ইসরাইলের পণ্য লুন্ঠন নয়, বয়কট করুন

সময়ের কড়চা
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৩ সপ্তাহ আগে

বিশ্ব মানবতার সমস্ত ক্রাইটেরিয়াকে ভূলুন্ঠিত করে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী নারী-পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে মুসলমানদের উপর যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, বিশ্বের মানবতার ইতিহাসে তা বিরল ঘটনা।
এমন অন্যায়, এমন হত্যাযজ্ঞ, এমন নির্মম নির্যাতন বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে আর আছে কিনা, আমার কিংবা আমাদের জানা নেই। দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, বিশ্ব বিবেক আজ মৃত, জাতিসংঘ আজ অন্ধ। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমাদের মুসলিম বিশ্বের দেশগুলো আজ বধির হয়ে গেছে, কানা হয়ে গেছে তারা। যেন কিছু দেখতে পাচ্ছে না, কিছু শুনছে না। তারা এটা বুঝতে পারছে না যে, আমাদের তীর্থভূমি, যেখানে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজ করতে যাওয়ার সময় এখানে অবস্থিত আল আকসা মসজিদে নামায পড়েছিলেন। গোটা মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে, পূত-পবিত্র মক্কা-মদিনার পরই যেই ভূমির অবস্থান।
ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর সংস্থা ওআইসি আজ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। শুধুমাত্র আমেরিকার দাসত্বগিরি করার জন্য। আমেরিকা থেকে ভিক্ষাবৃত্তি পাওয়ার জন্য মুসলিম বিশ্ব বিশেষ করে আরব বিশে^র মুসলিম দেশ গুলো শেষ করে দিচ্ছে আমাদের তৃতীয় পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত আল-আকসা জামে মসজিদ। যে আল-আকসা মসজিদে নামাজ পড়ে আমাদের প্রিয় নবী মহান আল্লাহর দিদার পাওয়ার জন্য মেরাজে গিয়েছিলেন। আজ ফিলিস্তিনের রাফা শহরটি একেবারে বিলীন করে দিয়েছে। প্রায় ৫১ হাজারেরও বেশি মানুষের উপর ইসরাইল নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। যারা আহত হয়ে , পঙ্গু হয়ে বেঁচে আছেন তারাও খাবারের অভাবে মারা যাচ্ছেন।
একটি দখলদার বাহিনী নিরীহ মানুষের উপর এভাবে নির্মম হত্যাযজ্ঞ বছরের পর বছর ধরে চালালেও জাতিসংঘ নামের ঢাল নেই,তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারটি শুধু নিন্দা জানিয়েই তার দায়িত্ব শেষ করছে। মানবতার তথাকতিথ জয়ধ্বনি করা যুদ্ধবাজ, চরম ঘৃণিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে দানবের সর্দারের ভূমিকা নিয়েছে।
তৃতীয় বিশে^র একটি উন্নয়নশীল দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা আজ কি বা করতে পারি প্রিয় ফিলিস্তিনি ভাই বোনদের জন্য ? মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করা ছাড়া আর কি বা করার আছে আমাদের। দখলদার ইসরাইল বাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাই-বোনেরা আজ টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া পর্যন্ত গর্জে উঠেছে: নো ওয়ার্ক, নো স্কুল কর্মসূচিতে। কুমিল্লা জেলার সর্বস্তরের জনগণ আজ ইসরাইলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এর সাথে সাথে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে । যেমন ইসরাইলের পণ্য বিক্রি হয় এমন দোকানগুলোতে ভাঙচুর হয়েছে, লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। সত্যি কথা বলতে, এটা একটি নিন্দনীয় কাজ। এটা