আমলারা সহযোগিতা না করলে সামনের দিনগুলোতে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে ‘নিয়মনীতির তোয়াক্কা’ করা হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
শনিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চট্টগ্রাম বিভাগ ও জেলার সরকারি দপ্তরগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
উপদেষ্টা বলেন, “একটা বিপ্লবের পর কোনো কিছুই কিন্তু আর সিস্টেম ওয়াইজ চলে না। আমরা সিস্টেমটাকে এখনও বজায় রেখেছি। আমরা প্রত্যাশা করি, আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন এটা বজায় রাখতে। কিন্তু যদি সিস্টেম ভাঙার প্রয়োজন পরে তাহলে আমরা সিস্টেম ভাঙব। প্র্রয়োজনে নতুন নিয়োগ দিয়ে আপনাদের জায়গাগুলোতে নতুন লোকদেরকে বসাব।
“কারণ আমরা দেখতেছি অনেক জায়গায়…। যেমন এখানে ট্রাক সেলের বিষয়টা সচিব সাহেব বললেন কিন্তু আমাদের সরকারি কর্মকর্তা তিন-চারজন কথা বললেন কিন্তু কেউই স্পেসিফিকলি কিছু বলতে পারলেন না। কিন্তু ছাত্র প্রতিনিধিদের থেকে একটা কথা বলা হল যে কালকের মধ্যে তারা সেটা শুরু করবে।”
তিনি বলেন, “তো এখানে এত এক্সপার্টিজ, পড়াশোনা, আপনাদের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা। এত কিছু থাকা স্বত্ত্বেও যদি আপনারা না করতে পারেন। তাহলে অবশ্যই নতুনদেরকে আমরা নিয়ে আসি। আপনাদেরকে রেখে আমরা কি করব?
“বুদ্ধিবৃত্তিক অনেক কথা মানুষ বোঝে না। যেটা বোঝে সেটা হল, আমি সকালে খাব কি, দুপুরে খাব কি, রাতে খাব কি? বা আমার সন্তান কি খাবে? যেগুলো একদম জনসম্পৃক্ত। জনগণের জীবনের সাথে সম্পৃক্ত সে বিষয়গুলোতে আমাদেরকে অবশ্যই কঠোর হতে হবে।”
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন, “দ্রব্যমূল্য নিয়ে আপনারা বলছেন যে, ভোক্তা অধিকারের আইন কঠোর না। কিন্তু আমাদের তো বিশেষ ক্ষমতা আইনে এরেস্ট করার প্রবিশন আছে। তাহলে সিন্ডিকেট যারা করছে, যারা সোর্স তাদেরকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে এরেস্ট করেন।
“আমরা অলরেডি বলছি। সেটার জন্য আপনাদের যতটুকু স্থানীয়ভাবে সহযোগিতা দেওয়া দরকার, ছাত্ররা আছে, রাজনৈতিক দলগুলো আছে। এ সরকারকে যারা সহযোগিতা করছে তারা দেবে। আর সরকারের দিক থেকে সর্বোচ্চ সদিচ্ছা আছে এই ব্যাকআপটা দেওয়ার।”
আগের মত কাজ না করে ‘জি হুজুর জি হুজুর’ করার দিন নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমলাদের বেঁচে থাকার জন্য এমন এমন নিয়মনীতি করা আছে যে, আপনাদের গায়ে আসলে হাত দেওয়া যায় না। আমরা কিন্তু ওইসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা করব না।
“নিয়মনীতি মেনে কিন্তু বাংলাদেশে অভ্যুত্থান হয় নাই। এবং সরকার পরিচালনাও সামনে আর নিয়মনীতি মেনে নেওয়া হবে না, যদি আপনারা সহযোগিতা না করেন।”
আগামী সময়ে সরকারের প্রত্যেকটা অঙ্গকে কার্যকর করার কথা তুলে ধরে আসিফ মাহমুদ বলেন, “আজকে এখানে দেখলাম ৪৮টা জায়গা থেকে প্রতিনিধিদেরকে আহ্বান করা হল। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল অন্তত ১০-১২ জনের মত প্রতিনিধি উপস্থিত নেই। যেখানে প্রতিনিধিত্ব প্রয়োজন সেখানে প্রতিনিধিত্ব না করলে আমরা অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনব।
“আজকে এই মিটিং এ যাদেরকে ডাকা হয়েছে কিন্তু উপস্থিত হন নাই, কেন হন নাই সেটার বিষয়ে প্রত্যেকটা দপ্তর থেকে জবাবদিহি চাওয়া হবে। জবাবদিহিতা না পাওয়া গেলে, সেক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে কয়েকটা দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কিন্তু আপনারা নিজেদের মধ্যে হয়ত বসেনইনি। জনগণের ভোগান্তি হয় এমন ইস্যুগুলোকে প্রায়োরেটি দিয়ে আমাদেরকে এড্রেস করতে হবে। কোনভাবেই জনভোগান্তি হতে দেওয়া যাবে না।
‘সিন্ডিকেট বাইপাস করতে প্রাইভেট সেক্টরকে লাগবে’
দ্রব্যমূল্যের ক্ষেত্রে দুইটা কাজ খুব স্পষ্টভাবে করার কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, “প্রশাসনের জায়গা থেকে প্রাথমিক প্রায়োরিটি দিয়ে সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। যত বড় ক্ষমতাশালীই হোক। বাংলাদেশে এখন বর্তমান পরিস্থিতিতে যাদের দিকে তাকানোর পর্যন্ত সাহস করা যেত না, এস আলমের মত প্রতিষ্ঠান তাদেরকেও কিন্তু ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।
“আপনারা স্থানীয় পর্যায়ে কেন তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারবেন না এমন কোন কারণ আমার কাছে অন্তত প্রতীয়মান হয় না।”
তিনি বলেন, “আরেকটা হচ্ছে বাইপাস দ্যা সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটকে বাইপাস করতে হবে এবং স্থায়ী সমাধান বের করতে হবে। এটা যেমন প্রশাসনের জায়গা থেকে সহযোগিতা করা হবে। কিন্তু এটা করতে হবে প্রাইভেট সেক্টর দিয়ে।”
সব খাতের উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সরকার সহযোগিতা করবে।
“যারাই দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অস্থিতিশীল করতে চায়, বিগত সময়ে অন্যায় কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিল, হামলা-হত্যার মত ঘটনার সাথে জড়িত ছিল তাদেরকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পাবলিক ইন্টেলিজেন্স কাজ করতে হবে।”
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, ডিসি ফরিদা খানম।