কনকনে শীত, নওগাঁয় লেপ-তোষক তৈরির ধুম

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁয় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। কয়েকদিন ধরে জেলায় মৃদু শৈতপ্রবাহ বইছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মিলছে না সূর্যের দেখা। দুপুরের দিকে সূর্য উঠলেও কোনো তীব্রতা থাকে না। সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশার সঙ্গে বইছে হালকা বাতাস। রাতের গভীরতার সঙ্গে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। কয়েকদিন সর্বনিম্ন ৯ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে জেলার বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কেন্দ্র।

এদিকে শীত নিবারণের জন্য সবাই ভিড় করছে লেপ-তোষকের দোকানে। এতে করে ব্যস্ত সময় পাড় করছে কারিগররা। এবার গত বছরের তুলনায় লেপ তৈরির উপকরণ কাপড় ও তুলার দাম কিছুটা বেড়েছে। এতে দোকানির সঙ্গে ক্রেতাদের বাড়তি কথা বলতে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়- শহরের তুলাপট্টির ক্রিসেন্ট মার্কেট ভবনের চতুর্থ তলায় ধুপ-ধাপ শব্দ। এ শব্দ তুলাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে জট ছাড়ানোর। তারপর তুলাকে কাপড়ে ভরে সুই-সুতা দিয়ে সেলাই। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে তাদের কর্মযজ্ঞ। প্রতিদিনই তৈরি হয় শতাধিক লেপ-তোষক। এ বছর শীত আসতে দেরি হওয়ায় কারিগরদের ব্যস্ততা কম ছিল। তবে গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শীত বাড়ায় ব্যস্ততাও বেড়েছে কারিগরদের।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাপাস তুলা ১৭০ টাকা কেজি, যা গত বছর ছিল ১৪০ টাকা। রুলের তুলা ১০ টাকা বেড়ে এবছর বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, কালার তুলা ৫ টাকা বেড়ে ৪০ টাকা, কালো তুলা ৭টাকা বেড়ে ২৫ টাকা এবং ফাইবার তুলা ২০ টাকা ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শিমুল তুলার দাম। গত বছর ৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এবছর তা ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ক্রেতাদের কাছে স্বল্প দামের তুলার চাহিদা রয়েছে।

এছাড়া, লেপ তৈরির লাল রঙের শালুকা কাপড় ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা গজ, মারকিন ৬০ টাকা গজ ও পাট্টা কাপড় ৪০-৪৮ টাকা গজ। প্রতি গজ কাপড়ে এ বছর বেড়েছে ১০-১৫ টাকা।

সদর উপজেলার খিদিরপুর গ্রামের রেজাউল ইসলাম বলেন, গত বছর তুলা কিনে লেপ তৈরিতে খরচ পড়েছিল এক হাজার ৫০০ টাকা। এবছর সেই পরিমাণ তুলা দিয়ে লেপ তৈরিতে খরচ পড়েছে এক হাজার ৮৫০ টাকা। কাপড় ও তুলার দাম বেড়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছে নিম্নবিত্তরা।

কারিগর লিটন হোসেন বলেন, শীত বাড়লে আমাদের কাজের চাপও বাড়ে। এখন ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। তবে এ ব্যস্ততা সারাবছর থাকে না। শীতের কয়েক মাস কাজ বেশি হওয়ায় আয়ও বেশি হয়। দিনে ৫০০-৬০০ টাকা হচ্ছে। বছরের অন্য মৌসুমে ১৫০-২০০ টাকা হয়। এ সময়টা অনেকে অন্য পেশায় চলে যায়।

নওগাঁ বেডিং কারিগর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ বলেন, জেলায় প্রায় ২০০ জন কারিগর রয়েছে। শীত মৌসুমে প্রতিদিন জনপ্রতি প্রায় ৫০০ টাকা মজুরি হিসেবে লক্ষাধিক কাটা আয় হয়। শীতের তিনমাস (ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) কারিগরদের কাজ থাকলেও বাকি সময় কাজের পরিমাণ কমে যাওয়ায় তাদের ভিন্ন পেশায় রোজগার করতে হয়।

তিনি আরও বলেন, প্রতি তিন বছর পর পর সমিতির নির্বাচন করে মজুরি নির্ধারণ করা হয়। শ্রমিকরা উপার্জন করছেন আগের মতো। তবে পূর্বের মজুরি থাকলেও বর্তমান বাজারে সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সংসার সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাদের। বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে মজুরি বাড়ানো হবে।

নওগাঁ তুলাপট্টি ব্যবসায়িক মালিক সমিতির সভাপতি আবিদুর রেজা উজ্জল বলেন, শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কাপড় ও তুলার দাম। একই সঙ্গে বেড়েছে লেপ-তোষকের চাহিদা। তবে দামের কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষরা।