অজানা শঙ্কা মধ্যেই আজ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ years ago

# মেয়র পদে লড়াই ত্রিমুখী
# মোট ভোটার ২,২৯,৯২০
#মোট ওয়ার্ড -২৭
# মোট কেন্দ্র ১০৫
# মোট বুথ কক্ষ ৬৪০
# মেয়র পদে মোট প্রার্থী -৫
# কাউন্সিলর- ১০৮
# সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর-৩৮

অনেক অজানা শঙ্কা , অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়েই আজ বুধবার শুরু হচ্ছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে গোটা নগরীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। টান টান উত্তেজনা, অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের মধ্যে দিয়ে সোমবার শেষ হয়েছে প্রচারণা। আজকের নির্বাচনকে অবাধ,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছেন কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার শাহেদুননবী চৌধুরী। তবে কেন্দ্রের পরিস্থিতি ভালো থাকলেও ভোটাররা কেন্দ্রে স্বাভাবিক ভাবে আসতে পারবেন কি না এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ কাজ করছে ভোটারদের মনে।
নগরবাসীর মতে , এবারের নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। আরফানুল হক রিফাতের নৌকা, মনিরুল হক সাক্কুর টেবিল ঘড়ি ও নিজাম উদ্দিন কায়সারের ঘোড়া কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছে না। দুই দিন আগেও যারা বলত, এবারের নির্বাচনে দ্বিমুখী লড়াই হবে তারাও এখন বলছে যে ঘোড়া যে ভাবে দৌঁড়াচ্ছে কুসিকের এবারের নির্বাচন বেশ জটিল এবং ত্রিমুখী সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
কুমিল্লা নির্বাচন কমিশন অফিস সূত্রে জানা গেছে , আজ বুধবার সকাল ৮ টা থেকে কোন রকম বিরতী ছাড়া নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রের ৬৪০টি বুথে এক যোগে ভোট গ্রহন শুরু হবে। ইতিমধ্যে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা সংযুক্ত করা হয়েছে।
এবার কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে মোট ২ লক্ষ ২৯ হাজার ৯২০ জন ভোটার ইভিএম পদ্ধতিতে তাদের ভোটাধীকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ১ লক্ষ ১২ হাজার ৮২৬ জন আর নারী ভোটার রয়েছে ১ লক্ষ ১৭ হাজার ৯২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২ জন।
এবার নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন , কাউন্সিলর পদে ১০৮ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে৩৬জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মেয়র পদে আওয়ামীলীগের আরফানুল হক রিফাত , স্বতন্ত্র মনিরুল হক সাক্কু, নিজাম উদ্দিন কায়সার,কামরুল আহসান বাবুল, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মাওলানা রাশিদুল হাসান এই পাঁচজান প্রার্থী হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত নৌকা প্রতীকের আরফানুল হক রিফাত, স্বতন্ত্র প্রার্থী টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মনিরুল হক সাক্কু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের নিজাম উদ্দিন কায়সারের মধ্যে । ইতিমধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা স্পস্ট হয়ে উঠছে।
সূত্রমতে,নির্বাচনের প্রচারণায় যে ধরনের সহিংসতার শঙ্কা করেছিল নগরীর মানুষ, এবার দুই-একটি ঘটনা ছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে বড় কোনও সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। তবে নির্বাচনকে ঘিরে প্রধান তিন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে বেশ বাহাস হয়েছে। তিন প্রার্থীর বাহাস উপভোগ করেছেন কুমিল্লার মানুষ। সে সাথে নির্বাচন কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে শঙ্কাও আছে সাধারণ মানুষের মনে। নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণ মানুষের ভীতি দূর করা যায়নি। নির্বাচনী আচরণবিধিও অনেক প্রার্থী মেনে চলেননি। বিশেষ করে প্রতীক দিয়ে টি-শার্ট,ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনী প্রচারণা চোখে পড়েছে।
নির্বাচনী প্রচারণায় নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত সাবেক মেয়রকে চোর ও দুর্নীতিবাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। মণ্ডপকাণ্ডে সাক্কুর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে পথসভাগুলোতে অভিযোগ তোলেন তিনি। সে সাথে বিজয়ী হলে কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গণে সাক্কুর দুর্নীতির শ্বেতপত্র তুলে ধরবেন বলে জনগণের কাছে অঙ্গীকার করেন। তবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় গত বৃহস্পতিবার (০৯ জুন) কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্যকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন, কিন্তু হাইকোর্টে রিটের শুনানি শেষ হয়নি জানিয়ে এলাকায় থেকে যান তিনি। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। গত রোববার(১২ জুন) সিইসি এমপি বাহার এলাকা না ছাড়লে আমরা কি করতে পারি তার এমন অসহায়ত্বের কথা ভোটারদের মনে শঙ্কা জেগেছে।
অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী, সাবেক মেয়র ও সাবেক বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু তার প্রচারণাকালে নৌকার প্রার্থীর আনীত অভিযোগ মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেন। শক্তিমত্তা পরীক্ষার জন্য নৌকার প্রার্থীকে স্টেডিয়ামে ডাকেন তিনি। প্রচারণাকালে বিভিন্ন সময়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার নিকট চারটি লিখিত অভিযোগ দেন সাক্কু।
অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার রিফাত ও সাক্কুকে একই ব্যক্তির ( এমপি বাহারের ) প্রার্থী বলে সমালোচনা করেন। তিনি এ দুইজন নির্বাচিত হলে কুমিল্লার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে না বলে বিভিন্ন সময় উঠান বৈঠক ও পথসভায় বলেন। এছাড়াও ওই দুই প্রার্থীকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলেন তিনি। ইসির সামনে ২০১৮সালের রাতের ভোট নিয়ে মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন এই তরুণ প্রার্থী। এছাড়া তার দেওয়া ইশতেহার কুমিল্লা নগরীর দোদুল্যমান ভোটারদের মধ্যে সাড়া ফেলে।
আজকের নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুননবী চৌধুরী বলেন, আশা করি নির্বাচন অবাধ . সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। যে কোন অন্যায়কে আমরা কঠোর হস্তে দমন করব। আমরা কুমিল্লা নির্বাচনকে একটা মডেল নির্বাচন হিসেবে দেখতে চাই।
তিনি নির্বাচনে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার জন্য সকল প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও তার কর্মী সমর্থকদের প্রতি অনুরোধ করেছেন।