এক লব্জও মিথ্যা নয় —————মোহাম্মদ আইয়ুব

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

বিয়ে উপলক্ষে ১৫ দিনের ছুটির আবেদন করলাম। মঞ্জুর হলো ১০ দিন। তাও কম কিসের। বিয়ের দিন ধার্য করাই আছে। ১৬ মে ২০০৮, শুক্রবার। ১৩ তারিখ ডিউটি শেষ করে রাতে রওয়ানা করলাম। সকালে বাড়িতে পৌঁছালাম। কালকে একদিন পর পরশু বিয়ে। মাঝে একটি দিন। কী করব, কাকে কাকে দাওয়াত দেওয়া বাকি আছে, অনুষ্ঠান কিভাবে হবে, বর যাত্রীর জন্য গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে কি না, ডেকোরেশনের লোকজন ঠিক টাইমে কাজ শেষ করতে পারবে কি না, ভাবতে গিয়ে রীতিমত থমকে যাচ্ছি। কিন্তু না, আমার বুঝদার ও করিত- কর্মা ছোট ভাই সব অ্যারেঞ্জমেন্ট সঠিকভাবেই করে ফেলেছে। আমাকে সে যা বলল, তাতে আমি পুরোপুরি আশ্বস্ত। আমার কাজ কেবল বর সেজে গাড়িতে ওঠে বসা। ১৪ তারিখ সকাল থেকেই কাজ শুরু হয়ে গেছে। সে নিবিড়ভাবে তদারকি করছে দেখে আমি একদম নিশ্চিন্ত। আমার বন্ধুদের সাথেও কিছু পরামর্শ করতে ভুলছে না। ১৫ তারিখ রাতের মধ্যেই সব আয়োজন সুসম্পন্ন। ১৬ই মে বিয়ের কাজটি ভালই ভালই শেষ করলাম। বিয়ের ছুটি শেষে নববধূকে বাড়িতে রেখে কর্মস্থলে ফিরে এলাম। নতুন একজন মানুষ, নতুন জায়গায়, নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে পারছে কি না। কোন কিছুর প্রয়োজন হলে কাকে বলবে ইত্যাদি নানা ভাবনা মনের মধ্যে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে।
একদিন আমার সিনিয়র এস আই নীল রতন সাহা (৯৮ ব্যাচের ক্যাডেট) আমাকে বললেন, নতুন বউকে বাড়িতে রেখে এসে মনমরা হয়ে না থেকে ব্যাচেলর বাসাটি ছেড়ে দাও। একটি ফ্যামিলি বাসা ভাড়া নিয়ে ভাবীকে নিয়ে এসো। স্যার, কথাটি মন্দ বলেন নাই। থানা থেকে দুইশ গজ দূরে একটি ফ্যামিলি বাসা ভাড়া নিলাম। একমাস পর পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি গেলাম। দায়িত্বশীল বাবা- মাকে আমি বলার আগেই তাঁরা বলে দিলেন- বউমাকে নিয়ে থাকার মতো বাসা নাও। আমি বললাম- বাসা একটা ঠিক করেছি। দুই তলায়, তিন রুম আর ড্রয়িং-ডাইনিং। ভাড়া ৩০০০/- টাকা। থানার কাছেই। ছুটি শেষে নববধূকে সাথে করে নিয়ে আসলাম। সে চমৎকারভাবে বাসা গুছাইল। মেসে খাওয়ার বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেলাম। একদিন রাতে ডিউটি, একদিন দিনে। মাঝে মামলা তদন্তসহ অন্য কাজ। তাকে যে একটু সময় দিয়ে ঘুরতে বের হব, সেই ফুরসত নেই। আমি ডিউটিতে বের হলে সে রান্নাবান্না করে টিভি দেখে সময় কাটাত। এভাবে এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর একদিন তাকে