হোক ভোট উৎসবের বছর

স্বাগত ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৩ মাস আগে

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর বলেছেন, ‘নির্বাচন আগামী ১৮ মাসের মধ্যে হওয়া উচিত।’ প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণে নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘২০২৫ সালের শেষ দিকে বা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে দেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।’ তিনি এ-ও বলেছেন, নির্বাচন প্রস্তুতি ও সংস্কার একসঙ্গে চলবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা বলছেন, আগে সংস্কার পরে নির্বাচন। বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন দাবি করছে। স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনের দাবি আদায়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল চলতি বছরের শুরু থেকে সরকারকে চাপে রাখবে। এ বিতর্কের মধ্যেই ১৫টি সংস্কার কমিটি কাজ করছে। সব মিলিয়ে ২০২৫ সাল হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সংস্কারের বছর।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচন যেন প্রলম্বিত না হয়, সেটা মাথায় রেখে সরকারকে একটি যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে যে সংস্কার কার্যক্রম করা দরকার, তা করতে হবে। তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব সংস্কারগুলো শেষ করে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

এদিকে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের কথা বলছে। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, প্রত্যাশার মূল কেন্দ্রবিন্দু আগামী জাতীয় নির্বাচন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রয়োজনীয় নির্বাচনি সংস্কার।

তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার জনসমর্থন হারিয়ে অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য নির্বাচনব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রের কাঠামো নষ্ট করে ফেলেছে। মৌলিক সংস্কার না করে নির্বাচন হলে যারা ক্ষমতায় যাবে তারাই বিগত সরকারের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর সুযোগ পাবে। আবার নির্বাচন দীর্ঘায়িত করলে নানা ষড়যন্ত্র চলে আসবে। আমরা যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন চাই।

অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় সংস্কারে পর নির্বাচনের কথা বলছে। দলটির আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর চরমোনাই বলেন, সংস্কার ছাড়া যারা নির্বাচনের কথা বলে, তারা মনে হয় ষড়যন্ত্রকারীদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচন করতে হবে। অতীতের নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট তৈরি হয়েছে।

শুধু বিএনপি নয় বিএনপির সঙ্গে থাকা সমমনা দলগুলোও ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। ১২ দলীয় জোটের শীর্ষনেতা জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। আমাদের প্রত্যাশা সরকার নতুন বছরের মধ্যেই সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিনের আধিপত্যবাদী শাসন শেষে জমে থাকা জঞ্জাল পরিষ্কার করে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে তা কেউ ভাবে না। কিন্তু অনির্দিষ্ট সময় লক্ষ্যহীন যাত্রায় দেশ চলুক সেটিও কাক্সিক্ষত নয়। বৈষম্যহীন ছাত্র-জনতা যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে আত্মাহুতি দিয়েছে, তার মূলে রয়েছে পরিবর্তিত সামাজিক ব্যবস্থা। তাই জঞ্জাল যতটা সম্ভব শেষ করেই নির্বাচন দিতে হবে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক বলেন, জুলাই-আগস্টের বিপ্লব শুধু শাসকের চেহারা বদল করার জন্য হয়নি। শাসকদের গুণগত মান পরিবর্তন করে বৈষম্যহীন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই বিপ্লব হয়েছে। জুলাই বিপ্লবসহ বিগত ১৬ বছরে বাংলাদেশে সংঘটিত প্রতিটি হত্যা, গুম, খুন ও জুলুমের বিচার না হওয়া পর্যন্ত দেশে কোনো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, আগে রাষ্ট্র সংস্কার ও জন-আকাক্সক্ষা পূর্ণ করতে হবে, পরে নির্বাচনের কথা ভাবতে হবে।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, সব সংস্কার কমিশন রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় কোন কোন খাতে কী কী সংস্কার করা হবে, তা ঠিক করা হবে। সংস্কারের জন্য কত সময় লাগবে, সেই সময়সীমারও ধারণা পাওয়া যাবে। তখনই আসলে নির্বাচন কবে সম্ভব এর একটা প্রকৃত সময় জানা যাবে। তারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সংস্কারের কথা বলা হলেও গণতান্ত্রিক দলগুলো বরাবরই বলছে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে। এদিকে নির্বাচন কমিশন প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার আলোকে নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীন গতকাল কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে এখনো নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা হয়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে জানানো সময় অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’