অন্যের কাপড় ইস্ত্রি করে নিজের সুখ অনুভব করেন রুবেল মিয়া

পুতুল আক্তার ।।
প্রকাশ: ১ বছর আগে

গত ১৭ বছর ধরে অন্যের নামী দামী কাপড় ধৌত ও ইস্ত্রি করে নিজের সুখ অনুভব করেন রুবেল মিয়া। ইস্ত্রীর কঠিন তাপে প্রতিনিয়ত জ¦লছে তার জীবন। এই তপ্ত আগুনেই নিজের ও পরিবারের সুখ ও সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখেন তিনি।
বলছিলাম মো: রুবেল মিয়ার (৩৫) কথা ।পেশায় ধোপা। কুমিল্লার গোবিন্দপুর চৌমুহনীতে রয়েছে তার লন্ড্রীর দোকান।
রুবেল মিয়া জানান, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে তিনি এ পেশার সাথে জড়িত। জীবনের তাগিদে খুব অল্প বয়সে ঘর থেকে বেড়িয়ে ছিলেন জীবিকার খোঁজে। এক পর্যায়ে কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রীজ এলাকায় এক ধোপার দোকানে কর্মচারী হিসেবে মাসিক তিনশো টাকা বেতনে চাকরী মেলে তার। এই শুরু। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। চাকুরির দুই বছর পর তার বেতন তিনশো থেকে ছয়শো করা হয়। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে রুবেল মিয়ার বয়সও। চিন্তায় আসে সংসার করারও। কিন্তু এই স্বল্প বেতনে কিভাবে চলবে যৌথ জীবন ?
নানা চিন্তা ভর করে কিশোর রুবেলের উপর। লন্ড্রী ব্যবসার কর্মচারি নয় এবার মালিক হবার রঙিন স্বপ্ন দেখেন তিনি। স্বপ্নের সাথে চলে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার কঠিন সংগ্রামও। সেই স্বপ্নই বাস্তব হয়ে তার জীবনে দেখা দেয় ২০১১ সালে । কঠোর পরিশ্রম আর ত্যাগ স্বীকার করে নিজেই এবার মালিক হয়ে শুরু করেন লন্ড্রী ব্যবসা ।
প্রথম দিকে কোন কর্মচারি ছাড়া একাই চালাতেন ব্যবসা। দৈনিক তার দুইশো-আড়াইশো টাকা আয় হতো। ধীরে ধীরে তার এ আয় বাড়তে থাকে।একটা সময় তিনিও তার দোকানে একজন কর্মচারী রাখেন।তার দোকান থেকে অনেকেই কাজ শিখে আজ তারাও ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।তাই রুবেল মিয়া লন্ড্রী ব্যবসার একজন উদ্যোক্তা হিসেবেই নিজকে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। তার সহজ সরল বক্তব্য, আমি আমার কর্মচারিদের বলি, তোমরা দ্রুত কাজ শিখে নিজের এলাকায় গিয়ে নিজে দোকান দাও। এবং আমার মত তোমরাও অন্যজনদের শিখাও।
রুবেল মিয়ার বর্তমানে ৫ সদস্যের পরিবার।এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। মেয়ে কুমিল্লার একটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছেলেটি ছোট। তাকে পবিত্র কোরআনে হাফেজ বানানোর স্বপ্ন তার ইচ্ছে তার ।
রুবেল মিয়া জানান, স্যার, সারা জীবন আমি ইস্ত্রীর কাজ করে জীবন পাড় করছি। আমি চাই না আমার সন্তানেরা এই কাজটি করুক। আমি চাই, আমার ছেলে মেয়েরা পড়াশুনা করে মানুষ হয়ে দেশ সেবার কাজে লাগুক, মানুষের কাজে লাগুক। যার কারণে এই লন্ড্রী ব্যবসা করে কিছু কিছু টাকা সঞ্চয় করছি সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য।
দুঃখ করে রুবেল মিয়া জানান, জীবন জীবিকা আর পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে পড়াশুনা করতে না পারার কষ্ট সে আজো অনুভব করে।বর্তমানে তিনি প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা আয় করেন এ ব্যবসার মাধ্যমে।তিনি মনে করেন কোন কাজ ই ছোট নয়। হতাশায় না ভোগে সব কাজকে সম্মান করে যেকোন কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে নিতে পারলেই সহজে সফল হওয়া সম্ভব।তিনি আরো বলেন ,কোন পেশাই ছোট নয়,কিন্তু বর্তমানে অনেক শিক্ষিত যুবক আছে তারা শুধু চাকুরির খোঁজে বিভোর।তারা যদি নিজে থেকে কিছু করার চেষ্টা করে তাহলে হয়তো চাকরি থেকেও বেশি সফল হওয়া সম্ভব।তবে এক্ষেত্রে প্রত্যেক পেশার প্রতি তাদের সম্মানবোধ জাগ্রত থাকা আবশ্যক।তবেই ব্যর্থতা আর বেকারত্বকে জয় করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
লন্ড্রী ব্যবসা করে স্বাবলম্বী রুবেল মিয়ার শেষ কথা, পরিশ্রম করার ইচ্ছা শক্তি ও সততা থাকলে যে কোন কাজেই সফল হওয়া যায়। যেমন সফল হয়েছেন রুবেল মিয়া নিজেই।