অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ

# ঈদ উল আজহার আগেই সংস্কার দাবি নগরবাসীর
সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ ।।
প্রকাশ: ১১ মাস আগে

কুমিল্লা নগরীতে শতবছরের ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনের মধ্যে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ অন্যতম। মোগল শাসিত এ অঞ্চলের বৃহৎ ঈদগাহ গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় অযত্ন-অবহেলায় জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে ঈদগাহটি। এমনিতেই সংস্কার না থাকায় ঈদগা মাঠের পলেস্থার উঠে গিয়ে ছোট ছোট খন্দক সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি আসলেই জায়গায় জায়গায় জমে থাকে পানি। পলেস্থার খসে পড়ায় গত রোজার ঈদেও মুসল্লীদের নামাজ পড়তে ভীষন কষ্ট হয়েছে। এ সময় গণমাধ্যমের কাছে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।
এমনিতেই ঈদ গা মাঠের অবস্থাটি যাচ্ছেতাই। তার উপর আবার দিনের বেলায় বাইকাররা এই পবিত্র স্থানে বাইকের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, পাশাপাশি ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন খেলাধুলার সরঞ্জাম নিয়ে খেলছে। ঈদগাহটি কবে রং করা হয়েছিল তা বোঝার উপায় নেই। বাইরের দেয়ালের রং উঠে বিবর্ণ হয়ে গেছে। ঈদগাহটিতে নামাজের জন্য সাদা রং দিয়ে ৮৬টি কাতার চিহ্নিত করে রাখলেও পেছনের দিক থেকে আরো ১০/১৫টি কাতার চিহ্নিত করা যায় বলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, ‘ঈদ উল আজহার আগেই সংস্কার করতে হবে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদ গা মাঠ ’এ সংক্রান্ত একটি সরেজমিন সচিত্র প্রতিবেদন গতকাল শনিবার কুমিল্লার জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল কুমিল্লার জমিন এর শুভ সকাল অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয় চতুর্দিকে। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে জেলার সর্ববৃহৎ এই ঈদগাটি। কুমিল্লার জমিন এর সচিত্র স্পট সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরেই সরেজমিনে গিয়ে ঈদগার করুণ বাস্তবতা দৃশ্যমান হয় দৈনিক আমাদের কুমিল্লার কাছে।
শনিবার সকালে নিয়মিত হাঁটতে আসা বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম ঈদগাহ মাঠে দাঁড়িয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, পলেস্থার উঠে যাওয়ায় গত রোজার ঈদেও এখানে নামাজ পড়তে কষ্ট হচ্ছে। জায়নামাজ দিয়ে পড়লেও ভাঙ্গা সুরকীগুলো গায়ে বিঁধে। দীর্ঘ দিন ধরে সিটি কর্পোরেশন এটি সংস্কার করে না বলেই এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি জানান।
মোগলটুলি এলাকার আবু তাহের নামের এক বাসিন্দা আমাদের কুমিল্লাকে বলেন, এ ঈদগাহ মাঠে এক সময় অনেক ইসলামিক জলসা হত। আমরাও যেতাম। কারো যদি একটি গরু ভেতরে ঢুকতো তাহলে আমরা পবিত্রতা রক্ষার্থে দ্রুত তাড়িয়েও দিতাম। এখন সেই পবিত্রতা মনে হয় আমাদের অন্তর থেকে সরে গেছে। এখনও যদি মাঠে যান, দেখবেন ছেলে-মেয়ে আড্ডা দিচ্ছে। আর সন্ধা হলেতো গাঁজাও সেবন চলে এখানে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরধারীর অভাবেই এমনটি হচ্ছে বলে জানান এই প্রত্যক্ষদর্শী।
