উপরের পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ঠ কালন্দি খালটি আখাউড়া চেকপোষ্ট হয়ে বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করে। আখাউড়া-আগরতলা সড়কের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আখাউড়া পৌরসভার সড়ক বাজার দিয়ে তিতাস নদীতে গিয়ে মিশেছে খালটি। ১৫০ থেকে ২০০ বছর আগে বৃটিশ আমলে ভারতে ত্রিপুরা রাজ্যের ঢলের পানি নিস্কাশন ও সেচ কাজের সুবিধার জন্য খালটি খনন করা হয়েছিল। শুস্ক মৌসুম বাদে বাকী সময় এ খাল দিয়ে নৌকা চলাচল করত বলে জনশ্রুতি আছে। আখাউড়ার কয়েকটি বাজারে এখাল দিয়ে মালামাল নৌকায় নিয়ে আসত এ পথ ধরে। এখালের পানি সেচের কাজে একসময় ব্যবহৃত হত। এক সময় উজানের জলরাশি প্রবাহিত থাকলেও দখলদারদের দৌরাত্বে খালটি এখন মৃতপ্রায়। আখাউড়া পৌরসভার পানি নিষ্কাশনে একমাত্র খালটির দখলের কারনে সংকোচন হওয়ায় জনস্বাস্থ্য অনেকটা হুমকির মুখে। প্রভাবশালীরা রাতের আধারে প্রথমে বাঁশ ও পড়ে টিনের চালা দিয়ে জায়গাটি দখল করে নেয়। কিছুদিন পর টিনের বেড়ার আড়ালে পাকা দালান গড়ে তোলেন প্রভাবশালীরা। স্থানীয় প্রশাসনের আক্ষেপ ছাড়া কোন প্রশাসনিক দায়িত্ব আছে বলে মনে হচ্ছে না।
আখাউড়া পৌর এলাকায় একসময়ের খরস্রোতা কালন্দি খালটি দখলদারিত্বের প্রভাবে অস্তিত্ব হারাচ্ছে। প্রতাপশালীদের দখলের কারনে দোকান ও বাসাবাড়ী নির্মান হয়েছে। ভূমিদস্যুদের দখলদারিত্বে ও ময়লা আবর্জনায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে কালন্দি খালটি। বর্তমানে এ খালের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া কঠিন। খালটির কারনে পৌর শহরের সৌন্দয্য বেড়েছিল একসময়। বর্তমানে এটি দেখে বোঝার উপায় নাই যে এটি একটি খাল ছিল। খালের দুইপাড় ও কোথাও কোথাও খাল দখল করে আরসিসি পিলার দিয়ে দোকানপাট ও বাসাবাড়ী নির্মান হয়েছে। আবার অবৈধ দখলদাররা এ খালের পানি তিতাসে পতিত হওয়ার মুখে বাধাগ্রস্থ করে মাছ চাষ করছে। এমনকি খালের উপর নির্মিত ব্রিজের দুইপাশও দখল করে নিয়েছে অনেকে। এতে বৃষ্টির পানি ও বাসা বাড়ীর গৃহস্থালী কাজে ব্যবহৃত পানি নিস্কাশন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। পানি জমে ময়লা-আবর্জনায় দুর্গন্ধ সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবেশকে দূষিত করছে এ অবস্থা।
খালটি রাধানগর মৌজার উপর দিয়ে বয়ে গেছে তিতাস নদীতে। খাস খতিয়ানে খোজ নিয়ে জানা যায় এটি খাল হিসেবেই সৃজিত হয়। রাধানগর মৌজার ম্যাপে পশ্চিম দিকে ৩৭ ফুট প্রস্থ এবং পূর্বদিকে ৩১ ফুট প্রস্থ বলে জানা যায়। কোন কোন স্থানে দখল-দূষণ আর আবর্জনার কারনে খালের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। শুনা যায় ভূমি দস্যুরা বিএস জরিপের সময় খাল পাড়ের কিছু জায়গা নিজেদের নামে রেকর্ড করেছেন। যথাশীঘ্র সম্ভব খালটি উদ্ধার করে পৌর এলাকা পরিচ্ছন্ন করা পরিবেশ রক্ষায় অত্যবশ্যকীয়।
সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
ও
সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা অঞ্চল