বললাম, আগামীকাল ডিউটি নাই। বিকেলে শালবন বিহার, লালমাই পাহাড় আর ময়নামতি জাদুঘর দেখাতে নিয়ে যাব। বিকেল তিনটায় রেডি থেকো। শালবনবিহার, লালমাই পাহাড়, মময়নামতি জাদুঘর নামগুলি সে পাঠ্যবইয়ের পাতায় পড়েছে। স্বচক্ষে দেখার কথা শুনে উচ্ছসিত হলো। জানতে চাইল- এগুলি কত দূরে? – এইতো এখান থেকে ৮/১০ মিনিটের রাস্তা। আমার থানা এলাকার মধ্যেই। নিকটে এতো ঐতিহ্যময় স্থান থাকতে এতোদিন দেখাতে নিয়ে গেলে না। কাজের চাপ থাকায় বলিনি। কালকে সব দেখাব।
লক্ষ্য করলাম, সে আনন্দে উদবেলিত। মোবাইলে বান্ধবীদের বলতে শুনলাম, জানো ক্লাস ফাইভ – সিক্সের সমাজ বইতে যে পড়ছিলে লালমাই পাহাড়, শালবন বিহার, শালগাছ, ময়নামতি জাদুঘর এইগুলি তোমার দুলাভাইয়ের থানা এলাকায়। কালকে দেখতে যাব। ইস! তোমারা থাকলে আরো মজা হতো ——–। পরের দিন দুপুর ২.১৫ ঘটিকার সময় ফোন করে বললাম, তুমি রেডি হও। আমি আসতেছি। লাঞ্চ করে বের হব। বাসায় এসে একসাথে লাঞ্চ করলাম। সে তৈরি হলো। রেশমি সুতার স্টাইলিশ ডিজাইনের একটি মাননসই ত্রিপিস পড়ে, ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসেছে । মনে হচ্ছে, বউ নয় যেন কোন স্কুলে পড়ুয়া মেয়ে। আমি বললাম, শাড়ি পড়তে, ওখানে সবাই আমাকে চিনে। লোকজন ভাববে, দারোগা সাহেব স্কুলের ছাত্রী একটা নিয়ে ঘুরতেছে। সে বলল- ভাবলে ভাবুক। তুমি পরদার (পরস্ত্রী) নিয়ে যাচ্ছ না- কি? তার ড্রেসের সাথে ম্যাচ করা একসেট কাপড় বের করে দিয়ে বলল- এগুলি পড়ো।
আমি কাপড় গুলি নিয়ে পড়ব এমন সময় ওসি সাহেবের ফোন। বললেন- “শ্রীমন্তপুর (ছদ্মনাম) গ্রামে একটি মেয়ে বিষ পান করে মারা গেছে, দ্রুত গিয়ে ব্যবস্থা নাও”। ঘড়ির দিকে তাকালাম ৩.১০ বাজে। শ্রীমন্তপুর যাওয়া-আসা ১৫ মিনিট, সুরতহাল প্রস্তুতে ৪৫-৫০ মিনিট। লাশ মর্গে পাঠিয়ে সাড়ে চারটার দিকে বের হতে পারব। তার দেওয়া কাপড় বিছানায় রেখে, ইউনিফর্ম পড়তে পড়তে বললাম- একটি জরুরি কাজে যেতে হচ্ছে এক ঘন্টা পরে বের হব। তুমি রেডি হয়ে টিভি দেখ, আমি আসছি। আমি থানা থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ফোর্স সহ রওনা করলাম।
মেয়ের বাবা একটি কীটনাশকের খালি বোতল দেখিয়ে বললেন- মেয়ের পরীক্ষার জন্য আমি তিন মাস আগে দেশে আসছি। আজকে রেজাল্ট দিছে, পাস না করায় এই বোতলের বিষ খেয়ে রুমে পড়েছিল। আমি বিদেশ থাকি, মেয়ের মা তার পড়া-লেখার কোনো খবর রাখে নাই। রুমে প্রবেশ করে বমি সহ অন্যান্য আলামত দেখে মনে হলো বিষপান জনিত।
