বিএনপি নেতারা জানান, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে পথ চলতে চান তারা। এ জন্য জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে যাতে কোনো দূরত্ব তৈরি না হয়, এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করছেন তারা। তবে যৌক্তিক সময়ে ভোটের রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে এ দাবিতে রাজপথে থেকে সরকারের ওপর চাপও তৈরি করা হবে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারকে কেউ যাতে ব্যর্থ করতে না পারে, সেদিকেও তীক্ষ্ণ নজর থাকবে দলটির।
জানা গেছে, রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতিও এগিয়ে নিচ্ছে দলটি। এ জন্য গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জনসমর্থনকে আরও দৃঢ় করার ওপর। তাই জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছেন নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে বিএনপি নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। প্রতিহিংসার রাজনীতিতে না জড়িয়ে সহিংসতাকে প্রতিহত করেছেন এবং সহাবস্থান নিশ্চিত করেছেন। পূজার সময় বিএনপি নেতাকর্মী মন্দির ও উপাসনালয় পাহারা দিয়ে হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধসহ সব মানুষের সুরক্ষায় পাশে দাঁড়িয়েছেন। দেশের পূর্বাঞ্চল ও সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার সময় সাহায্য নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন নেতাকর্মীরা।
৩১ দফা নিয়ে তৃণমূল যাওয়ার পরিকল্পনায় ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ বিভাগে কর্মশালার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ১৯ নভেম্বর ঢাকায় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর ২৬ নভেম্বর সিলেট, ৩০ নভেম্বর কুমিল্লা ও ফরিদপুর, ২ ডিসেম্বর খুলনা ও ময়মনসিংহ, ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম এবং ৮ ডিসেম্বর রংপুর ও বরিশালে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, কর্মশালার মাধ্যমে বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারে তাদের আগের উদ্যোগ এবং এ বিষয়ে জনমত তৈরির ওপর গুরুত্ব আরোপ করছে। দলের নেতারা মনে করছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের ধারণা প্রথমে বিএনপি জনসমক্ষে এনেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক নানা ঘটনাপ্রবাহের কারণে সেই উদ্যোগের বিষয়টি অনেকে ভুলে গেছেন। দলের নেতারা বলেন, মূলত রাষ্ট্র নিয়ে বিএনপির চিন্তা জনগণের মাঝে তুলে ধরতে কর্মশালার উদ্যোগ নিয়েছেন। ক্রীড়াঙ্গনের মাধ্যমেও সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার কার্যক্রম চলছে দলটিতে। এর অংশ হিসেবে দেশের প্রতিটি জেলায় ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন চলছে। কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হকের নেতৃত্বে এ কর্মসূচিতে নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন সাংগঠনিক ইউনিটের কমিটি পুনর্গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিএনপি নেতারা জানান, তৃণমূল নেতাকর্মীকে ব্যতিব্যস্ত রাখার মধ্য দিয়ে তারা দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি নেতিবাচক কার্যক্রম থেকেও তাদের দূরে রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। এতে তারা জনগণের কাছাকাছি যেতে পারছে, যা আগামী নির্বাচনে ইতিবাচক ফল দেবে বলে মনে করছেন নেতারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীরা এখন ফেরারি জীবন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন জীবনে ফিরে আসছেন। এখন সুদিন এসেছে মনে করে যারাই কোনো অপরাধে জড়িত হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেই দ্রুত সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিয়েছে দল। ইতোমধ্যে দেড় হাজারের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বহিষ্কারসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে জিরো টলারেন্স নীতি। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে দলের ইমেজ উজ্জ্বল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন– ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। তিনি সবার আগে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
নির্বাচনের দাবিতে সরকারকে চাপে রাখার কৌশলও রয়েছে দলটির। বিএনপি নেতারা জানান, তারা এ সরকারকে সফল করতে সহায়তা করছেন। পাশাপাশি গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন চলমান রেখেছেন। বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও সমাবেশে সবার অংশগ্রহণে দ্রুত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি করছেন।
এসব কর্মসূচির উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, লুণ্ঠিত ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা ও জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সত্যিকার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের অগ্রাধিকার।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বেশি সময় লাগার কথা নয়। নির্বাচন কমিশনের যতটুকু স্বাধীনতা নিশ্চিত করা দরকার, সে জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের সুপারিশ করে সরকারের ভোটের আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।