কোনোভাবেই প্রশংসনীয় নয়। যারা ইসরাইলের পণ্য বিক্রির দায়ে দোকানগুলোতে হামলা করেছেন, লুটপাট করেছেন, ভাঙচুর করেছেন , আমি তাদেরকে বলতে চাই, আপনারা কিন্তু ইসরাইলের মতোই দানবীয় কাজ করেছেন। এটা ইসলাম সমর্থন করে না। আপনারা যে দোকানগুলোতে হামলা করেছেন, সেই দোকানগুলো কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের মালিকানাধীন। যারা লুটপাট করেছেন, তারা হয় এই জিনিসগুলো নিয়ে ব্যবহার করবেন কিংবা বিক্রি করবেন। ভণ্ডামির একটা সীমা থাকা উচিত। ফিলিস্তিনিদের প্রতি আপনার যদি সত্যিকারের দরদ থাকে, সত্যিই যদি ইসলামের প্রতি আপনার মায়া থাকে,তাহলে আপনি এই অপরাধটি করতে পারতেন না।
আসুন, আমরা আজ থেকে ইসরাইলের পণ্য বয়কট করি। ভাঙচুর কিংবা লুটপাট নয়। আমরা তৃতীয় বিশ্বের এই জায়গায় বসে খুব বেশি কিছু করতে পারব না, কারণ আমাদের সেই সাহস নেই যে আমরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। আমি সবাইকে অনুরোধ করে বলব, আসুন, আমরা আজ থেকে ইসরাইলের পণ্য বয়কট করি। আমি আবারও বলছি, ইসরাইলের পণ্য যদি আপনারা লুটপাট করেন, ভাঙচুর করেন, তাহলে সেটা আমাদের সার্বিক অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলবে। এমনিতেই ৫ আগস্টের পর আমাদের বাংলাদেশ নানা সমস্যায় জর্জরিত। আমরা বাংলাদেশে আর কোনো সমস্যা চাই না।
যারা ইসরাইলকে ঘৃণা করতে চান আসুন, আমরা ইসরাইলি পণ্যের পরিবর্তে আমাদের দেশীয় পণ্যগুলো ব্যবহার করি।
ইসরাইলি প্রত্যেকটি পণ্যের বিকল্প হিসেবে আমাদের দেশীয় কিছু পণ্য রয়েছে। আপনারা কোকাকোলার পরিবর্তে মোজো ব্যবহার করতে পারেন।
তেমনিভাবে প্রত্যেকটি পণ্যের বিকল্প রয়েছে, আমরা সেগুলো ব্যবহার করি। এভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদেরকে ইসরাইলি পণ্যগুলো বয়কট করতে হবে। আমি আবার বলছি, ভাঙচুর করে কিংবা লুটপাট করে আপনি ইসরাইলের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবেন না।
আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, সত্যিকার অর্থে আপনি যদি ফিলিস্তিনকে ভালোবাসেন, আপনি যদি শান্তির ধর্ম ইসলামের পক্ষে থাকেন, আপনি যদি আল-আকসার পক্ষে থাকেন, তাহলে আপনি দোকানগুলো লুটপাট করবেন না, ভাঙচুর করবেন না। কারণ এই দোকানগুলোর মালিক আমাদের বাংলাদেশেরই নাগরিক। আমরা যদি সাধারণভাবে পণ্যগুলো বয়কট করি, তাহলে সেই দোকানদাররা স্বাভাবিকভাবেই সেই পণ্যগুলো আর দোকানে রাখবেন না। তখন ইসরাইলের উপর যখন সমষ্টিগতভাবে চাপ পড়বে। তখন তারা বুঝতে পারবে যে, গোটা বিশ্বের মুসলমানরা এক হয়ে তাদের পণ্যগুলো বয়কট করেছে।
আজ থেকে আমি কথা দিচ্ছি, আমি শাহাজাদা এমরান, ইসরাইলের পণ্য ব্যবহার করব না, বয়কট করলাম। আসুন, আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের পতাকার তলে সমবেত হই। আমাদের মা-বোনেরা, সন্তানেরা ফিলিস্তিনের মাটিতে যেভাবে নির্মমভাবে শহীদ হচ্ছে, আমাদের তো আর কোনো শক্তি নেই। আমরা এতটুকু করতে পারি, ইসরাইলের পণ্য বয়কট করতে পারি। সকল ধর্মের মানুষকে আমি অনুরোধ করব, আসুন, মানবতার খাতিরে আমরা ফিলিস্তিনের নাগরিকদের পাশে দাঁড়াই।
মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে হেদায়েত দান করুন, আমাদেরকে সুস্থ রাখুন। ফিলিস্তিনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদেরকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করুন। আর যারা সুস্থ রয়েছেন, তাদেরকে আল্লাহ তা’আলা রক্ষা করুন।