মেয়ের মা কাঁদতে-কাঁদতে বললেন- মেয়ে ফেল করেছে, কী হয়েছে। কত ছেল-মেয়ে ফেল করে। তাকে বকা দেওয়া ঠিক হয় নাই। -কে বকা দিছে? আমিও দিছি, ওর বাপও দিছে। আমি কোন মন্তব্য না করে, নিয়মানুসারে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে লাশ মর্গে পাঠাবো এমন সময় মৃতার বাবা- মা, দাদা-দাদী, আত্মীয়-স্বজন কান্নাকাটি করে লাশ নিতে দিবে না। আমি বহুভাবে আইনের ব্যাখ্যা দিলাম। কিন্তু না। কোনোভাবেই রাজি হয় না। মেয়ের বাপ-মা লাশ আগলে ধরে বিলাপ করে বলে- আমার মেয়েকে কাটাকাটি করার আগে আমাদের মেরে ফেলুন। স্থানীয় মেম্বারসহ বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে চেয়ারম্যান সাহেবকে খবর দিলাম। তিনি এসেও সাধ্যমতো চেষ্টা করলেন। কোন লাভ হলো না। ইত্যবসরে হাজার খানেক গ্রামবাসী এই বাড়িতে জড়ো হয়েছে। এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা। এইরূপ মানবিক বিষয়ে বল প্রয়োগ করাও সম্ভব নয়। একপ্রকার নিরুপায় হয়ে- বলপ্রয়োগ ছাড়া এখান থেকে লাশ নিয়ে আসা সম্ভব নয়, মোবাইলে ওসি সাহেবকে জানালাম। ওসি সাহেব জবাবে বললেন- ধৈর্য ধর, আমি আরোও লোক পাঠাচ্ছি।
ঘন্টা খানেক পর এস আই নীল রতন সাহা অতিরিক্ত ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে আসলেন। আমার নিকট একান্তে বিস্তারিত শুনে বলেন- এখনই বাপ- মা পরস্পরকে দায়ী করছে, কয়দিন পর বলবে খুন করছে! পিএম করতেই হবে। তখন তিনি হ্যান্ড মাইকটি নিয়ে জড়ো হওয়া গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে ময়না তদন্তের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে পাঁচ মিনিট বক্তব্য দিলেন। সকলে নীরবে শুনলেন। বক্তব্য শেষে উপস্থিত লোকজন হৃষ্টচিত্তে লাশ নেওয়ার বন্দোবস্ত করলেন।
লাশ মর্গে পাঠিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালাম রাত ১১টা বাজে। ক্লান্ত- শ্রান্ত দেহে বিমর্ষ হয়ে থানায় বসে আবুল-তাবুল ভাবছি। কেন বললাম ঘুরতে বের হব। না বললেই ঠিক ছিল, এখন গিয়ে কী জবাব দিব—ইত্যাদি। রতন স্যার দেখে- এইটুকুতে হাঁপায় উঠছ। চাকরি মাত্র শুরু। আরো কত কিছু মোকাবেলা করতে হবে। এখানেতো তোমার লাঠিচার্জও করতে হয় নাই। আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। তখন সজল নয়নে ঘুরতে বের হওয়ার কাহিনী বললাম।
রতন স্যার শুনে স্বাভাবিকভাবে বললেন- ওহ, এই কথা। আজকে যেতে পারনি আরেক দিন যাবে। বাসায় যাও, ভাবিকে বুঝিয়ে বলো। মনে মনে বলি, একেবারে জাত পুলশ। বাসায় গেলাম। তার চেহারার দিকে না তাকিয়ে বললাম, সরি। -একজন মানুষকে ৮/৯ ঘন্টা বসিয়ে রখে সরি বলেই শেষ। কী করব বলো, আজকে মেট্রিক পরীক্ষার রেজাল্ট আউট হবে, এক মেয়ে ফেল করবে। সে বিষ পানে মরবে আর আমাকে সুরতহাল করতে হবে পূর্ব থেকে জানা ছিল না। তার সুরতহাল করতে গিয়ে আমার চেহারার কী সুরত হয়েছে দেখ। -হয়েছে, আর ব্যাখ্যা দিতে হবে না। ইউনিফর্ম খুলে ফ্রেশ হয়ে এসো।