সরেজমিন দেখা যায়, ঈদগাহে নামাজের জন্য ৮৬ টি কাতার সন্নিবেশিত করা হয়েছে। ইচ্ছে করলে পেছনের দিকে আরও ১০ থেকে ১২ টি নামাজের কাতার করা যায়। এখন যে সিমেন্টের ঢালাইয়ে কাতার গুলো রয়েছে, সে কাতার গুলেওা ফেটে গেছে। বৃষ্টি পড়াতে কিছু কিছু জায়গায় পানি জমে আছে। কিছু ছেলে-মেয়েরা বাইক চালাচ্ছে ও ক্রিকেট খেলছে। এতে করে সিমেন্ট ঢালাইয়ের অংশ গুলোতে চাপ পড়ে ফেটে যাচ্ছে। আবার এক পাশে সুন্দর সুন্দর কয়েকটি দেশি খেজুর গাছও দেখা যায়। যা কিছুটা হলেও সৌন্দর্য বর্ধন করছে।
নুরী নামের এক নারী বাইকার বলেন, এখানে বাইক চালানো বা খেলাধুলা করা ঠিক নয়। এসবের কারনে ঈদগাহের ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে সিমেন্টের যে ঢালাই দেওয়া হয়েছে, ওই ঢালাইয়ের প্লাস্টার উঠে যাচ্ছে। সকলের দেখা দেখে আমরাও এখানে বাইক চালাই ও খেলাধুলার পাশাপশি আড্ডাও দেই। অন্য মেয়েরা এখানে আড্ডা না দিলে আমরাও দিতাম না।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দা সবুজ বলেন, নগরীতে যে কয়টি ঐতিহ্যবাহী জায়গা রয়েছে তার মধ্যে এই ঈদগাহ অন্যতম। এ ঈদ গাহ মাঠটি এখন অযত্ন-অবহেলার মধ্যে পড়ে আছে। সামনে যেহেতু ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করব ঈদগাহে, তাই ঈদগাহটির সংস্কারের খুবই প্রয়োজন।
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা দেখে আসছি ঈদগাহটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্থার করা হয়না। প্রত্যেক ঈদের ২ দিন বা ৩ দিন আগে সামান্য বৃষ্টি হলে পানি জমে যায়। তখন মুসল্লিদের নামাজ আদায় করতে অনেক কষ্টকর হয়ে যায়। আমার মনে হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের নজরে আনা উচিত। যদি সংস্কার করা হয়, তাহলে মুসল্লিরা দুই ঈদে সুন্দর আরাম আয়েশে নামাজ আদায় করতে পারবে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন ১০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনজুর কাদের মনি বলেন, সবাইতো মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ে। ঈদগাহেতো কেউ নামাজ পড়না। কে বলছে ঈদ গায়ে নামাজ পড়ছে না। শত শত মুসল্লী নামাজ পড়ছে এমন তথ্য দিলে প্রতিবেদককে কাউন্সিলর অফিসে চায়ের দাওয়াত দেন। পরে তিনি ২/১ দিনের মধ্যে সংস্কার করে দিবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহের ইমাম ও খতিব মুফতি কাজী ইব্রাহীম বলেন, দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে আমার ইমামতিতে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করছে। আমি ইমাম হিসেবে বলছি, এই ঈদগাহের অনেক সংস্কারের প্রয়োজন।

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী ড. সফিকুল ইসলাম বলেন, গত ঈদের নামাজের সময় আমার চোখে এই ফাটল গুলো চোখে পড়েছে। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মুসল্লিরা ঈদগাহ সংস্কারের কাজ দ্রুত সময় দেখতে পাবে। ঈদগাহকে আরও সৌন্দর্যে গড়ে তুলতে আগামী মাসিক সভায় মেয়র মহোদয়কে বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। আমাদের এমপি মহোদয় ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহোদয়ের সাথে কথা বলে বড় একটি পরিকল্পনা করার বিষয়ে মিটিং করব।

কুমিল্লা সিটিকর্পোরেশনের মেয়র আরফানুল হক রিফাত বলেন, আমিতো প্রতি দুই ঈদে কেন্দ্রীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করি। এমন সমস্যার বিষয়টি আমি অবগত ছিলামনা। এটি সংস্কার ও দেখভালের জন্য আমার তরফ থেকে সকল কিছু করা হবে।