আরও ৫০ মডেল মসজিদ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

আরও ৫০ মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন। এসময় ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ৪টি নতুন উপজেলা যুক্ত হওয়ায় মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৮ সালের ২৬ জুন একনেক সভায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। প্রকল্পের দ্বিতীয় ও সর্বশেষ সংশোধিত প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা এবং প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর আর কোথাও সরকারি এত অর্থে একসঙ্গে এত মসজিদ করা হয়েছে কি না আমার জানা নেই। এটি ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলমানদের খেদমতে নিরলস কাজ করে গেলেও একটি পক্ষ তা দেখেও না দেখার ভান করে সরকারের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহর মেহেরবানিতে তাদের কোনো প্রচেষ্টা সফল হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না।

২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৮টি বিভাগের ৯টি স্থানে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২১ সালের ১০ জুন প্রথম পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। আজ দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হলো।

মডেল মসজিদ নির্মাণ করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। সার্বিক বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রতিটি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ৪৩ শতাংশ জমির ওপর তিন ক্যাটাগরিতে নির্মিত হচ্ছে। এর মধ্যে জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে চারতলা, উপজেলা পর্যায়ে তিনতলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।

এ-ক্যাটাগরিতে ৬৪টি জেলা শহর ও ৩টি সিটি করপোরেশনে ৫টিসহ মোট ৬৯টি চারতলা বিশিষ্ঠ মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে।

বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৯টি (নবগঠিত ৪টি উপজেলাসহ) এবং সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় চারতলা বিশিষ্ট (নিচতলা ফাঁকা থাকবে) ১৬টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে।

চারতলা বিশিষ্ট প্রতিটি মসজিদে একসঙ্গে এক হাজার ২০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। অন্যদিকে, তিনতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদগুলোয় একত্রে ৯০০ জন মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে।

মসজিদগুলোতে নারী ও পুরুষদের জন্য পৃথক অজু ও নামাজ কক্ষ, ইমাম প্রশিক্ষণকেন্দ্র, হেফজখানা, গণশিক্ষা কেন্দ্র, গবেষণাকেন্দ্র, পাঠাগার, মরদেহ গোসলের ব্যবস্থা, জানাজার ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন, লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, ই-কর্নার, বিদেশি পর্যটকদের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিনের থাকার ব্যবস্থাসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী জানান, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও নারীর প্রতি সহিংসতারোধ এবং সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, তৃণমূল পর্যন্ত ইসলাম ধর্মের সঠিক প্রচার-প্রসার, ধর্মীয় সভা-সেমিনার আয়োজন, হজযাত্রীদের প্রশিক্ষণ, হামদ-নাত-ক্বেরাত প্রতিযোগিতা তথা ইসলামিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা, ইসলামিক রিসার্চ, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ট্রেনিং, সামাজিক সমস্যা-বাল্যবিবাহ, যৌতুক ও মাদকসহ নানাবিধ সামাজিক সমস্যা সমাধানে আলেম ওলামাদের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে এ মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এরই মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। এ দেশের সর্বস্তরের আলেম-ওলামার কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও এ প্রকল্প বিশাল ভূমিকা রাখছে।

অনুষ্ঠানে রাজশাহী সিটি করপোরেশন মডেল মসজিদ, শরিয়তপুর জেলা সদর মডেল মসজিদ ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম মডেল মসজিদ প্রান্ত থেকে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।

যে ৫০ উপজেলায় মডেল মসজিদ উদ্বোধন

ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও নগরকান্দা, গাজীপুরের কাপাসিয়া, গোপালগঞ্জের সদর, কিশোরগঞ্জের সদর ও কটিয়াদী, মানিকগঞ্জের ঘিওর ও সাটুরিয়া, নরসিংদীর সদর ও মনোহরদী, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ, শরীয়তপুরের সদর ও ভেদরগঞ্জ, রাজশাহীর সিটি করপোরেশন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর, বগুড়ার ধুনট ও নন্দীগ্রাম, নওগাঁর নিয়ামতপুর, নাটোরের বড়াইগ্রাম, পাবনার ভাঙ্গুরা ও সুজানগন, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, রংপুরের গংগাচড়া ও কাউনিয়া, ঠাকুরগাঁওয়ের সদর, শেরপুরের সদর উপজেলায় মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হয়।

এছাড়া জামালপুরের সদর, বকশীগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ ও সরিষাবাড়ী মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন হয়েছে।

একই সঙ্গে ভোলার লালমোহন ও তজুমদ্দিন, পিরোজপুরের সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর ও কসবা, খাগড়াছড়ির সদর ও মানিকছড়ি, কুমিল্লার চান্দিনা ও চৌদ্দগ্রাম, খুলনার রূপসা, কুষ্টিয়ার খোকসা ও ভেড়ামারা, মেহেরপুরের সদর ও গাংনী, সাতক্ষীরার দেবহাটা, সিলেটের গোয়াইনঘাট, সুনামগঞ্জের সদর ও জগন্নাথপুর এবং হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় মডেল মসজিদ চালু হলো।