তিন দিন পর রতন স্যার বললেন- আজ বিকেলে ভাবিকে নিয়ে বের হবা। আমিও তোমার বউদিসহ বের হব। শালবন যাব। আমি বললাম- আমি জীবনেও একথা বলতে পারব না। একবার বলে আমার চরম শিক্ষা হয়েছে। -সমস্যা নাই। ওসি স্যার কে বলেছি। আজকে তোমাকে আর আমাকে বিকেলে খুঁজবে না। বিকেলে মোটরসাইকেলে করে বের হলাম। রতন স্যারও মোটরসাইকেলে বউদিকে নিয়ে বের হয়েছেন। কোটবাড়ি দিয়ে ঢুকে বার্ড (বার্ড, বাংলাদেশ একাডেমি ফর রুরাল ডেভেলপমন্টে) হয়ে শালবন বিহারে গেলাম। একে একে ময়নামতি জাদুঘর, শালবাগান দেখে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলাম। আমার মোটরসাইকেল আগে রতন স্যারেরটি পিছনে। মাঠের কোনায় দাঁড়ানো তিন যুবক আমাদের উদ্দেশে শিস দিয়ে একটি নোংরা শব্দ উচ্চারণ করল। আমি বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে বাইক চালাচ্ছি। রতন স্যার আমাকে ক্রস করে থামার জন্য বললেন। দুইজনই বাইক থামালাম। বউদিকে বললেন- ভাবিকে নিয়ে এখানে দাঁড়াও। আমাকে বলেন, তুমি আস। স্যারের সাথে গেলাম। ঐ বকাটেদের দুইজনকে ধরলেন, সাথে সাথে অপর জনকে আমি ধরলাম। কোমর থেকে ওয়ার্লেস বের করে কোটবাড়ি ফাঁড়ির আইসিকে ডেকে এদের নিয়ে যাও। পিসি, পিআর যাচাই করো,পরে ওসি স্যারের সাথে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
হাঁটতে হাঁটতে স্যার আমাকে বললেন- প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। আমরা এই থানার দারোগা, আমাদের টিটকারি মারে, এদের সাইজ না করলে সাহস বেড়ে যাবে। ভবিষ্যতে দেশ-বিদেশের পর্যটক আর এখানে বেড়াতে আসবে না। বাইকের নিকট আসতেই বউদি বললেন- বউ নিয়ে বড়াতে এসেও আসামি ধরতে হয়? স্যার উত্তর দিলেন- কবরস্থান কিংবা শ্মশান, মজলিস কিংবা জলসায় পুলিশ সবসময় পুলিশ। সন্ধ্যা অবধি বেড়ানোর পর বাসায় ফেরার পথে স্যার বললেন জাস্ট রাত আটটায় বাংলা রেস্তোরাঁয় আসবে। ওখানে ডিনার করব। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে কুমিল্লা শহরে অবস্থিত বাংলা রেস্তোরাঁর উদ্দেশে রওনা করলাম। বাংলা রেস্তোরাঁটির মালিক তৎকালীন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর।
আমি সস্ত্রীক বাংলা রেস্তোরাঁর দ্বিতীয় তলায় উঠতেই এএসপি সার্কেল, আকবর আলী মুন্সী স্যার(বর্তমানে – পুলিশ সুপার, পাবনা জেলা) আমার নববিবাহিতা স্ত্রীকে ফুলেরতোড়া দিয়ে বরণ করে নেন। ভিতরে ঢুকে দেখি ওসি স্যার সহ ষোলো জন পিএসআই। সেই পিএসআই’রা বর্তমানে বিভিন্ন থানার ওসি হিসেবে কর্মরত। এই আয়োজনটি রতন স্যার আমার জন্য সারপ্রাইজড্ হিসেবে করেছেন যাতে আমি সেই দিনের কষ্ট ভুলে যাই।
