কলেজ শিক্ষকদের মিটিংয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের হানা, আসলেন না এমপি

কুমিল্লা-৪ দেবিদ্বার
জাহিদ হাসান নাইম
প্রকাশ: ৪ মাস আগে

কুমিল্লায় কলেজ শিক্ষকদের নিয়ে মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়। এই শিক্ষকরা আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ওই মিটিংয়ে উপস্থিত থাকার কথা ছিল কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রাজী মোহাম্মদ ফখরুকের। কিন্তু সেখানে আচমকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত উপস্থিত হলে মিটিং অনুষ্ঠিত হতে পারেনি।

রোববার (২৪ ডিসেম্বর) কুমিল্লা নগরীর অভিজাত হোটেলে মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়।

সরজমিন দেখা যায়, কলেজ শিক্ষকদের নিয়ে হোটেলের চার তলায় ‘দেবিদ্বার উপজেলা কলেজ শিক্ষক সমিতি কর্তৃক বর্ষসমাপনী মিলনমেলার’ ব্যানারে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যে অনুষ্ঠানে শুধু সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুকের আশীর্বাদপুষ্ট কলেজ শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। যারা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে থাকবেন। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট চলে আসায় সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল আসেননি। ম্যাজিস্ট্রেট আসার খবরে বাইরে ছুটে আসেন দেবিদ্বার আলহাজ্ব জোবায়দা খাতুন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রভাষক নূর মোহাম্মদ বাবু। আয়োজকদের মধ্যে তিনিও একজন। তিনি প্রথমে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরে তিনি জানান, তিনি দেবিদ্বার উপজেলার কলেজ শিক্ষক সমিতির নেতা। কথা বলার একপর্যায়ে তিনি নিজের রাজনৈতিক দলের পরিচয়ও দেন। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতির কারণে অনুষ্ঠান আর শুরু হয়নি। পরে একজন, দুজন করে সবাই অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।

ওই মিলনমেলায় উপস্থিত শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকজন নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘আমাদের অনেকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের জন্য তালিকাভুক্ত আছি। এখানে শুধু এমপির কাছের শিক্ষকদের দাওয়াত করা হয়েছে। এমপি মহোদয়ের আসার কথা ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে আয়োজকরা দুঃখ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, এমপি মহোদয় (রাজী মোহাম্মদ ফখরুল) এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারছেন না।’

অনুষ্ঠানের আয়োজক এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল সমর্থিত নেতা কুমিল্লা উত্তর জেলা সৈনিক লীগের আহ্বায়ক ও দেবিদ্বার আলহাজ্ব জোবায়দা খাতুন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রভাষক নূর মোহাম্মদ বাবু বলেন, ‘আমরা কলেজ শিক্ষকদের অনুষ্ঠান করছি। এখানে কোনো রাজনৈতিক বিষয় নেই।’

রাজনৈতিক বিষয় না হলে উপজেলার সকল কলেজের শিক্ষকদের কেন আনা হলো না— এমন প্রশ্নের তিনি উত্তর না দিয়ে তাড়া আছে বলে চলে যান।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার অতীশ সরকার বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে আসার পর আয়োজকরা জানিয়েছেন, এটি শিক্ষক সমিতির প্রোগ্রাম। কিন্তু আমরা শিক্ষকদের তালিকা চেয়েছি। যদি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী ঈগল প্রতীকের মো. আবুল কালাম আজাদ। এ ছাড়া এই আসনে নির্বাচনের মাঠে আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ ইউসুফ, তৃণমূল বিএনপি থেকে মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন থেকে আজহারুল করিম মুন্সী, বিএসপি থেকে মো. শফিউল বাদশা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি থেকে ইকরাম হোসেন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ থেকে শিমুল হোসেন ও ইসলামী ঐক্যজোট থেকে রফিকুল্লাহ সাদী।