চায়, নিবে। এতে আমাদের করার কিছুই নেই। কিন্তু গত ২১ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নাম ব্যবহার করে এক শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষকে জোর করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শান্তি শৃঙ্খলার পরিপন্থী কাজ। আমি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যখন নিউজ করেছি,যথাযথ তথ্য – প্রমান নিয়েই নিউজ করেছি। আবার অধ্যক্ষ মহোদয় যখন প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ পাঠিয়েছেন, গণমাধ্যমের নীতি মেনেই তা ছাপিয়েছি। গণমাধ্যমের কাজ হচ্ছে সংবাদ পরিবেশন করা, বিচার করা না। বিচার করবে সরকার। কোন ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী কখনো আইনকে নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। তাহলে তো স্বৈরাচারি শেখ হাসিনা সরকার ও তার দলের সাথে কোন তফাত থাকবে না।
ইতিমধ্যে সরকার থেকে বলা হয়েছে, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করা যাবে না। তাহলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে যারা এই হেন কাজটি করেছে, তারা কি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে কাজ করল না ? যদি করে থাকে , তাহলে সরকারের উচিত হবে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
এদিকে , খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে কোটা বিরোধী বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোন স্বীকৃত সমন্বয়ক ছিল না। এখানে কতিপয় ছাত্রলীগ নামধারী আওয়ামীলীগের ক্যাডার বাহিনী ছাড়া ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রতিটি শিক্ষার্থীই কোটা বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছে এবং যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ অবদান রাখার চেষ্টা করছে।
এ দিকে, গত ২৯ আগস্ট বেলা এগারোটার সময় অধ্যক্ষের পদত্যাগের পক্ষ এবং বিপক্ষের ছাত্রদের সাথে এক যৌথ সভা করে ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি শাখার লাইব্রেরিতে ২০টি বিভাগের ২০ জন শিক্ষক। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক শিক্ষক ও ছাত্ররা জানায়, শিক্ষকগণ প্রথমেই ছাত্রদের কাছে জানতে চায় , তোমরা কি চাও। তখন অধ্যক্ষের বিপক্ষের ছাত্ররা বলেন, অধ্যক্ষকে পদত্যাগ করতে হবে। আর সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমানিত না হবে এবং সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত অধ্যক্ষ স্যার দায়িত্ব পালন করুক। এ সময় অধ্যক্ষের পক্ষ এবং বিপক্ষ গ্রুপদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এ সময় শিক্ষকরা বলেন, তোমরা আসলে কি চাও, তোমরা দুই গ্রুপ এক সাথে বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের জানাও। তাহলে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে। আর আমাদের ১৮০ জন কর্মকর্তা কর্মচারী ও অনেক শিক্ষকের বেতন দেয়া যাচ্ছে না। কারণ, চেকে অধ্যক্ষের স্বাক্ষর ছাড়া কেউ টাকা তুলতে পারবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত অধ্যক্ষ স্যার দায়িত্ব পালন করুক, তোমরা সেই সুযোগটি দাও- বলেছেন শিক্ষকগণ। কিন্তু অধ্যক্ষের বিপক্ষের ছাত্ররা কোন ভাবেই এ সুযোগটি দিতে রাজি না। আর অপরদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আসা অধ্যক্ষের পক্ষের গ্রুপটি সেই সুযোগটি দিতে চায়। এই নিয়ে যখন ছাত্রদের দুই গ্রুপ কোন সমাধানে আসতে পারছে না, তখন শিক্ষকরা বললেন, তোমাদের সময় দিলাম। তোমরা দুই গ্রুপ এক সাথে বসে যৌথ ভাবে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের জানাও।
তখন শিক্ষকরা দুই গ্রুপকে বলেছে যে, যেহেতু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ভিক্টোরিয়া কলেজে কোন সমন্বয়ক বা নেতা ছিলো না। সাধারণ শিক্ষার্থী কোটা বিরোধী আন্দোলন করেছে তারা আওয়ামী লীগ,যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নানা হামলা, মামলার শিকার হয়েছে। তাই তোমরা দুই গ্রুপ কথা বলে একজনকে নেতা বানিয়ে আমাদের সাথে কথা বলো। তখন তারা ১০ -১৫ মিনিট কথা বলে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। পরে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে থাকা ছাত্ররা কলেজ থেকে বের হয়ে যায়। আর অধ্যক্ষের পক্ষের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কলেজে থেকে যায়।
কিছুক্ষণ পরে মোটরসাইকেল করে কিছু শিক্ষার্থী বা বহিরাগত এসে ছাত্রদলের নামে স্লোগান দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপরে হামলা করে। তারা ৩/৪ টি বাইকে করে ক্যাম্পাসে এসেই বলে, আমরা ছাত্রদল চলে এসেছি । ছাত্রলীগকে ধর। প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক গণমাধ্যম কর্মীর কাছে এ সংক্রান্ত ফুটেজ রয়েছে, যা তারা আমাকে অবগত করেছে।
ঐ অংশটি আমাকে জানাল যে, সেখানে কোন ছাত্রদল ছিলো না । যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপরে হামলা , নির্যাতন করেছে তারা বহিরাগতও হতে পারে। এদের মধ্যে কেউ কেউ দেশীয় অস্ত্রও ব্যবহার করেছে। এবং হামলার সময় বলেছে, অধ্যক্ষের পক্ষে থাকলে খবর আছে।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছে- এই খবর শুনে বক্তব্য নেয়ার জন্য আমি ফোন করি, কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি ফখরুল ইসলাম মিঠু, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আলম জিলানীকে । ছাত্রদলের এই তিন ইউনিটের শীর্ষ নেতারা বলেন ছাত্রদল এখন বন্যার্তদের ত্রাণ দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত। এ ঘটনার সাথে ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রদল জড়িত না। ছাত্রদলের এই তিন নেতা চ্যালেঞ্জ ছুঁেড় দিয়ে বলেছেন, যদি কেউ প্রমান করতে পারে, এখানে ছাত্রদল জড়িত, তাহলে যে কোন বিচার আমরা মাথা পেতে নেব। ছাত্র দলের নেতৃবৃন্দ সিসিটিভির ফুটেজ দেখে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
আমরা জানি , গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.ইউনুস এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার -উজ- জামান দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিরলস ভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শত শত ছাত্র-ছাত্রীর তাজা রক্তের বিনিময়ে এ দেশ আবার নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। ছাত্রদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আজকের নতুন এই স্বাধীন দেশে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র এবং ছাত্রদলের নাম ব্যবহার করে ন্যাক্কারজন ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আমি উপদেষ্টা মন্ডলীর দুইজন তরুণ উপদেষ্টা মহোদয়সহ কুমিল্লার প্রশাসনকে বলবো, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন।
বর্তমানে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৮ লাখ মানুষ পানি বন্দি । তাদের মুখে দুই মুঠো ভাত তুলে দেওয়ার জন্য বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর এই মুহূর্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নাম ব্যবহার করে কারা ভিক্টোরিয়া কলেজে নৈরাজ্য করছে, কারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপরে হামলা করে শান্ত ক্যাম্পাসকে অশান্ত করছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করুন। আমি দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের বলবো, আপনারা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন। আমি আবারো বলছি, যদি তারা ছাত্রদল হয় তাহলে তিন ইউনিটের নেতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিন, কেন তারা মিথ্যা বলল। আর যদি ছাত্রদল না হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন , যাতে তাদের দেখে আর কেউ এমন হীন কাজ করতে সাহস না পায়।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক,দৈনিক আমাদের কুমিল্লা ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি,কুমিল্লা জেলা।