দুই মাস পর রতন স্যার বদলি হয়ে জঅই এ যোগদান করেন।ঢাকা হেড অফিসের সামনে রাস্তা পারাপারের সময় দুর্ঘটনার শিকার হন। পাঁচ দিন আইসিইউ থাকার পর তিনি এই সুন্দর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে যান।
আমি তার এই আকাল মৃত্য সংবাদ শোনে হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। ফোনে এসপি স্যারের অনুমতি নিয়ে মুন্সগঞ্জ রওনা করলাম। তার বাড়িতে শোকের ছায়া। শেষ কৃত্যানুষ্টানের প্রস্তুতি চলছে। রতন স্যারের বাবা পুত্রশোকে মুহ্যমান। বউদি পাঁচ দিন ধরে বাকরুদ্ধ। আমাকে দেখে চিৎকার দিয়ে বললেন,” র-ত-ন দেখ আইয়ুব ভাই এসেছেন” বলেই বাঁধ ভাঙ্গা কান্না শুরু করেন। তাকে শান্তনা দেওয়ার কোন ভাষা আমার জানা ছিল না।
স্যারের বাবা অশ্রুসিক্ত নয়নে আমাকে বলেন, “বাড়িসহ এই ভিটা ছেলে -মেয়েদের মানুষ করতে গিয়ে এক মুসলিম জমিদারের নিকট বিক্রি করে দিয়েছিলাম। রতন পড়াশুনা শেষ করে চাকরি পাওয়ার পর ঐ জমিদারের নিকট থেকে ভিটা- বাড়ি পুনরায় ক্রয় করে। আমি তার নামে নিতে বলেছিলাম। কিন্তু সে আমার নামেই কবলা করে। রতন স্যারের বাবা পুত্র শোক সহ্য করতে না পেরে এক মাসের মাথায় মৃত্যুবরণ করেন। দুই বছর পর –
আমি ঢাকা যাত্রাবাড়ী থানায় কর্মরত ছিলাম। একদিন আমার স্ত্রী বলল, চলো রতন দাদার বউকে দেখতে যাই। বাবুকে নিয়ে মগবাড়ি এক বাসায় থাকে।আমার সাথে নিয়মিত কথা হয়।” আমি এক বাক্যে রাজি হলাম। ঐদিন বিকেলই গেলাম। কুশল বিনিময়ের পর কথা প্রসঙ্গে বউদি বললেন- চাকরির ১০ বৎসর পূর্তির পুর্বে মৃত্যুবরণ করায় রতন পেনশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।ডিপার্টমেন্ট থেকে এক কালীন পাঁচ লক্ষ টাকা পেয়েছিলাম। সে টাকা আমার ছোট ভাইয়ের ব্যবসায় বিনিয়োগ করি। মাসে ছয় হাজার টাকা লাভ পাই। দুই হাজার টাকা ভাড়ায় এই ঝুপড়ি ঘরে থাকি, বাকি চার হাজার টাকা দিয়ে মা- ছেলে কোন রকমে জীবন- যাপন করি।” বিয়ের সময় ১২ ভরি স্বর্ণ উপহার হিসেবে পেয়েছিলাম যা আমার শাশুড়ির নিকট জমা ছিল। পরবর্তীতে তিনি সেগুলি আমার ননদকে দিয়ে দিছেন। আমি বউদির চোখের দিকে তাকিয়ে অপলকে শোনে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তখন বউদি বললেন- ভাই, এক লব্জও মিথ্যা নয়। আজ পুলিশ মেমোরিয়াল ডে। আমি প্রিয় রতন স্যারের আত্মার শান্তি কামনা করি।
লেখক-
নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক,
সদর দক্ষিণ সার্কেল অফিস, কুমিল্লা।