অত:পর কেরির ঔষধ খেয়ে স্বামীর আত্মহত্যা : স্ত্রী আটক,ছেলে পলাতক

বুড়িচংয়ে মুরগীর বাচ্চা জবাইকে কেন্দ্র করে স্ত্রীর সাথে ঝগড়ার ছেলের সাথে হাতাহাতি
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

স্ত্রী ও সন্তানদের লাঠির আঘাতে নয় বরং তাদের সাথে সংগঠিত ঝগড়াকে কেন্দ্র করে অভিমানে কেরির ঔষুধ খেয়ে আত্মাহত্যা করেছে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার ভারেল্লা উত্তর ইউনিয়নের পারুয়ারা গ্রামের আবদুল মালেক (৫০) নামের এক ব্যক্তি। প্রথমে স্ত্রী ও সন্তানদের লাঠির আঘাতে মারা গেছে বলা হলেও এই প্রতিবেদক বুধবার সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে নিহতের স্বজনসহ এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে এবং নিহতের স্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। আর বড় ছেলে পলাতক রয়েছে।

বুধবার (৮মার্চ) সকালে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ৭মার্চ মঙ্গলবার দুপুরে মুরগীর বাচ্চা রান্না নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া শুরু হয়। এসময় ঘরে থাকা আবদুল মালেকের বড় ছেলে প্রবাসী সেলিম বের হয়ে বাবাকে ধমক দেয় এবং এক পর্যায়ে বাবার সাথে হাতাহাতি হয়। তখন আশেপাশের লোকজন তাদের ঝগড়া থামিয়ে আবদুল মালেককে বাজারে পাঠিয়ে দেয়। বিকালে বাজার থেকে ফিরে ঘরে না এসে বাড়ির দক্ষিণ পাশে গরুর খামারে যায় । সেখান যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আবদুল মালেক মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আশেপাশের লোকজন দেখে চিৎকার করলে স্বজনরা এসে তাকে প্রথমে কংশনগর পরে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত আবদুল মালেকের স্বজনদের বক্তব্য, গরুর খামারে গিয়ে কেরির ঔষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করে সে।

এ বিষয়ে নিহতের ছোট ছেলে নুরুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে আম্মা একটি মুরগীর বাচ্চা জবাই করে রান্না করেন। আব্বায় এসে জিজ্ঞেসা করে মুরগী কেন জবাই করেছে। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এবং এক পর্যায় আমার বড় ভাই সেলিম আব্বাকে ধমক দেয় ঝগড়া থামানোর জন্য। এসময় আব্বা আর ভাইয়ের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে আমি নিজে আব্বাকে রাস্তায় নিয়ে বাজারে পাঠিয়ে দেই ঝগড়া শান্ত করার জন্য। আব্বা বাজার থেকে বিকালে ফিরে বাড়িতে না এসে বাড়ির দক্ষিণ পাশের গরুর খামারে যায় এবং সেখান থেকে একটু পরেই লোকজন তাকে ধরাধরি করে কংশনগর হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি দেখে সেখান থেকে ক্যান্টনমেন্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বড় ছেলে অভিযুক্ত সেলিমের বউ মুন্নী বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে আমার শশুর শাশুড়ী কি নিয়ে যে ঝগড়া করতেছে। তখন আমার স্বামী ঘরে ছিলো । সে গিয়ে আমার শশুরকে ধমক দেয় থামার জন্য। পরে আশেপাশের লোকজন এসে তাদের ঝগড়া থামিয়ে আমার শশুরকে বাজারে পাঠিয়ে দেয়।
এ দিকে, নিহতের ছোট বোন ফরিদা বলেন, আমার ভাইয়েরে এই দুইজনে(ছেলে সেলিম ও তার স্ত্রী) মিলে মাইরা লাইছে। এসময় তার হাতে থাকা কেরির ঔষধ সাংবাদিককে দেখায় এবং বলে যে, এই ঔষধ গুলো আমি গরুর ঘর থেকে খুইজ্জা আনছি। এই দুইজনে মিলে আমার ভাইয়েরে জোর করে ঔষধ খাওয়াইয়া মারছে।
প্রতিবেশী তোফায়েল বলেন, আমি পাশের বাড়ির। আমি নিজে এসে তাদের ঝগড়া থামিয়ে গেছি এবং তাকে(মালেক) বাজারে পাঠিয়ে দিছি। পরে কি হইছে আমি বলতে পারবো নাু। আমার কাছে খবর গেছে সে মারা গেছে।
স্থানীয় মেম্বার মো. মোস্তফা বলেন, এই পরিবারে সব সময় ঝগড়া লেগে থাকে। সাবেক মেম্বার দুলালও অনেক বার তাদের মেল করছে কিন্তু ঝগড়া বন্ধ হয়নি। এখন তার মৃত্যুটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা সেটা সঠিক বলতে পারবো না।
স্থানীয়রা বলেন, মালেকের ছেলে সেলিম বিদেশ থাকতে বার বার হুমকি দিতো তার বাবাকে। তার বউ অনেক খারাপ মহিলা। সে তার ছেলেদের নিয়ে সব সময় মালেকের উপরে এক প্রকার টর্চার করতো। তাদের ঘরের ঝগড়া হচ্ছে নি+ত্য দিনের ঘটনা।

দেবপুর ফাঁড়ির আইসি জাবেদ উল ইসলাম জানান,খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের ফোর্স গিয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে পারিবারিক কলহের জের ধরে এমন ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় নিহত আব্দুল মালেকের স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে। ছেলে সেলিম পলাতক রয়েছে।

এ ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি ইসমাইল হোসেন।