আজ মহান বিজয় দিবস

জাতির আত্মগৌরবের দিন আজ
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

আজ ১৬ ডিসেম্বর শুক্রবার মহান বিজয় দিবস । বাঙালি জাতির আত্মগৌরবের একটি দিন।এ বছর দিনটিতে বাঙালি জাতি বিজয়ের ৫১ বছর পূর্ণ করছে। এবছর ৫১তম বিজয় দিবস উদযাপন করছে জাতি।

১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব- মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন ও সার্বভৌম হানাদার মুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান আর দুই লাখ মা-বোনের ত্যাগ আর তিতিক্ষা এবং কোটি বাঙালির আত্মনিবেদন ও গৌরবগাঁথা গণবীরত্বে পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় বাঙালি জাতি।

বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় উজ্জীবিত করে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যান। ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের অবসানের মধ্য দিয়ে ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাপধীনতা লাভ করলেও ভ্রান্ত দ্বিজাতির তত্ত্বের ভিত্তিতে যে অসম পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় তার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয় বাঙালি জাতিকে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের শুরু থেকে বাঙালি জাতির ওপর শুরু হয় বৈষম্য, শোষণ, অত্যাচার নির্যাতন। পাকিস্তানের এই শোষণ বঞ্জনা আর অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি সোচ্চার হতে থাকে এবং ধাপে ধাপে পাকিস্তানের অত্যাচরের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠতে থাকে। বাঙালির এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে নেতৃত্বে আসেন শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির এই আন্দোলনকে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিণত করেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের হত্যা যজ্ঞে মেতে উঠলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে সর্বস্তরের বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের পাশে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে এগিয়ে আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত। সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং কোটি বাঙালিকে আশ্রয় দিয়ে ভারত সাহায্যের হাত বাড়িযে দেয়। ওই সময় পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থন দিয়ে সরাসরি পক্ষ্য নেয়।

দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী
যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সারা দেশের ন্যায় কুমিল্লায়ও সরকারি বেসরকারি ভাবে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে , সকাল ৬.৩০টা কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গণে ৩১ (একত্রিশ) বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবনে পতাকা উত্তোলন। সকাল ৬.০০টা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অবস্থিত শহিত মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ ও শহিদ ডিসি এ কে এম সামসুল হক খান স্মৃতি ভাস্কর্য, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবস্থিত শহিদ পুলিশ সুপার মুন্সী কবীর উদ্দিন আহম্মদ স্মৃতি ভাস্কর্য, পুলিশ লাইন ও আলেখারচরে অবস্থিত যুদ্ধ জয় ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ। সকাল ৮.০০টা: জেলা প্রশাসক কর্তৃক শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সমাবেশ ও, কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ, শরীরচর্চা প্রদর্শনী এবং পুরস্কার বিতরণ। বাদ জুমা/ সুবিধাজনক সময়ে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত, জাতির শান্তি, সমৃদ্ধিকামনা করে সকল মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপসানলয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখান, শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন। বিকাল ৩.০০টা : মহিলা ও শিশুদের ক্রীড়া অনুষ্ঠান (দেশীয় খেলাধুলা)। স্থান: কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ, কুমিল্লা। বিকাল ৩.০০টা : কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গণ হতে নগর উদ্যানে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল পর্যন্ত বিজয় র‌্যালি। বিকাল ৪.০০টা: প্রীতি ফুটবল ও কাবাডি প্রতিযোগিতা। স্থান: শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়াম। সন্ধ্যা ৫.৩০টা: মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন। স্থান: কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গণ।

সন্ধ্যা ৫.৪৫টা: কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গণে আতশবাজি ও ফানুশ উড্ডয়ন। সন্ধ্যা ৬.০০টা: ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনা সভা। স্থান: বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মঞ্চ, কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গণ। সন্ধ্যা ৭.০০টা: সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থান: বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মঞ্চ, কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গণ। এবং দিনব্যাপি জেলা ও উপজেলার সকল সিনেমা হলে বিনা টিকেটে ছাত্র-ছাত্রী ও শিশু কিশোরদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন এবং সকল বেসরকারি পার্ক, কোটবাড়ীস্থ ময়নামতি জাদুঘর এবং ধর্মসাগরে প্যাডেল বোট ভ্রমণ ও শিশুদের জন্য প্রবেশ উন্মুক্তকরণ।